বগুড়ার ধুনট উপজেলায় স্থানীয় ভাবে টুবি নামে পরিচিত আউশ জাতের ধান চাষে বিঘা প্রতি দ্বিগুন লাভ পেয়ে কৃষকের মলিন মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নানা রোগ বালাই ও প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে গত মৌসুমে বোরো ধানের ফলন বিপর্যয় ঘটেছিল। কাঙ্খিত ফলন না পেয়ে কৃষকের মুখ মলিন হয়ে যায়। কিন্ত সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষক চলতি মৌসুমে টুবি নামে পরিচিত আউশ ধান চাষে ঝুঁকে পড়ে।
বর্তমানে এই ধান কাটা মাড়াই শেষ পর্যায়ে। মাঠের বাম্পার ফলন এখন গোলায় তুলতে ব্যস্ত কৃষক কৃষাণীরা। কষ্টে সৃজিত ফলন আনন্দ-চিত্তেই ঘরে তুলছেন তারা।
সরেজমিন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, টুবি ধানের বাম্পার ফলনের চিত্র। প্রকৃতি এ বছর দু’হাত ভরে দিয়েছে কৃষকদের। আবহাওয়া ছিলো অনুকূলে, ফলন হয়েছে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো। স্বর্ণ রঙে পাকা ধান কাটতে শ্রমিকদের সঙ্গে কাস্তে হাতে মাঠে ছোটেন কৃষক। ধান কাটা আর আঁটি বাঁধা শেষে ভার করে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির উঠোনে অথবা সুবিধাজনক স্থানে। সেখানে মাড়াইয়ের পর রোদে শুকিয়ে তোলা হচ্ছে গোলায়। কৃষকদের পাশাপাশি ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষাণীদেরও। ফলন ভালো পেয়ে তাদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে খুশির ঝিলিক।
উপজেলার বাটিকাবাড়ি গ্রামের আদর্শ কৃষক আব্দুল গফুর বলেন, ইরি-বোরো তোলার পর যেসব নিচু জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে, সেখানে আউশজাতের এই ধান রোপণ করা হয়। এই ধানকে গ্রামের ভাষায় আমরা টুবি বা গুছি বলে থাকি। ইরি-বোরো তোলার পর আমন চাষের আগে দুই মাস নিচু জমিগুলো খালি পড়ে থাকে। এ বছর বাড়তি ফসলের আশায় ইরি-বোরো তোলার পর আমনের আগে টুবি ধান লাগিয়েছিলাম। ভাল ফলন হয়েছে।
উপজেলার বৈশাখী চরের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, শুকনা জমিতে এই ধানের বীজতলা তৈরি করা হয়। এক বিঘা জমিতে টুবি ধান চাষ করতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন হয়েছে প্রায় ১৫ মন। বাজারে ধান ও খড় বিক্রি করে উৎপাদন খচর বাদ দিয়ে বিঘায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
ধুনট উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহীনুর ইসলাম বলেন, টুবি বা গুছি নামে পরিচিত এই ধান চষের পর একই জমিতে রোপা আমান আবাদ করেন চাষিরা। এ বছর প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে ব্রিআর-২৬, ব্রি ধান ২৮, ৪৮ ও নিউটেন জাতের ধান চাষ হয়েছে। এই ধানে ইরি-বোরোর মত বাড়তি সেচ লাগে না। সারও খুব কম লাগে। এজন্য খরচ কম হয়। এ ধান বিঘাপ্রতি ১৫ মণ পর্যন্ত উৎপাদন হয়। এ কারণে এই ধান চাষের পরিমাণ বাড়াতে কৃষককে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।