এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কা বনাম বাংলাদেশ ম্যাচে তিনি খেলেছেন ৪টি বল, রান করেছেন ২। কিন্তু তাতেই ক্রিকেট রোমান্টিকদের মন জিতে নিয়েছেন বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল। ক্রিকেট তো আর শুকনো ব্যাট-বলের খেলা নয়। ক্রিকেট তার থেকে অনেক বেশি কিছু। আর এই বেশি কিছুটাই আরও একবার দুবাইয়ের মাঠে দেখিয়ে দিয়ে তামিম।
ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই লাকমলের একটি বল পুল করতে গিয়ে কব্জিতে চোট পান তামিম। তখনকার মতো ক্রিজ ছাড়তে বাধ্য হন। তার আগেই বাংলাদেশের ২টি উইকেট পড়ে গিয়েছিল মাত্র ১ রানে। তামিম যখন মাঠ ছাড়ছেন ড্রেসিংরুমের বারান্দায় গোটা বাংলাদেশ দলকে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল।
স্টেডিয়াম থেকেই তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায় তাঁর কব্জির হাড় ভেঙেই গিয়েছে। ফলে টুর্নামেন্টেই তিনি আর খেলতে পারবেন না। হাতে তখনকার মতো ব্যান্ডেজ বেঁধে ড্রেসিং রুমে ফিরে এসেছিলেন তামিম। কমপক্ষে ৬ সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে।
বাংলাদেশের ইনিংসের ৪৬.৫ ওভারে তাদের ১০ নম্বর ব্যাট মুস্তাফিজুর রান আউট হন। তখন তাদের স্কোর ২২৯-৯। ভাঙা হাত নিয়ে তামিম ইকবালের মাঠে নামতে পারবেন না। তাই ওখানেই ইনিংসের সমাপ্তি ধরে নিয়েছিলেন সবাই। কিন্তু সবাইকে বিস্মিত করে ক্রিজে নামেন তামিম। একহাতেই স্টান্স নেন তিনি। এমনকী ক্রিজে থাকা ব্যাটসম্যান মুস্তাফিকুরও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। ৪৬ তম ওভারের শেষ বলটি তামিম একহাতেই ঠেকিয়ে দেন।
দলের স্বার্থে তাঁর এই যন্ত্রণা অস্বীকার করাকে যোগ্য সম্মান জানান মুস্তাফিকুর। শেষ তিন ওভার তিনি একদিকে তামিমকে আড়াল করেছেন, অন্যদিকে বেধারক প্রহার করেছেন শ্রীলঙ্কান বোলারদের। ওই তিন ওভারে তিনি আরও ৩২ রান যোগ করেন। ২২৯ থেকে বাংলাদেশের রান পৌঁছায় ২৬১তে।
ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন মুশফিক। পুরষ্কার নিতে এসে তিনি জানিয়েছেন ওই সময় তামিমকে ব্যাট হাতে নামতে দেখে তিনি মনে মনে ঠিক করেন তামিমের জন্য ও দেশের জন্য তাঁকে কিছু করতেই হবে। দলের জন্য, দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকারের যে অনন্য নজির এশিয়া কাপ ২০১৮'র প্রথম ম্যাচে রেখে গেলেন তামিম, তার প্রভাব গোটা টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলে দেখা গেলে আশ্চর্যের কিছু নেই। তাঁর খেলা ওই একটি বল নিঃসন্দেহে বহু প্রজন্ম ধরে ক্রিকেট রোমান্টিকদের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠবে।
ম্যাচ শেষে তাই পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে তামিম বন্দনা ঝরল অধিনায়ক মাশরাফির কণ্ঠে, ‘আমি শুধু ওকে নিয়ে একটা কথাই বলতে পারি, মানুষের ওকে সব সময় মনে রাখা উচিত।’