ঝালকাঠির দক্ষিণ জনপদ বঙ্গোপসাগর থেকে শত কিলোমিটার নিকটবর্তী বিশখালি নদীর চরে প্রকৃতির নৈসর্গ সাজিয়েছে ছইলার চর। পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও রয়েছে নানা সঙ্কট। তবু সেই সঙ্কট উপেক্ষা করেই প্রকৃতির নয়নাভিরাম এই ছইলার চর পর্যটকের মিলন মেলায় পরিণত হচ্ছে।
জেলার কাঠালিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হেতালবুনিয়া মৌজায় বিশখালি নদীতে ৪১ একর জমি নিয়ে জেগে উঠেছে এক বিশাল চর। যেখানে রয়েছে লক্ষাধিক ছইলা গাছ। আর ছইলা গাছের নাম থেকেই জেগে ওঠা এ নদী চরের নামকরণ করা হয়েছে ছইলার চর।
জোয়ারের পানিতে পুরো চর ডুবে যায়। ভাটায় নেমে যায় পানি। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মত লাখ ছইলা গাছে বেঁধেছে পাখিরা নীড়। শালিক, ডাহুক আর বকের সারি। ছইলা ছাড়াও এখানে কেয়া, হোগল, রানা, এলি, মাদার, আরগুজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছে ঘেরা। পাখির কিচিরমিচির ডাক শোনা যায় সব সময়।
কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকন্দ মোহম্মদ ফয়সাল উদ্দিন বলেন, ২০১৫ সালে ছইলারচর স্থানটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানে পর্যটকদের জন্য শৌচাগার, বিশুদ্ধ পানির জন্য একটি গভীর নলকূপ এবং ছোট্ট পরিসরে একটি পাকা খোলা কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে।
কাঠালিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল আলম বলেন, পর্যটন কেন্দ্র ছইলারচরটি অপার সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে।
প্রতি বছর শীতের সময় পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত থাকে এ স্থানটি। দূরদূরান্ত থেকে এ মৌসুমে এখানে ৩ থেকে ৪টি করে পিকনিকের দল আসে। কিন্তু এখানে আসার সরাসরি কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও তৈরি হয় নি। ট্রলার বা নৌকা ছাড়া এখানে আসার উপায় নেই। তৈরি করা হয় নি ঘাট। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ স্থানটি দক্ষিণাঞ্চলে মধ্যে অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান হতে পারে বলে মনে করছেন সাংবাদিক মাসউদুল আলম।
সম্প্রতি এ ছইলা চরে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে পিকনিকে আসা শিক্ষক নুরে-ই-আলম ছিদ্দিকী বলেন, হৈ হুল্লা ও নাচ গানে বনভোজনের প্রকৃত সাধ পেলাম এখানে। এত মনোরম পরিবেশে পর্যটনের জন্য এর চেয়ে আর ভাল স্থান হয় না। কিন্তু এই পর্যটন কেন্দ্রটি নিয়ে মাথা ব্যথা নেই সরকারি বা বেসরকারি কোন সংস্থার। নদী থেকে উঠা নামার সিড়ি কিংবা ঘাট, বিদ্যুৎ, টলঘর, রেষ্ট হাউজ, দোকানপাট এবং সড়ক যোগাযোগ সুগম করলে এটি পর্যটন আয়ের উৎস হতে পারে বলে মনে করেন ওই শিক্ষক।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, ছইলার চরটি পর্যটন সম্ভাবনার হাতছানি। এখানে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তৈরি করতে ইতোমধ্যেই পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে আবেদন জানানো হয়েছে।