বিশ্ববাজারে দাম কমার অজুহাতে বিগত ছয় বছর ধরে কমেই চলছে কাঁচা চামড়ার দাম। কিন্তু দাম কমেনি চামড়াজাত পণ্যের। দিন দিন চামড়াজাত পণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী গতিতে বাড়ছেই।
আমাদের দেশের নামিদামি ব্রান্ডগুলোতে যেকোনো জুতা বা অন্য কোনো চামড়াজাত পণ্যে কিনতে গেলে দেখা গেছে পণ্যের দাম শুরু হয় হাজার টাকা থেকে। একটি ভালো চামড়ার বেল্ট কিনতে ক্রেতাকে খরচ করতে হয় ১৫০০-২০০০ টাকা। অথচ এ বছর লাখখানেক টাকা দিয়ে কেনা গরুর চামড়াও বিক্রি হয়েছে ৮০০-১০০০ টাকায়।এ বছর দেশের সবচেয়ে বড় গরু রাজাবাবু বিক্রি হয়েছে ৫৫ লক্ষ টাকায়। অথচ এই গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র এক হাজার টাকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চামড়া ব্যবসায়ী বিডিমর্নিংকে, সাধারণত একটি ৪৫-৭০ বর্গফুটের চামড়া দিয়ে ১০টি জুতো বা যেকোনো নির্দিষ্ট চামড়াজাত পণ্যে তৈরি করা যায়।ধরা যাক একটি বড় চামড়া দিয়ে ১০টি জুতো তৈরি করা যায়।
তিনি আরও বলেন, একটি চামড়া যদি প্রতি বর্গফুটে ৫০ টাকা এবং ফিনিশড করা জন্য আরও ৫০ টাকা যোগ করা হয়। তাহলে একটি মোটামুটি ভালো মানের জুতোর দাম ১৫০০ টাকা পড়ে। কিন্তু এই জুতোই আমাদের দেশের নামিদামি ব্যান্ডগুলোতে বিক্রি করা হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়।
দেশে বিগত ছয় বছরে গরুর প্রতি বর্গফুট কাঁচা চামড়ার দাম কমেছে ৩০ টাকা করে। আর খাসির চামড়ার দাম কমেছে ৩০-৩৫ টাকা করে।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা দোষ দিচ্ছেন আন্তর্জাতিক বাজার মন্দা হওয়াকে। আমাদের দেশের বর্জ্য শোধানাগার(সিইটিপি)সঠিকভাবে না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা বিদেশি বড় কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। তাই দিন দিন দাম কমে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার বাজারে চামড়ার চাহিদা কমে গেছে তাই দামও কমে গেছে চামড়ার। এমন বাস্তবতায় আমাদের দেশে চামড়াজাত পণ্যের দাম কমার কথা।
কিন্তু চামড়ার দাম কমলেও কেনো চামড়াজাত পণ্যের দাম কমছে না এমন প্রশ্নের জবাবে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বিডিমর্নিংকে বলেন, আমাদের দেশের সিইটিপি এবং কমপ্ল্যায়েন্স দূরাবস্থার কারণে বাইরের ক্রেতারা আগ্রহী হচ্ছেন না। কিন্তু আমাদের দেশে যেহেতু চামড়ার দাম কম তাই দেশিয় ব্যান্ডগুলোর চামড়াজাত পণ্যের দামও কমা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
তিনি আরও বলেন, দেশিয় ব্যান্ডগুলোর এত বেশি দাম হাকানোর যৌক্তিক কোনো কারণ দেখছি না। কেননা তারা কম দামে এদেশ থেকে চামড়া কিনছে এবং এদেশেই বিক্রি করছে।
তবে ভিন্ন কথা বললেন এপেক্স ট্যানারির নির্বাহী পরিচালক এম এ মাজেদ। তিনি বিডিমর্নিংকে বলেন, একটি চামড়া দিয়ে ১০ টি জুতো তৈরি করা যায় ঠিকই কিন্তু শুধু কাঁচা চামড়া দিয়ে জুতো তৈরি হয়ে যায় না। জুতো তৈরি করতে নানা রকম কেমিক্যাল এবং আনুষাঙ্গিক নানা খরচ আছে। যার কারণে জুতোর দাম বেশি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে যে জুতোটা ৪০০০-৬০০০ হাজার টাকা বিক্রি করা হয় সেই একই জুতো ইউরোপের বাজারে ১৫-১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। সে হিসাব করলে আমাদের দেশের চামড়াজাত পণ্যের দাম কম।
হাজারিবাগের আশেপাশে এবং ধানমন্ডি-১৫ তে কিছু ছোট ছোট দোকানে চামড়া ও পেরেক দিয়ে জুতো তৈরি করে ৭০০-৮০০ টাকায় বিক্রি করে কিন্তু সেসব নিম্ন মানের জুতোর সাথে ব্যান্ডের জুতো তুলনা করলে হবে না।
তবে ক্রেতাদের মধ্যে আছে চামড়াজাত পণ্যের দাম নিয়ে অসন্তোষ।শাকিলা পারভীন নামের এক ক্রেতা বিডিমর্নিংকে বলেন, আমাদের দেশের জুতোর মান অনুযায়ী দাম অনেক বেশি। এই জুতোগুলোর দাম কিছুটা কম হলে গ্রাহক বাড়বে। কেননা বেশি দাম হওয়ার কারণে অনেক মানুষ ইচ্ছে থাকলেও চামড়ার জুতো কিনতে পারে না।
নিভা রহমান নামের এক ক্রেতা বিডিমর্নিংকে বলেন, দেশে বছর বছর চামড়ার দাম কমছে। সে অনুযায়ী চামড়ার জুতো ব্যাগ এবং অন্যান্য চামড়াজাত পণ্যের দাম কমার কথা। কিন্তু আমাদের দেশে হচ্ছে উল্টোটা। তিনি বলেন, চামড়াজাত পণ্যের দাম কমানোর জন্য সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত।