Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিন্ন কৌশল

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৫৫ PM
আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:০২ PM

bdmorning Image Preview


সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থানের এক বছর পার হয়ে গেলেও এই সমস্যার কোন সমাধান দিতে পারছে না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অভিন্ন কৌশল।

আজ মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকায় বেলা ১১টায় জাতিসঙ্ঘ শিশু তহবিল এবং প্রথম আলোর যৌথ উদ্যোগে প্রথম আলোর নিজস্ব কার্যালয়ে “রোহিঙ্গা সমস্যার এক বছর” শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।

বৈঠকে ইউনিসেফের চিফ অফ কমিউনিকেশন জন জ্যাক সিমনসহ আরও ১১ জন দেশ বরেণ্য আলোচক উপস্থিত ছিলেন। আলোচনার মাধ্যমে সামনে উঠে আসে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য সমাধান সমূহও। মূলত তাদের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল নারী এবং শিশু। এক্ষেত্রে আসন্ন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন নিয়ে বেশ আশাবাদী আলোচকেরা। সংঘাত নয়, আলোচনার মাধ্যমে টেকসই এবং উপকূল সমাধানে আসতে চান তারা।

রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের যেমন আন্তর্জাতিক সুশীল সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে, তেমনি দেশিয় গণমাধ্যমেও তৎপরতা বাড়াতে হবে। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের জন্য সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হল যে, জাতিসংঘ তাঁদের সাথে হওয়া নির্যাতন এবং গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক দায় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন যে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়াটি অনেক দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে তবে এটিকে দুঃস্বপ্ন বানিয়ে ফেলা যাবে না।

অনুষ্ঠানের প্রথম বক্তা, জন জ্যাক সিমন, ইউনিসেফের পরবর্তী দুটি পদক্ষেপ সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। তাদের মতে এই সমস্যার সমাধান একটাই, রোহিঙ্গাদের সুরক্ষিতভাবে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর যতদিন সেটা করা যাচ্ছে না ততদিন বাংলাদেশে অবস্থিত শরণার্থীদের সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি মানবাধিকার নিশ্চিত করা। এর জন্য দরকার অনেক আর্থিক সহায়তা। ইউনিসেফের প্রস্তাবিত প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ৯৫০ মিলিয়ন টাকা কিন্তু পাওয়া গেছে শুধু এর এক তৃতীয়াংশ আর্থিক সহায়তা। ধরে নেয়া হচ্ছে সহায়তার হার এবং আগ্রহ আরও কমবে।

এছাড়াও আলোচকরা তুলে ধরেন যে, কীভাবে গণমাধ্যমের নেতিবাচক ব্যবহার করে মিয়ানমার তাদের দেশের ভেতর ব্যাপারটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে সামরিক এবং জুডিশিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। দেশিয় হাইকমিশনের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ যেমন চায়না এবং রাশিয়ার উপর কূটনৈতিক চাপ তৈরি করে, ট্র্যাক টু ডিপ্লোম্যাসি প্রয়োগ কোরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবগত করা সম্ভব।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও ফোকাল পয়েন্ট অফিসার, মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে প্রায় ১০ লক্ষ শিশু উখিরার ক্যাম্পে অবস্থান করছে এবং এর সংখ্যা আরও বেড়েই যাচ্ছে। কিন্তু ক্যাম্প এর আয়তন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এই অবস্থায় তাদের এবং আশেপাশের মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তারা ইতিমধ্যে ফস্টার কেয়ার এবং ইউনিসেফ এর সহায়তায় ৯০০০ এতিম শিশুর পুনর্বাসন নিশ্চিত করেছেন।

তার মতে, বৈদেশিক ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে আরও অনেক শিশুকে সুশিক্ষা দিয়ে দক্ষ শ্রমিকে পরিণত করে তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব। এই সকল শিশুর শিক্ষার ক্ষেত্রে ঠিক কোন চুক্তি প্রয়োগ করা হবে এবং রোহিঙ্গারা সেটা কটটুকু মেনে নেবে সেই ব্যাপারে সন্দিহান আলোচকরা।

সেভ দ্য চিলড্রেন এর পরিচালক রিফাত বিন সাত্তার জানান যে, রোহিঙ্গাদের জন্য তাদের ভাষায় একটি পাঠ্যক্রম তৈরি করেছে তারা কিন্তু এটি কোন দীর্ঘমেয়াদী ফলপ্রসূ সমাধান নয় বলে মনে করছেন সকলে।

এছাড়াও তাদের মানসিক অবস্থার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি বলে দাবি করেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পরিচালক নাজমূল আজম খান। একথা চিন্তা করেই সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ ক্যাম্পের ভেতরে একটি চাইল্ড ফ্রেন্ডলি স্পেস তৈরি করেছে যার মাধ্যমে শিশুরা তাদের মানসিক আঘাত এবং দৈহিক অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

এদিকে, তাদের অনেকেই ভাবছেন যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের দায়ভার কেবল বাংলাদেশের একার না। পৃথিবীর সকলের দায়িত্বজ্ঞান তৈরি করতে হবে। সম্ভব হলে তৃতীয় দেশিয় সহায়তা নিতে হবে। এক্ষেত্রে, সকল সরকারি, বেসরকারি, আন্তর্জাতিক এবং দেশিয় সকল মাধ্যমের একটি অভিন্ন কৌশলে এগিয়ে যাওয়া অনিবার্য।

Bootstrap Image Preview