Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৩ শুক্রবার, সেপ্টেম্বার ২০২৪ | ২৮ ভাদ্র ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এক শরতের সন্ধ্যায় তিতাসের বুকে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৫:১২ PM
আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:২০ PM

bdmorning Image Preview


ঘাট থেকে নৌকা ছাড়তে ছাড়তে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। নৌকা মূল নদীতে আসার আগেই নৌকার ছইয়ের ওপর যেয়ে বসি। কিছু সময় বসে থাকার পর আকাশের দিকে চেয়ে শুয়ে পড়ি আমি আর শামীম। শুয়ে শুয়ে শরতের আকাশ দেখছি। তৌহিদ আমাদের পাশে বসে আছে। একটু দূরে আরো দু’জন মানুষ, দু’দিক মুখ করে বসে আছে। ছইয়ের শেষের দিকে নৌকার মাঝি হাল ধরে আছে। ছইয়ের নিচে আরো কিছু অচেনা মানুষ মিনিট চল্লিশের এই তিতাস ভ্রমণের সঙ্গী হয়েছে। চুপচাপ বসে আছে সবাই। গন্তব্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর শহর থেকে শিবপুর বাজর।

এই শহরের একপাশে বিস্তৃত তিতাসের অথৈ পানি। শহরের কোন কোন ভবনের শেষ অংশ পানির নিচে তলিয়ে আছে। শহরের এক প্রান্ত থেকে রাস্তা বের হয়ে তিতাসের মাঝ দিয়ে যেয়ে মিশেছে শিবপুর বাজারে। পানি পারাপারের জন্য মাঝে মাঝে ব্রিজ। অথই পানির মধ্যে মাথা বের করে গাছশূণ্য রাস্তা বয়ে গেছে। ধুঁলা উড়িয়ে একটা দু’টা মোটরবাইক যাওয়া আসা করছে।

গোধূলি সন্ধ্যায় তিতাশ চিরে নৌকা ছুটে চলছে সামনের দিকে। তিতাস পাড়ের এ অংশে তেমন কাশফুল চোখে পড়েনি, কাশফুল থেকে আখের মিষ্টি গন্ধও ভেসে আসছে না। থাকলে ভালো হত। তবে আবহমানকালের মত শরতের খণ্ড খণ্ড মেঘ সন্ধ্যা আকাশের নীলিমা রেখা অতিক্রম করে ভেসে যাচ্ছে দূরে, বহুদূরে। সন্ধ্যা পেরিয়ে হাজার বছরের আদিরাত নামে তিতাসে। মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে রাতের চাঁদ, তারপরও চাঁদের হালকা আলো মেঘের নিচ থেকে এসে নদীতে পরেছে। চাঁদকে ঢেকে রাখা মেঘ খণ্ডের আশপাশের খানিকটা জুড়ে উজ্জল হয়ে আছে। উন্মুক্ত আকাশের দিকে তাকালে বোঝা যায়, এই উজ্জল অংশে চাঁদ লুকিয়ে আছে। লুকিয়ে আছে বললে ভুল হবে, চাঁদকে আড়াল করে রাখা হয়েছে। এই আয়েশি রাতে চাঁদের ওপর থেকে একটু একটু করে মেঘ চলে যায়।

কোথাও একটা দুইটা পাখি নদী দিয়ে উড়াউড়ি করছে। মেঘের আড়াল থেকে চাঁদের ফিনিক পরিমান অংশ বের হয়, বের হওয়া অংশ নদীর পানিতে প্রতিফলিত হচ্ছে। আনাড়ি প্রেমের প্রথম সাক্ষাতের মত, দু’জনের চোখে চোখ পড়ালে যেমন রোমাঞ্চকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়, লজ্জায় মুখ লাল হয়। তেমনি নদীর পানিতে চাঁদের আলো পড়ার সাথে সাথে জানান দিলো, তাদের দেখা হয়েছে। তিতাস শিউরে ওঠে লজ্জায়। চারিদিকে বিস্তৃত জলরাশির মধ্যে দ্বিপের মত একটা দু’টো বাড়ি ভাসমান দাঁড়িয়ে আছে। পানির নিচে আরেকটা বাড়ি। অবিকল উপরের বাড়ির মত, উপরের বাড়িতে যেখানে আলো জ্বলছে নিচের বাড়িতেও একই জায়গা আলো জ্বলছে, যেখানে গাছ, যেখানে ঘর ঠিক সেইখানে গাছ, ঘর দেখা যায়।

ঘোমটা দিয়ে বসে থাকা নববধূর মাথা থেকে একটু একটু করে শাড়ীর আঁচল সরে যাওয়ার মত ধীরে ধীরে মেঘ সরে যায়, এবার সম্পূর্ণ চাঁদটা বের হয়ে নদীতে পড়েছে। চকচক করা কাশার থালার মত পূর্ণিমার চাঁদ। নৌকার গতির সাথে তাল মিলিয়ে সেও চলছে আমাদের সাথে। পানিতে হালকা ঢেউয়ের কারণে আকাশে থাকা চাঁদের মত নদীর চাঁদটা স্থির না, খণ্ড খণ্ড আর আকাঁ-বাঁকা হয়ে বেশ খানিকটা জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

অন্ধকার নামার সাথে সাথে ফেলে আসা জরাজীর্ণ্ নবীনগর শহর নিয়ন আলোয় আলোকিত হয়। দোকান, বাসাবাড়ি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বাতি জ্বলছে। পানির নিচে অবিকল আরেকটা নবীনগর শহর। দূরের বাড়িতে বাতি জ্বলছে। কোথাও কোথাও মাঝধারা নৌকাতে বাতি জ্বলছে। পানিতে সেই আলো প্রতিফলিত হচ্ছে। ঢেউয়ের সাথে সেই আলো ছড়িয়ে পড়ছে।

মূল নদী থেকে নৌকা ছোট খালে প্রবেশ করে। খালের একপাশে রাস্তা অন্যপাশে বাড়ি। খালের উপর দিয়ে বাশেঁর সাঁকো, খালপাড়ের বাড়িগুলোর সাথে রাস্তার সংযোগ সৃষ্টি করেছে। কোন কোন সাঁকোতে দাঁড়িয়ে আছে ছোট ছোট বাঁচ্চারা। ঘাটে ছোট ছোট ডিঙি নৌকা বাধা। কোথাও কোথাও জাল ফেলে মাছ ধরছে জেলেরা। ঝোপঝাড়ে অসংখ্য জোনাকি, মিটমিট করে জ্বলছে। নৌকা ঘাটে এসে থামে, নৌকা থেকে নেমে গন্তব্যে হাঁটা দেয়। তিতাশের বুকে পরে থাকে একা পূর্ণিমার চাঁদ।

Bootstrap Image Preview