রায়হান শোভন।।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছেন তিনি ২০৪০ সালের মধ্যেই আর্টিকক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়ন করবেন। কেননা কাঙ্খিত এসডিজি বাস্তবায়নে এটা একটি বড় অন্তরায়। নেশা করা মানুষের আদিম প্রবৃত্তি। কিন্তু মানুষ এর ক্ষতিকর প্রভাব ভালোভাভাবে জানে। তাই আমাদের জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষকে বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে আবেগ দিয়ে এই আন্দোলনের সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
আজ বুধবার সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে ‘বাংলাদেশে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) আর্টিক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়নের অগ্রগতি’ বিষয়ক গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য প্রজ্ঞা এবং অ্যান্টি টোব্যাকো এলায়েন্স(আত্না) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় প্রাক্তন উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী আরও বলেন, অনান্য দেশের সাথে যে বৈষম্য আছে সেটা কমিয়ে আনতে হবে।যেহেতু এসডিজির ৩ নম্বর লক্ষ্যমাত্রায় পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে সবার স্বাস্ত্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে তাই আমাদের তামাক সেবন নিয়ন্ত্রনে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। কেননা এসডিজি বাস্তবায়ান করতে হলে তামাক সেবন শুন্যের কোঠায় না আনার কোনো বিকল্প নেই।
আজ ঢাকায় প্রকাশিত ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক’ এফটিসি বাস্তবায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশ ২০১৮, গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। সামগ্রিকভাবে, আর্টিক্যাল ৫.৩ এর নির্দেশনাবলী বাস্তবায়নে অগ্রগিতিও উল্লেখযোগ্য নয়।
গবেষণায় বিগত দুই বছরে সরকার ও তামাক কোম্পানির নানাবিধ হস্তক্ষেপ কীভাবে আমলে নিয়েছে এবং জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত নীতিমালা সুরক্ষায় কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা মূল্যায়নের চেষ্টা করা হয়েছে।বাংলাদেশ সরকার ২০০৮ সালে এফটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ সংক্রান্ত গাইডলাইন গ্রহন করেন। তবে এক দশকেও সরকার এ সংক্রান্ত কোনো নীতিমালা প্রণয়ন করেননি।
গবেষণায় উঠে এসেছে প্রতিদিন দেশে প্রায় ৪৪৪ জন লোক মারা যায় তামাক সেবনের ফলে যা কিনা একটি বড় ধরনের বিমান দুর্ঘটনার সামিল।অনুষ্ঠানে বক্তারা আগামী বছরের মধ্যে আর্টিক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) আবুল কালাম আজাদ বলেন, আপনাদের সাথে থেকে এই নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য যা করা দরকার করবো।তিনি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান বাধা তামাক সেবন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশে তামাক সেবনের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারবো।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় প্রাক্তন উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকি বলেন, আমাদের দেশের তামাক পণ্যের দাম পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম। তাই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি।
তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের এর কুফল তুলে ধরতে হবে। যাতে তামাক সেবনের পরিমাণ কমে আসে। তিনি বলেন, নীতিমালা প্রণয়নের চেয়ে যেটা বেশি দরকার সেটি হচ্ছে জনগণকে সচেতন করে তামাক সেবন থেকে বিরত রাখা।
সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিবছর ১লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে তামাক সেবনের ফলে। সরকারের ১০.৮ শতাংশ শেয়ার আছে ব্রিটিশ টোব্যাকো কোম্পানির সাথে। যে কারোণে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাথে টোব্যাকো কোম্পানির যোগাযোগ আছে। ভারত জাপান টোব্যাকো কোম্পানিকে রিফিউজ করেছে। আমাদের দেশে তামাকজাত পণ্যের দাম কম বিধায় জাপান এখন আমাদের দেশে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহী হচ্ছেন।কিন্তু আমাদেরও উচিত তাদের রিফিউজ করা । তিনি আরো বলেন, সরকার যেহেতু তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে তাই সরকারের বিনিয়োগ তামাক খাতে থাকা উচিত না।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে অতিথি হিসেবে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়; ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্; এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর সম্মানিত প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।