যশোরের চৌগাছায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের-২ এর আওতায় নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের হতদরিদ্র হাসিনা বেগমের নির্মিত বাড়ি ভেঙে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আক্ষেপ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের বাড়ি ওরা কেড়ে নিল। আল্লাহ যেন ওদের বিচার করে।
ভুক্তভোগী হাসিনা বেগমের স্বামী নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর (বাদেখানপুর) গ্রামের শওকত আলীর অভিযোগ, গত কোরবানির ঈদের পর (আগস্টের শেষের দিকে) আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন তার বাড়ি ভেঙে নিয়েছেন ইউএনও।
জানা যায়, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ‘যার জমি আছে ঘর নাই’ তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ উপ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৫৫১টি ঘর নির্মাণ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে যশোরের জেলা প্রশাসক আনুষ্ঠানিকভাবে ফুলসারা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে সুবিধাভোগীদের মধ্যে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেছেন।
নারায়ণপুর ইউনিয়নে ৩৪ জন ব্যক্তি ঘর পেয়েছেন। ৩৪ জনের একজন ছিলেন ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের মৃত আনছার আলীর ছেলে ভ্যানচালক হতদরিদ্র শওকত আলী। তার নামেও একটি বাড়ি বরাদ্দ হয়। সে অনুযায়ী, বাড়ি নির্মাণের জন্য সকল প্রকার মালামাল নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয় সরকারি বাড়ি নির্মাণের কাজ।
ঘরের ভিত নির্মাণসহ অনেক কাজই শেষ এমন মূহুর্তে সংশ্লিষ্ট ইউপি মেম্বর বাবুল আক্তার ওই বাড়িতে গিয়ে বলেন, বাড়ি নির্মাণ বন্ধ। আপনাকে বাড়ি দেওয়া যাবে না উপরের নিষেধ আছে। এই বলে তিনি মিস্ত্রিদের দিয়ে নির্মাণাধীন বাড়ি ভেঙ্গে নিয়ে যান।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নিয়ে যাওয়ার পর দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে চার সদস্যের পরিবার জরাজীর্ণ একটি ঘরে থাকেন। শওকত আলীর স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমার চাচাতো বোনের ছেলে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান হাবিব তৌহিদ আমাদের একটি বাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সে মোতাবেক পরে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্রয়ণ-২ শ্রকল্পে ‘যার জমি আছে, ঘর নাই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ উপ-প্রকল্পের আওতায় একটি বাড়ি বরাদ্দ দেন আমার স্বামী শওকত আলীর নামে।’
তিনি বলেন, ‘গত রোজার ঈদের দুদিন পর বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়। এর কিছুদিন পর আমার ভাইপো নূর নবীর পাঁচ শতক জমি কিনতে চায় তৌহিদ। সে দাম বলেছিল ১৫ হাজার টাকা শতক। কিন্তু ১৭ হাজার টাকা শতকে অন্য ভাইপোরা ওই জমি কিনে নেয়। তৌহিদ সন্দেহ করে, আমি নিষেধ করায় তাকে জমি দেয়নি ভাইপোরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সে বলে, তোমার বাড়ি দেওয়া হবে না। ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’
হাসিনা বেগম বলেন, ‘এর পর গত কোরবানির ঈদের ৩-৪ দিন পর মিস্ত্রি পাঠিয়ে বলা হয়, ইউএনও স্যার বাড়ি করতে নিষেধ করেছে। মিস্ত্রিরা এসে বাড়ি ভেঙে নিয়ে যায়। আল্লাহ ওর (তৌহিদ) ক্ষমতা দিয়েছে, আমার সঙ্গে ক্ষমতা দেখিয়েছে।’
এব্যাপারে জানতে চাইলে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইবাদত হোসেন বলেন, ঘর কেন ভেঙে নেওয়া হয়েছে তা চেয়ারম্যান-মেম্বাররা বলতে পারবে। তিনি বলেন, ‘আমি কারও দ্বারা প্রভাবিত হইনি। ওই বাড়িটি উদ্বোধন করেছিলাম কিনা মনে নেই।’
বাড়ি ভেঙে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান হাবিব তৌহিদ বলেন, ‘এটা কীভাবে সম্ভব! আমার কথায় কি বাড়ি বরাদ্দ হয়? আমার কথায় যদি বাড়ি বরাদ্দ হয়, তাহলে তো চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে নামতে হবে। আমি কিছুই জানি না। আর চৌগাছা ইউএনওর সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথাও হয়নি।’
তিনি দাবি করেন, শওকত আলীর ২০ শতকের বেশি জমি আছে বলে জানি। তাহলে তো তার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার কথা নয়। তবে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শওকত আলীর নামে ১২ শতক ও তার স্ত্রীর নামে ৩ শতক মোট ১৫ শতক জমি রয়েছে।
এসব বিষয়ে ইউপি মেম্বার বাবুল আক্তার বলেন, শওকত আলীর বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। পরে সেটি ভেঙে নেওয়া হয়েছে। তবে কী কারণে, কার নির্দেশে ভেঙে নেওয়া হয়েছে জানি না। ইউএনও স্যার ভালো বলতে পারবেন।