সাত বছরের গৃহযুদ্ধের পূর্ণ সমাপ্তি নিশ্চিত করার আগেই স্থানীয় নির্বাচন করছে সিরিয়ার সরকার। গতকাল রবিবার দেশটিতে স্থানীয় প্রশাসন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে নির্বাচন হয়েছে শুধু সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোয়। বিশ্লেষকদের অভিমত, এভাবে নির্বাচন করে সরকার বোঝাতে চাচ্ছে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।
দেশজুড়ে স্থানীয় প্রশাসনিক পরিষদের ১৮ হাজার ৪৭৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৪০ হাজারের বেশি প্রার্থী। তাঁদের বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন বাথ পার্টি অথবা এর সঙ্গে সম্পর্কিত দল থেকে আসা প্রার্থী।
স্থানীয় সময় গতকাল সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। রাজধানী দামেস্কসহ সরকার নিয়ন্ত্রিত তারতুস ও লাতাকিয়ার নির্বাচনী চিত্র তুলে ধরে সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম। ইসলামিক স্টেটকে (আইসে) পুরোপুরি হটিয়ে গত বছর নিয়ন্ত্রণে নেওয়া দেইর এজ্জোরের নির্বাচনী সংবাদও ছিল প্রচারের তালিকায়। কিন্তু সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা এলাকাগুলোয় ভোট নেওয়া হচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গতকাল ভোটকেন্দ্রে আগত ভোটারের সংখ্যা বিগত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে আসা ভোটারের চেয়ে কম। এদিকে আলজাজিরা জানিয়েছে, বেশির ভাগ নির্বাচনী প্রার্থী ক্ষমতাসীন বার্থ পার্টি ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত দলগুলো থেকে আসায় অনেকে ভোট দিতে যায়নি।
রাজধানী মাজ্জেহ এলাকার বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী হুমাম বলেন, ‘ভোট কিসের জন্য? কোনো কিছু কি বদলাবে?’ ভোটদানে বিরত থাকা এ যুবক আরো বলেন, ‘সবাই জানে, একটা নির্দিষ্ট দলের জন্য ভোটের ফলাফল আগে থেকে ঠিক করে রাখা আছে। ওই দলের সদস্যদের এমন একটা প্রক্রিয়ায় জেতানো হবে, সেটাকে নির্বাচন বলা যায় না, বরং সেটা অনেকটা নিয়োগ দেওয়ার মতো।’
গৃহযুদ্ধের কারণে যারা এখন অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও শরণার্থী, আইন অনুযায়ী তারা ভোট দিতে পারবে না। ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি কম হওয়ার এটাও একটা কারণ বলে মনে করেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের গবেষক মাজেন গারিবাহ।
জনগণের একাংশের অসন্তোষের মধ্যে শুধু সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোয় ভোট নেওয়ার পেছনে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের কী উদ্দেশ্য রয়েছে, তা নিয়েও কথা বলেন গারিবাহ। তাঁর মতে, ‘নির্বাচনটা হলো সিরিয়ার সরকারের ঐক্যবদ্ধ প্রচারণার অংশ। সরকার দেখাতে চায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে, জনমনে স্বস্তি ফিরছে, দামেস্কভিত্তিক সরকারের কার্যক্রম অব্যাহত আছে এবং অভ্যন্তরীণ অবস্থা আরো ভালো হচ্ছে।’
নির্বাচন করার আরেকটি কারণ সম্পর্কে গারিবাহর অভিমত, পূর্ব ঘুতা, আলেপ্পো, দেরা ও হোমসে সামরিক অভিযানে সাফল্য লাভ করার পর এখন সরকারের লক্ষ্য সেখানে নিজেদের উপস্থিতি বাড়ানো এবং স্থানীয় প্রশাসনে নিজেদের লোক বসানো।