নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি বাজারে অবস্থিত অরবিট প্রাইভেট হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ওই এলাকায় নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের ফুলতলী বাজার এলাকার বাসিন্দা রুবেল মিয়া ও শিরিনা আক্তারের ৪০ দিন বয়সী শিশু ইসমত নাহার জিবা ঘন ঘন হেঁচকি দেওয়ায় গত ৩১ আগস্ট সকালে সন্তান জিবাকে নিয়ে স্থানীয় আউশকান্দি বাজারের অরবিট হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু-কিশোর রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ এ.এইচ.এম খায়রুল বাশারের শরণাপন্ন হন।
সেখানে তার কাছ থেকে ৫শ টাকা ভিজিট রেখে কিছু ঔষধ লিখে দেন ডাঃ এ.এইচ.এম খায়রুল বাশার এবং পরদিন শিশুর অবস্থা জানানোর জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু পরের দিন শিশুটি আগের মতোই রয়েছে একথা জানালে ডাঃ খায়রুল বাশার শিশুটির অবস্থা আশংকাজনক বলে উল্লেখ করে মৌলভীবাজারের মামুন হসপিটালে ভর্তি করে সেখানের ডাঃ বিশ্বজিতের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তাদের।
সেখানে গিয়ে ডাঃ বিশ্বজিতের সাথে ফোনে কথা বলিয়ে দেয়ার জন্যও বলে দেন শিশুর মাকে। আর্থিক সঙ্গতি না থাকলেও শিশুর প্রাণ রক্ষার্থে দ্রুত মৌলভীবাজার ছুটে যান শিশুর মা শিরিনা আক্তার। সেখানে যাওয়ার পর খোঁজে বের করেন ডাঃ বিশ্বজিতকে। এমনকি তার সাথে শিরিনা আক্তারের মোবাইল ফোন দিয়ে কথা বলেন ডাঃ খায়রুল বাশার। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাঃ বিশ্বজিত মোবাইল ফোনে ডাঃ খায়রুল বাশারকে জানান ‘শিশু জিবা পুরো সুস্থ আছে। কিন্তু এ সময় সম্পূর্ণ সুস্থ জিবাকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন ডাঃ খায়রুল বাশার।’
সে অনুযায়ী রাতে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় জিবাকে। মোবাইল ফোনে তাদের কথোপকথনে শিশুর মা শিরিনা আক্তারের মনে নানা সন্দেহের দানা বাঁধে। শিরিনা আক্তারের মোবাইল ফোনে অটো কল রেকর্ড এপস ইনস্টল করা ছিল। তা জানতোনা ওই দুই চিকিৎসক।
মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডে দুই চিকিৎসকের কথোপকথনের কিছু অংশ পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
ডাঃ বিশ্বজিত- ‘দোলা ভাই তোমার রোগী তো খুবই ভালা আছে। কোনো সমস্যা নাই, মা কান্দতে কান্দতে শেষ।’
ডাঃ খায়রুল বাশার- ‘আমিতো জানি রোগী ভালা, ভালা ভোলা কওয়ার দরকার নাই, ভালা জীবনেও কইছ না, বল রোগী খারাপ আছে, ভর্তি করে রাখো, ভালো করে চিকিৎসা দে। ইনজেকশন টিনজেকশন মার। নাইলে শান্তি হইতো নায়।’
এসব কথা বলে হাসতে হাসতে ফোন রেখে দেন ডাঃ বিশ্বজিত। তাদের কথা বার্তায় সন্দেহ হওয়ায় মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডটি শুনে প্রতারণার বিষয়টি আঁচ করতে পারেন জিবা’র মা।
এ প্রতিনিধির সাথে আলাপকালে শিশু জিবার মা শিরিন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘ডাক্তারের কাছে মানুষ যায় শান্তির জন্য, কিন্তু তিনি আমার সাথে এমন প্রতারণা করছেন যা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। আমি গরিব মানুষ এতো টাকা ঋণ করে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পরে সিট কেটে বাড়ি ফিরেছি।’
ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ঘটনাটি জানিয়েছি, হাটতে হাটতে স্যান্ডেল ছিড়েছি কিন্তু বিচার পাইনি।’
তিনি চিকিৎসার নামে এমন প্রতারণার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। যাতে তার মতো এর কোনো অসহায় সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার না হয়।
এ ব্যাপারে অরবিট হাসপাতালের ডাঃ এএইচএম খায়রুল বাশার জানান, ওই শিশুকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন মাত্র। এর বাহিরে কোনো কথা বলতে রাজি হননি ওই চিকিৎসক।