এক সময় শাসন ব্যবস্থার কর্ণধার ছিলেন রাজা। কেন্দ্রীয় শাসনে রাজাকে সাহায্য করতেন মন্ত্রী ও আমাত্য। বর্তমানে রাজার শাসন আমল নেই। স্মৃতি নিয়ে খালি পড়ে আছে বিভিন্ন রাজপ্রাসাদ। তবে রাজ্য বা রাজা না থাকলেও একজন রানি তার সাম্রাজ্যের প্রাসাদ সুন্দরীর স্থান দখল করে আছে। তিনি সকলের প্রিয় অভিনেত্রী দিলরুবা দোয়েল। ভক্তদের কাছে তিনি দোয়েল ম্যাশ নামেও পরিচিত। বিডিমর্নিং আলাপনে নিজের ব্যক্তিজীবন ও মিডিয়ায় পথচলা নিয়ে নানা কথা বলেছেন। সাক্ষাতে ছিলেন নিয়াজ শুভ-
শুরুর দিকের গল্পটা জানতে চাই...
দোয়েলঃ ২০১৪ সালে আগস্টের প্রথমদিকে কাজ শুরু করি। প্রথম আলোর নাকশার কভারপেজ দিয়ে আমার কাজের শুরু। আমি যেহেতু কোনরকম কোন রিয়্যালিটি শো থেকে আসিনি, সেহেতু আমি আগে থেকে প্রস্তুত ছিলাম না।
কার হাত ধরে পথচলা শুরু করেছেন?
দোয়েলঃ ফটোগ্রাফার কবির ভাইয়ের সাথে আমার আগে থেকে পরিচয় ছিল। কবির ভাই হঠাৎ একদিন একটা দোয়েল সিল্কের ফটোশুট করাবে। আমাকে বলল তুই করবি নাকি? তোর নাম তো দোয়েল, দোয়েল সিল্কের ফটোশুট করবো। তুই করবি কিনা দেখ? আমি বললাম হ্যাঁ আমি করবো যদি এটা নাকশার কভারপেজ হয়। তাঁর দুইদিন পরেই শুটটা করি। সেখান থেকেই আমার যাত্রা শুরু।
সেজো রানি হিসেবে কেমন লাগছে?
দোয়েলঃ বাংলাদেশের প্রথম সবচেয়ে বড় মেগাসিরিজ ‘সাত ভাই চম্পা’। এখানে প্রত্যেক রানির একটা করে টাইটেল থাকে। সেজো রানির টাইটেল হচ্ছে প্রাসাদ সুন্দরী। আলহামদুলিল্লাহ্ বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি।
এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হলেন কিভাবে?
দোয়েলঃ ‘সাত ভাই চম্পা’র পরিচালক রিপন নাগ ভাইয়ের সাথে জানাশোনা ছিলো। সিরিয়ালটি বানানোর এক বছর আগেই এটার প্রোমো বানানো হয়। প্রোমো বানানোর সময় তাঁরা আমাকে বলে, এরকম একটি সিরিয়ালের কাজ করতে চাচ্ছি, চ্যানেল আইতে জমা দিবো। একদিনের শুটিং করবো, তুমি করতে পারবে কিনা। তখন আমি এই হলুদ জার্নির চরিত্রটা করি। সেখান থেকেই রিপন ভাই আমাকে ফিক্সড করে রেখেছে। আমার মধ্যে নাকি তিনি প্রাসাদ সুন্দরীকে খুঁজে পান।
সেজো রানি হয়ে উঠার প্রস্তুতি...
দোয়েলঃ এ নিয়ে প্রচুর মিটিং করি। দিনের পর দিন চরিত্রটি নিয়ে কথা বলি, বুঝার চেষ্টা করি। এই চরিত্রের ডায়লগ ডেলিভারি কেমন হতে পারে বা এটাকে কিভাবে ধারণ করতে হবে। তখনকার প্রজাপ্রথা অনেক শক্ত ছিল। আপনার তাকানো, আপনি কিভাবে কথা বলছেন, কিভাবে একজনকে আদেশ করছেন সবকিছুই ভিন্ন ধারার ছিলো। সেজো রানি হয়ে উঠতে রিপন ভাই এবং সাত ভাই চম্পার পুরো টিমই আমাকে সাহায্য করে। এখন দর্শকরা বলবে আমি আসলে নিজেকে কতটুকু প্রমাণ করতে পেরেছি।
বড় পর্দায় কাজের খবর কি?
দোয়েলঃ বড়পর্দায় আমার প্রথম কাজ ‘আলফা’। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সিনেমাটি বানান নাসির আহমেদ বাচ্চু। পরবর্তীতে ফিচার লেন্দ এর ‘চন্দ্রাবতী কথা’য় কাজ করি। সেখানে আমি চন্দ্রাবতী চরিত্রেই ছিলাম। এছাড়া নুরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ তে কাজ করি। কিছুদিন শুটিং হওয়ার পর এখন সিনেমার কাজটি বন্ধ হয়ে আছে।
বড় পর্দায় কি নিয়মিত কাজ করবেন?
দোয়েলঃ বড় পর্দায় নিয়মিত কাজ করার ইচ্ছা আছে। এজন্যই বাচ্চু ভাইয়ের ফিল্মটা আমি করি। কিন্তু সঙ্গত কারণে সময় চলে যাচ্ছে। যদি চরিত্র পছন্দ হয়, পরিচালক আমাকে নিতে চায় তাহলে অবশ্যই কাজ করতে চাই। সেটা হোক বড় পর্দা কিংবা ছোট পর্দা। আমি আমার সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে কাজ করতে চাই।
কোন মাধ্যমে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন?
দোয়েলঃ আমি সব জায়গাতে কাজ করতে অসম্ভব পছন্দ করি। আসলে কি জানেন, প্রত্যেকটা মানুষের না রুট ভুলে যাওয়া ঠিক না। আর আমার শুরুটাই হচ্ছে মডেলিং দিয়ে। আমি কোরিয়গ্রাফার আজরা আপু, লুনা আপু, টুম্পা আপুর সাথে কাজ করেছি। এগুলো কোনকিছুই ভুলার মত না। তিনটা কাজই যেহেতু একসাথে শুরু করি, সেহেতু আমি তিনটা কাজই ব্যাল্যান্স করে করার চেষ্টা করি।
নিজেকে কতটা ভাগ্যবান মনে করছেন?
দোয়েলঃ আলহামদুলিল্লাহ্, আপনাদের সবার দোয়ায় আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি। আমি কোন বিউটি কম্পিটিশন থেকে আসিনি কিংবা আমার পরিবারের কেউ কখনও মিডিয়ায় কাজ করেনি। সেখান থেকে এসে এত দ্রুত সময়ে আমি যে কতোগুলো প্রোজেক্ট করেছি তাতে আমি তৃপ্ত। আমি নাসির হোসেন বাচ্চু, রাশেদ ভাইদের মত মানুষের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। তাদের সাথে কাজ করা আমার তো রীতিমত ভাগ্য ছাড়া কিছু হয় না। আসলে ভাগ্যটাও দরকার। এতো অল্প সময়ে এসে এতোগুলো কাজ করা নিশ্চই ভাগ্যের ব্যপার। আর যারা আমার উপর ভরসা করেছেন, যারা ভেবেছেন আমি কাজটি করতে পারবো তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
মিডিয়ায় কাজের ক্ষেত্রে পরিবারের সাপোর্ট...
দোয়েলঃ কাজের ক্ষেত্রে পরিবার আমাকে ফুল সাপোর্ট করেছে। আমি কখনোই পরিবার থেকে কোন বাঁধা পাইনি। কাজের শুরুতে আমি একটু ভয় পেয়েছিলাম। কারণ আমি কাউকে চিনতাম না। তখন আমার বোন দুলাভাইয়ের কাছ থেকে অনেক সাপোর্ট পেয়েছি। উনারা আমার জীবনের সবচেয়ে ওয়ানঅফ লাইফ মেইন। আমার ছেলেও তাই। আমাকে এতো কো-অপারেট না করলে আমি এতদূর আসতে পারতাম না।
আমি যখন প্রথম আলোর নকশার শুট করি, তখন বাসায় কাউকে কিছু বলিনি। নকশা প্রকাশ হওয়ার পর বাবা আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, মা তোমার ছবি দেখলাম, খুব ভালো লেগেছে। আপনি যদি আপনার কাজের জায়গায় ঠিকঠাক থাকেন এবং মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন তাহলে প্রত্যেকেই আপনার কাজের গুরুত্ব বুঝতে পারবে। আপনার জীবন, আচরণ অনুপাতে বুঝা যাবে আপনি এখন কাজে আছেন। আমি সাপোর্টটা সবার কাছ থেকেই পাই।
মিডিয়ায় কাজের ক্ষেত্রে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?
দোয়েলঃ মিডিয়ায় কাজ করা খুব রিস্ক এটা একদম ভুল কথা। কারণ আমরা যারা নিয়মিত কাজ করছি, রিস্ক হলে কিন্তু সেটা করতে পারতাম না। বাসা থেকে বের হয়ে যাই সকাল ৫-৬টায়, আসতে আসতে প্রায় ১১-১২টা বাজে। আমাদের কোন রকম ফুরসত নাই যে, তথাকথিত সমাজ যেটা বলে সেসব উল্টাপাল্টা কাজ করা। সব জায়গাতেই কিছু না কিছু আছে। আমার মনে হয়, সে দিক দিয়ে মিডিয়া বেশ কর্পোরেট।
সমাজে আমরা যদি তাকাই সব ক্ষেত্রেই ঝামেলা আছে। কিন্তু সেগুলো সেভাবে হাইলাইট হয় না। মিডিয়ার মানুষদের সকলে চিনে বলে তাদের যে কোন ব্যপার লাইমলাইটে চলে আসে। এখানে আসার ক্ষেত্রে এমন কোন প্রতিবন্ধকতা নেই যে, এখানে আসলেই মানুষ খারাপ হয়ে যাবে। সবার বুঝা উচিত, মিডিয়ায় আসলেই মানুষ খারাপ হয়ে যায় না। এখানে আসার পর আমিও গ্রুমিং করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি গ্রুমিং করার জন্য কাউকে পাই নাই। আসল কথা হচ্ছে সবারই সব জায়গায় বুঝেশুনে চলা উচিৎ। এটা পুরোপুরি আপনার ব্যাপার তাই না। আমি কোথাও দেরি করে যেতে পারি না। আমার যখন কাজ থাকে বা কোন শো থাকে, আমি ৪-৫ ঘন্টা আগে গিয়ে বসে থাকি। আমার জুনিয়ার আর্টিস্টরা যখন আসে তখন এটা তাদের ব্যাপার, কে এটাকে কিভাবে নিচ্ছে। কিন্তু আমার তো একটা ইনভেস্টমেন্ট করতে হবে। আমি আসলে একদিন বা দুই দিনের স্টার হতে চাই না। আমি চাই, দশ বছর পরেও মানুষের সাথে আমার দেখা হলে যেন এই ব্যপারটা থাকে যে, হ্যাঁ হ্যাঁ কি অবস্থা কেমন আছেন। এই ব্যপারটি আমি চাই। আমাকে দুই দিনে সবাই চিনে যাবে এতে আমি বিশ্বাসী না।
বর্তমানে আপনার হাতে নতুন কি কাজ আছে?
দোয়েলঃ সাত ভাই চম্পার শুটিং রেগুলার চলছে। ছোটদের একটা সিরিজ নিয়ে কাজ করছি। আর আপাতত হাতে তেমন কোন কাজ নেই।
এতক্ষণ সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
দোয়েলঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।