বিডিমর্নিং ডেস্ক-
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবশেষে দেশের ২৭১টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের সরকারি আদেশ (জিও) জারি হয়েছে।
আজ রবিবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব নাছিমা খানম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ৮ আগস্ট থেকে এসব কলেজকে সরকারি করার আদেশ কার্যকর করা হয়েছে।
এর আগে সারা দেশে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটিসি), সরকারি আলিয়া মাদ্রাসাসহ ৩২৭টি সরকারি কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠান ছিল। নতুন ঘোষণা আসায় সরকারি কলেজের সংখ্যা দাঁড়াল ৫৯৮টি।
নতুন করে সরকারি হওয়া কলেজগুলোর মধ্যে ঢাকা জেলার ৪টি, মানিকগঞ্জের ৪টি, নারায়ণগঞ্জের ৩টি, মুন্সীগঞ্জের ৩টি, গাজীপুরের ৩টি, নরসিংদীর ৪টি, রাজবাড়ীর ২টি, শরীয়তপুরের ৪টি, ময়মনসিংহের ৮টি, কিশোরগঞ্জে ১০টি, নেত্রকোনার ৫টি, টাঙ্গাইলে ৮টি, জামালপুরে ৩টি, শেরপুরে ৩টি, চট্টগ্রামে ১০টি, কক্সবাজারে ৫টি, রাঙামাটিতে ৪টি, খাগড়াছড়িতে ৬টি, বান্দরবানে ৩টি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ফেনীতে একটি করে, কুমিল্লায় ১০টি, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ৬টি, চাঁদপুরে ৭টি, সিলেটে ৯টি, হবিগঞ্জে ৫টি, মৌলভীবাজারের ৫টি, সুনামগঞ্জে ৮টি, রাজশাহীতে ৭টি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২টি, নাটোরে ৩টি, পাবনায় ৭টি, সিরাজগঞ্জে তিনটি, নওগাঁ জেলায় ৬টি, বগুড়ায় ৬টি, জয়পুরেহাটে একটি, রংপুরে ৭টি, নীলফামারীতে ৪টি, গাইবান্ধায় ৪টি, কুড়িগ্রামে সাতটি, দিনাজপুরে ৯টি লালমনিরহাটে ৩টি, ঠাকুরগাঁয়ে একটি, পঞ্চগড়ে ৪টি, খুলনায় ৫টি, যশোরে ৫টি, বাগেরহাটে ৬টি, ঝিনাইদহে একটি, কুষ্টিয়ায় দুটি, চুয়াডাঙ্গায় দুটি, সাতক্ষীরায় দুটি, মাগুরায় ৩টি, নড়াইলে একটি, বরিশালে ৬টি, ভোলায় ৪টি, ঝালকাঠিতে ৩টি, পিরোজপুরে দুটি, পটুয়াখালীতে ৬টি, বরগুনায় তিনটি কলেজ রয়েছে।
এ ২৭১টি কলেজে রয়েছেন অন্তত ১০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। আজ থেকেই তারা সরকারি বেতন-ভাতাসহ সব সুবিধা পাবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০১০ সালে সরকারি স্কুল ও কলেজবিহীন উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ জাতীয়করণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময়ে ৩২৯টি স্কুল ও ২৯৯টি কলেজ জাতীয়করণে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী। সম্মতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মাউশির (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর) কর্মকর্তারা সরজমিন পরিদর্শন করে স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ, শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত তথ্যসহ আনুষঙ্গিক সব তথ্য সংগ্রহ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনের সব সম্পত্তি সরকারকে ডিড অব গিফট (দানপত্র) দলিল করে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। স্কুলগুলো ধাপে ধাপে জাতীয়করণ করা হলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতির চাপে আটকে যায় কলেজ সরকারিকরণ।
এর আগে মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি কলেজ শাখার এক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিপ্রাপ্ত ২৯৩টি কলেজ সরকারি করতে অর্থ ছাড়ের সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতি বছর ১০০ কলেজ জাতীয়করণের প্রস্তাব দিয়ে গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছিল। তিন ধাপে জাতীয়করণ হলে অসম প্রতিযোগিতা ও ঘুষ দুর্নীতির আশঙ্কায় একসঙ্গে জাতীয়করণ করতে পাল্টা চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়ালে শেষ পর্যন্ত পিছু হটে অর্থ মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, সরকারি কলেজ না থাকা উপজেলায় একটি করে কলেজ জাতীয়করণ করতে ২০১৬ সাল থেকে তালিকাভুক্তির কাজ শুরু করে সরকার। ওই তালিকা থেকে ২৭১টি কলেজ জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ২ আগস্ট এ সিদ্ধান্তের সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত বৃহস্পতিবার এটি অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সারসংক্ষেপটি ফের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসে। এর পর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আজ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
জানা গেছে, নতুন সরকারি কলেজগুলোতে আট হাজারেরও বেশি শিক্ষক রয়েছেন। এসব শিক্ষক সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) অধীনে পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যাডারভুক্ত হতে পারবেন। গত ৩১ জুলাই এ সংক্রান্ত ‘সরকারিকৃত কলেজশিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকৃত বিধিমালা ২০১৮’ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিধি অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকলে বেসরকারি কলেজের যে কোনো শিক্ষক শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতে পিএসসির অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।
তবে সরকারি হওয়া কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকরা নন-ক্যাডার হিসেবে নিজ নিজ পদে নিয়োগ পাবেন। তাদের চাকরি বদলিযোগ্য নয়।