Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ সোমবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

বান্দরবানে পাহাড়ে পাহাড়ে জুমচাষের বাম্পার ফলন

সোহেল কান্তি নাথ, বান্দরবান প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:১৯ AM
আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:১৯ AM

bdmorning Image Preview


বান্দরবানে পাহাড়ের পরিবেশ ও পরিস্থিতি অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকায় এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে পাহাড়ে পাহাড়ে জুমচাষ হয়েছে। এবারে জুমক্ষেতে ফলনও হয়েছে বেশি। জুমচাষীদের মতে জুমে ধানসহ রকমারী ফসল ফলেছে আশানুরুপ এবার।

জানা গেছে, জলার সর্বত্রই জুমধান কাটারধূম পড়েছে। জুমচাষীরা চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকেই ধানকাটতে শুরু করেছেন। বহু পাড়ায় জুমের নতুন ধানের ভাতও খাচ্ছেন অনানুষ্ঠানিক ভাবে। জেলার ৭টি উপজেলার দুর্গম এলাকায় বসবাসরত এবং জুমচাষের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। জমচাষীরা এখন মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন, তাদের আবাদকৃত জুমক্ষেত থেকে জুমের ধানকাটার কাজে। প্রকৃতির আশীর্বাদে এবারে পাহাড়ের জুমক্ষেত সমূহে বাম্পার ফলন হয়েছে ধানের। তাই জুমচাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে, নেই কোন হতাশা বা ক্লান্তির চিহ্ন।

পার্বত্য জেলার থানচি, রুমা, রোয়াংছড়ি, লামা, আলীকদম, নাইক্ষংছড়ি এবং বান্দরবান সদর উপজেলার নানাস্থানে পাহাড়সমুহের জায়গায় জাগায় পাকা জুমক্ষেত হলুদবর্ণে ছেয়ে গেছে। সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে-ভাঁজে পাকাধানের ঘ্রাণে এখন পরিপূর্ণ দৃশ্য বিরাজ করছে।

জেলার দুর্গম এলাকায় বসবাসরকারী ম্রো, ত্রিপুরা, খুমি, বম, চাক, মার্মা, খিয়াংসহ ১১টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রতিবছরই তাদের নির্ধারণকরা পাহাড়ি ভুমিতে জুমচাষ করে থাকেন। বিগত কয়েকবছর বন্য-ইঁদুর আর বন্যশুকুরের তান্ডবে জুমক্ষেত থেকে পাকা ধানসহ কৃষিপণ্য উত্তোলন করার ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে বিঘ্নতা দেখা দিলেও এবারে বাম্পার ফলন হয়েছে জুমচাষে। জেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দুরে থানছি উপজেলার কয়েকটি জুমচাষ এলাকা থেকে পাওয়া তথ্য মতে সেখানে জুমচাষীরা জুমধান কাটতে শুরু করেছেন। এবারে জুমক্ষেতে ফলন বেশি হওয়ায় খুশি জুমচাষীরা।

থানচি এলাকার জুমচাষী মংচিং মার্মা, সুনীতা ত্রিপুরা, মেনরুই ম্রো এবং সাক্য চাকমা বলেন, তাদের জুমক্ষেতে ধান পাকতে শুরু করেছে এবং তারা এসব পাকাধানও কাটতে নেমেছেন মাঠে।

জুমচাষীরা জানিয়েছেন, সাধারণত পাহাড়ের জুমক্ষেত থেকে পাকাধান কাটার ভরামৌসুম হচ্ছে অক্টোবর ও নভেম্বর মাস। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই পাহাড়ের সর্বত্রই নবান্ন বা জুমের নতুন ধানের ভাত খেয়ে নিজস্ব ধরনের স্বকীয়তায় প্রথাগত উৎসবে মেতে পড়েন জুমচাষী পরিবার গুলো। তবে যেসব এলাকায় আগাম পাকা ধান সংগ্রহ করা হয় জুম থেকে, সেসব এলাকায় নবান্ন উৎসবও হয় আগে। তবে এবার সেপ্টেম্বর মাস থেকেই জুমক্ষেত থেকে পাকাধান কাটার উৎসব শুরু হয়ে গেছে বলেও পাহাড়ি এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং সমাজনেতারা জানিয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসেব মতে চলতি মৌসুমে জেলার ৭টি উপজেলায় প্রায় ৩৫ হাজার একরের পাহাড়ি জমিতে বিক্ষিপ্ত ভাবে জুমচাষ হয়েছে। জুমক্ষেত থেকে পাকা ধান কাটার পর পরবর্তী প্রায় দুই মাস ধরে ভুট্টা, মারফা, চিনার, তিল, মিষ্টি কুমড়া, ধানিয়া মরিচ ও কুমড়া উত্তোলন বা সংগ্রহ কাজ চলে। এসব কৃষিপণ্য ঘরে মজুদ রেখে জুমচাষীদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য কোন কারণে জুমচাষে ক্ষতিগ্রস্ত হলে জুমচাষী পরিবারগুলোর জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রেও চরম সংকট দেখা দেয়। তখন তারা পড়েন চরম আর্থিক সংখটে।

Bootstrap Image Preview