টাইগার দলের ছয়/ সাত নম্বরের ব্যাটিং নিয়ে ভুগান্তি নতুন কিছু নয়।দীর্ঘ দিন ধরেই এই যন্ত্রনায় ভুগছে বিসিবি। কিন্তু ঠিক ঠাক কাউকে খুজে পাচ্ছে না। অবশেষে গত বিপিএলে খুলনা টাইটানসের হয়ে নজরকাড়া পারফম্যান্সে করা আরিফুল হকের দেখা পায়। ঠিক যেই পজিশনটার জন্য টিম টাইগাররা ভুগছে আরিফুল যেন সেটার জন্যই একদম পারফেক্ট। ব্যাটিংয়ে অসাধারন স্কিল ও বোলিং নৈপুন্যতা সব সামর্থ্য আছে এই ডান হাতি অলরাউন্ডারের।
ইতোমধ্যে জতীয় দলের হয়ে খেলেছে বেশ কয়েকটি ম্যাচ তবে নিজেজেকে এখনো সেই ভাবে মেলে ধরতে পারেননি। তবে তাকে নিয়ে বেশ আশাবাদী নির্বাচকরা। তাইতো যে কোন সিরিজে নির্বাচকদের পছন্দের তালিকায় থাকেন আরিফুল। সবার চাওয়া জাতীয় দলের আশার আলো হয়ে ফুটবেন আরিফুল। সেই আশায় আসন্ন এশিয়া কাপেও দলে রাখা হয়েছে এই অলরাউন্ডারকে। দুবাই যাওয়ার আগে নিজের বর্তমান অবস্থা ও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলেন বিডিমর্নিংয়ের সাথে সাক্ষাৎকারে ছিলেন শোভন শাহা।
প্রশ্ন: এশিয়া কাপের প্রস্তুতি
উত্তর- আমরা টানা বেশি কিছুদিন ধরে প্যাকট্রিসের মধ্যে আছি। এই সময় আমাদের দূর্বল জায়গা গুলো নিয়ে কাজ করেছেন হেড কোচ স্টিভ রোডস ও ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি। তারা দুজনেই অনেক জেন্টলম্যান। তাই তাদের সাথে কাজ কারটাও অনেক সহজ হয়েছে।
অনুশীলনে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আমার কয়েকটা ম্যাচ সিচুয়েশন খেলা হয়েছে। যেখানে প্রতি ওভারে আমাদের নিদিষ্ট টার্গেট বেঁধে দেওয়া হতো। সে অনুযায়ী আমরা রান তোলার চেষ্টা করতাম। এতে আমাদের হার্ড হিটিংয়ের প্যাকট্রিস হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে আমাদের প্রস্তুতি পর্ব বেশ ভালোই হয়েছে।
প্রশ্ন: কোচ নিকট পাওয়া পরামর্শ
উত্তর- তিনি বলেছেন, তোমার হার্ড হিটিংয়ের এ্যাবিলিটি আছে।এর সাথে তুমি যদি সিঙ্গেল রোটেট করে খেলতে পারো, তাহলে তোমার জন্য অনেক ভালো হবে। তাহলে তোমার স্কোর গুলো বড় হবে। একই সাথে প্রথম দিকে মাথা ঠান্ডা করে বল দেখে ব্যাট চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এখন দুবাই যাওয়ার পর সেখানে টিম প্লান অনুসারে ম্যাচে কনট্রিবিউট করতে চেষ্টা করব আমি।
ছবি তুলেছেন: দীপন চন্দ্র
প্রশ্ন: ৭ নম্বরে ব্যাটিং
উত্তর- এই জায়গাটায় খুব বেশি ব্যাটিং করার সৃযোগ থাকে না সব সময়।এখানে ব্যাটিংটা নির্ভর করে টিমের সিচুয়েশন অনুযায়ী।এখানে লক্ষ্য থাকে ম্যাচের ফিনিশিংটা কিভাবে করা। তাই আমি এখানে টিমের পরিকল্পনা অনুসারে ব্যাটিং করব। প্রয়োজন হলে সিঙ্গেল রোটেট করে খেলব। নতুবা বড় শর্ট খেলার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: অল্প সময়ে ম্যাকেঞ্জির কাছে কতটা শিখলেন ?
উত্তর- শারীরিক কাঠামোর জন্য শেষ দশ ওভারে আমাদের ১০০/১২০ রান তোলা সম্ভব হয় না। যেটা অন্যান্য দেশের ক্রিকেটাররা সহজেই তুলতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা বড় শর্ট খেলতে গেলে কোথায় কি করা লাগে সেগুলো নিয়ে আমি তার কাজ করেছি। তবে বেশি ছক্কা মারার মানসিকতা থেকে বের হয়ে গ্যাপ শর্ট বেশি খেলার পরামর্শ দিয়েছেন
প্রশ্ন: নির্বাচকরা এই দলটাকেই লম্বা সময় বাজিয়ে দেখার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আপনি অনেক গুলো ম্যাচ পেতে পারেন। সেদিক থেকে আপনার পরিকল্পনা কি ?
উত্তর- সকলেরই স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলের খেলার। সেই সুযোগ আসলে আমাদের চেষ্টা থাকে দলকে নিজের সামর্থের দুইশো শতাংশ দেওয়ার। তবে অমাদের চিন্তা ভাবনা এখন শুধু এশিয়া কাপ নিয়ে। এই আসরটাতে ভালো করতে পারলে সুযোগ আসবেই্। আর এই আসর দিয়েই আমরা আমদের ২০১৯ বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা শুরু করতে যাচ্ছি। কারণ এর পরেই চলতি বছর আরো দুটো সিরিজ পাবো দেশের মাটিতে। এই সিরিজ গুলোতে যদি ধারবাহিক পারফর্ম করতে পারি তাহলে বিশ্বকাপে দলে জায়গা পাওয়াটা সহজ হবে যাবে। আর দেখতে গেলে বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাকাপোক্ত করতে সামনের সিরিজ গুলো নিজেকে প্রস্তুত করার সুযোগ ও বটে।
ছবি তুলেছেন: দীপন চন্দ্র
প্রশ্ন: অল রাউন্ড পারফর্ম
উত্তর- আমি এ পর্যন্ত ছযটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছি। যার একটিতে ২ ওভার বল করার সুযোগ পেয়েছি। তবে ওয়ানডে ফরম্যাট পার্ট টাইমার বোলার হিসেব বল করার সুযোগ আসার সম্ভাবানা বেশি। যেহেতু আরব আমিরাত ও বাংলাদেশের পিচের মধ্যে খুব বেশি একটা তফাৎ নেই। তাই বল করার সুযোগ আসলে সেটা উপভোগ করব। কারন দীর্ঘদিন ধরে আমি ঘরোয়া লিগ খেলছি, তাই ভিন্ন পরিস্থিতিতে বল করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
প্রশ্ন: হার্ড হিটিং এর ঘাটতি কেন
উত্তর- আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এমন একটা প্লাটফর্ম আপনি যেখানে দূর্বল প্রতিপক্ষ সেখানেই আপনাকে বার বার আক্রমণ করবে । এখানে খুব কমই বাজে বল পাবেন যেটি সুযোগ নিতে পারবেন আপনি। কিন্তু আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট যেটার ব্যাতিক্রম দেখা যায়।
এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বেশির ভাগ বোলারই ১৪০/১৪৫ গতিতে বল করে। আর আমাদের মধ্যে তেমন কেউ এভাবে এক নাগাড়ে বল করতে পারে না। এই তফাৎটাই আমাদের ক্রিকেটে ভোগায় । কিন্তু আমার এই জায়গাটা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের ব্যাটিং কোচ এটা নিয়ে কাজ করছেন।
প্রশ্ন: চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বাংলাদেশের সুযোগ কি?
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই আমরা লড়াই করবো। তবে এখন যদি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা ভাবি তাহলে বুঝতে হবে একটা পাহাড় মাথায় নিয়ে যাচ্ছি । আপনি যদি ম্যাচ বাই ম্যাচ চিন্তা করেন তাহলে আপনার কাছে কাজটা সহজ হবে। আমাদের প্রথম লক্ষ প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে হারানো। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আমরা কি করব সেই প্লান নিয়েই ভাবছি। যদি আমরা শ্রীলঙ্কা সঙ্গে সফল হই তাহলে আমাদের পরের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। তাদের সঙ্গে আমার আলাদা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবো। এভাবেই আমার ম্যাচ বাই ম্যাচ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাবো