প্রাচীনকাল থেকে ভালোবাসার মানুষকে খুঁজে পেতে নানা মানুষ নানা কাজ করে আসছে। কেউ হুজুরের কাছে তাবিজ-কবজ নেয়, কেউবা আবার পানিতে পয়সা ছুঁড়ে মারে। আজ আমরা যে বিষয়টি জানবো তা একটু ভিন্ন রকমের।
ওক গাছ। ৫০০ বছরের বেশি বয়সের বৃক্ষটি গত ১ শতাব্দী ধরে নরনারীর সঙ্গী খুঁজে দিচ্ছে পাশাপাশি শতোর্ধ্ব বিবাহ সম্পন্ন করেছে।
জার্মানের হ্যামবার্গ শহর থেকে উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ১০০ কিমি দূরে দ্যদওর বনে এই প্রাচীন বৃক্ষটি দেশের রমণীদের মনের বাসনা পূরণ করে আসছে।
প্রিয় মানুষটিকে পাওয়ার জন্য অথবা ভালো বন্ধু সন্ধানের জন্য নারীরা ওক গাছকে পত্র লিখে পাঠায়। তাদের না-বলা কথাগুলো লিখে, কখনো শুধু নাম আর ঠিকানা লিখেও থাকে।
অধীর প্রতীক্ষার মানুষটি কেমন চাই, ভালো লাগা, না-লাগা এবং নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়। তারপর বেগুনি খামের ওপর ব্রাইডগ্রুমস ওক, দ্যদওর ফরেস্ট, ২৩৭০১ ইউতিন, জার্মানি লিখে পাঠিয়ে দেয়।
সেখানে যদি কোনো পুরুষের পত্র পড়ে ভালো লাগে বা পত্রপ্রেরকের স্বপ্নের সঙ্গে পুরুষের স্বপ্ন মিলে যায় তবেই তাদের মিল হয়। যার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে অসমতা থাকে, সে উত্তর দিতে না চাইলে পত্রটি পড়ে আবার সেখানে রেখে দেয়, অন্যজনকে পড়ার সুযোগ করে দেয়।
এভাবে যুগ যুগ ধরে সম্পর্কের অটুট বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে অসংখ্য নিঃসঙ্গ নর-নারী। ৩ মিটার উঁচু কাঠের মই বেয়ে প্রকাণ্ড ওক গাছে রয়েছে অদ্ভুত রকমের একটি বড় ছিদ্র।
তাতে হলুদ রং দিয়ে চিহ্নিত করা গর্তে প্রতিদিন পৃথিবীর নানা দেশ থেকে বেগুনি রঙের চিঠির খাম নিয়ে ডাক পিয়ন হাজির হয়। কার্ল হেইঞ্জ মার্টিন্স নামের এক ডাক পিয়ন সেখানে নিয়মিত চিঠি বিলি করতেন। তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে ২০ বছর ধরে চিঠি বিতরণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
অবসরপ্রাপ্ত ৭২ বছরের এই প্রবীণ জানান, এ বিষয়টি জাদুর মতো ও অনেক কল্পনাসমৃদ্ধ। উপমহাদেশের অনেক স্থান থেকেই সেখানে পত্র পাঠানো হয়।
কিন্তু অনেকেই জানে না যে, কীভাবে এটি আবিষ্কার হল। ১২৮ বছর আগের অর্থাৎ ১৮৯০ সালের একটি ঘটনা মার্টিন্সের ভাষায় একবার স্থানীয় একটি মেয়ে এক চকলেট প্রস্তুতকারক যুবককে পছন্দ করে।
বাবা ছেলেটিকে দেখে অপছন্দ ও অসম্মতি করায় তারা দুজনে আর তেমন দেখা করতে পারে না। পরে অনেক দিন তারা গোপনে গোপনে চিঠি লেখে।
সেই ওক গাছটির কাছে নীরবে চিঠি লিখে রেখে যায়। এভাবে এক বছর পরই মেয়েটির বাবা ছেলেটিকে মেনে নেয় এবং মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেয়। বিয়েটি সম্পন্ন হয় চির প্রাচীন শাখা ছড়ানো ওক গাছটির নিচে। বিষয়টি খুবই আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরে জার্মান ডাক বিভাগ ১৯২৭ সালে গাছটিতে নিজস্ব পোস্টকোড নম্বর ও একজন ডাক পিয়ন নিযুক্ত করে। আজ পর্যন্ত পোস্টকোড নম্বর ও ডাক পিয়ন রয়েছে।
সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঘটক গাছটির কাছে এখন বছরে প্রায় ১ হাজার চিঠি আসে। তবে গ্রীষ্মের সময়ে একটু বেশি চিঠি আসে বলে উল্লেখ করেন ভালোবাসার বাহক।
এমন লৌকিক কথাও রয়েছে, যদি কোনো নারী কোনো কথা না বলে অথবা না হেসে পূর্ণচন্দ্র রাতে তার প্রিয় মানুষটিকে ভেবে ভেবে ওক গাছের প্রকাণ্ডটির চারদিকে তিনবার ঘোরে। তাহলে এক বছরের মধ্যেই তার মনের মানুষটিকে পেয়ে যায়। প্রবল বর্ষণ, তুষারপাত কিংবা প্রচণ্ড সূর্যতাপ উপেক্ষা করে গত ৯১ বছর ধরে জার্মান ডাক পিয়ন সপ্তাহে ৬ দিনই চিঠি নিয়ে হাজির হয় ভালোবাসার মানুষটির সন্ধান খুঁজে দেবার জন্য।