আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে মধ্যপ্রাচ্যের দরিদ্রতম দেশ ইয়েমেন। প্রায় চার বছর ধরে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে এখানকার অসহায় জনগণ। ডায়রিয়া, কলেরাসহ নানা ধরনের মহামারীতে মরছে হাজার হাজার মানুষ। খাদ্য নেই, পানি নেই অভাবে বেঁচে থাকতে লতাপাতা সিদ্ধ করে খাচ্ছেন দেশটির মানুষ।
২০১৫ সালের মার্চ থেকে প্রেসিডেন্ট আব্দে মানসুর হাদি সরকারের পক্ষে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে সৌদি জোট। বর্তমান পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করেছে যে, অপুষ্টির কারণে প্রতি ১০ মিনিটে মারা যাচ্ছে একটি শিশু। দেশটির যুদ্ধকালীন সংকট এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, বাবা-ছেলে কারো পেটে ভাত না থাকলেও অস্ত্র আছে সবারই হাতে।
বলা যায়, ইয়েমেনে এখন সবার হাতে অস্ত্র। হাতে কিছু টাকা এলেই খাবার কেনার আগে তারা অস্ত্র কেনে। এসব অস্ত্রের ব্যবহারও হচ্ছে যথেচ্ছা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্রসফায়ারের মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে সরকারি বাহিনী। দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। কাঁধে অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় ইয়েমেনিদের।
শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত একই দৃশ্য। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে সাধারণ নাগরিকদের হাতে অস্ত্র দেখা যায় না। ইয়ামেনে অস্ত্র কেনা-বেচার জন্য আছে শত শত বাজার। আলু-পটলের মতোই বিক্রি হচ্ছে নানা ধরনের অস্ত্র।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক একটি অস্ত্র গবেষণা সংস্থা ‘দ্য স্মল আর্মস সার্ভ’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ব্যক্তিগত অস্ত্র রাখার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ইয়েমেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০০ জন মার্কিনির রয়েছে ১২০টি আগ্নেয়াস্ত্র। আর প্রতি ১০০ ইয়েমেনি ব্যবহার করে ৫২টি অস্ত্র। অর্থাৎ প্রতি দু’জনের একজনের হাতেই অস্ত্র রয়েছে।
জরিপ মতে, বিশ্বে ১০০ কোটি অস্ত্রের ৮৫ কোটিই রয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম দেখা যায় দক্ষিণ উপকূলীয় প্রদেশ হাজরামাউতের রাজধানী শহর মুকালাতে। এখানে কেবল সেনাবাহিনীর হাতেই অস্ত্র দেখা যায়। বেসামরিক নাগরিকদের জন্য এখানে অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে কেউ শহরটিতে ঢুকতে চাইলে রাস্তায় বসানো নিরাপত্তা চৌকিতে সেনাদের কাছে অস্ত্র জমা দিতে হয়। হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় একটা রশিদ। শহর থেকে বের হওয়ার সময় রশিদ জমা দিলেই অস্ত্র ফিরিয়ে দেয়া হয়।
তবে বাজেয়াপ্ত করা হয় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ অস্ত্র। এ ভাবে মুকালার আল-সলব তল্লাশি চৌকিতে বাজেয়াপ্ত অস্ত্রের পাহাড় জমে গেছে। এ অস্ত্র দিয়ে আলাদা একটা বাহিনী গড়ার জন্য যথেষ্ট। মুকালার এক বাসিন্দা জানান, ‘অন্যান্য শহরে অস্ত্র বহন করাকেই পৌরুষ মনে করে বহু মানুষ।’ হুথি বিদ্রোহীদের সাথে সাথে অস্ত্রধারী নাগরিকদের মোকাবেলায় কঠোর অভিযান শুরু করেছে সরকারি বাহিনী। সরকারি বাহিনীর সহযোগিতায় নির্বিচার বিমান হামলা চালাচ্ছে সৌদি জোট। এখানে ক্রসফায়ারের মতো ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়তো। এতে বিদ্রোহী ও সরকারি উভয় বাহিনীর বিরুদ্ধেই মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ।