জাহিদ রিপন, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ
ছয় ভেন্টের জীর্ণদশার স্লুইসসহ চলাচলের বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কলাপাড়ার সঙ্গে তালতলীর তিনটি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্লুইস সংলগ্ন কচুপাত্রা নদীর দুই পাড়ের অন্তত ৫০ হাজার কৃষক কৃষিকাজ নিয়ে পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তায়।
এ ছাড়া বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে নুরমোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কাঠালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গাজীপাড়া মাদরাসাসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থীর লেখাপড়া। বিচ্ছিন্নের শঙ্কা রয়েছে তালতলী উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া, বগী ও কড়ইবাড়িয়ার সঙ্গে কলাপাড়ার চাকামইয়া ইউনিয়নসহ উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৯৬৫ সালের দিকে নির্মিত এ স্লুইসটির বর্তমানে জীর্ণদশার যেন শেষ নেই। ছয় ভেন্টের স্লুইসটির দুই দিকের মূল পিলারের পলেস্তরা খসে খসে পড়ছে। রডগুলো জং ধরে বেরিয়ে গেছে। কপাটগুলো লোনা পানিতে নষ্ট হয়ে আছে। গেট থাকলেও খোলা। অনবরত লোনা পানি ওঠানামা করছে।
এ ছাড়া সামনের দুই দিকের গাইড ওয়াল অনেক আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দুই দিকের নিরাপত্তা রেলিং ভেঙে উধাও হয়ে গেছে। পানি ওঠানামার সময় ঝাকুনি অনুভূত হয়। মনে হয় এই বুঝি ধসে পড়বে। প্রত্যেকটি গেটের উপরে ঝোলানো রয়েছে একটি করে বেহুন্দী জাল। যা পেতে মাছ ধরা হয়।
এখন স্লুইসটির কপাট খোলা থাকায় প্রাকৃতিকভাবে পানি ওঠানামা করছে। পানির প্রবল স্রোতের তোড়ে ভিতরের পশ্চিম পাশের বেড়িবাঁধের তিনটি পয়েন্টে প্রায় দুইশ’ মিটার বাঁধের টপসহ স্লোপ ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে। কাঠালপাড়া গ্রামের মসজিদটি এখন বিলীনের শঙ্কায় রয়েছে। চলাচলের খালের পাড়ের একমাত্র সড়কটিও বহু অংশে ভেঙে গেছে।
পানি উন্নয়নবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, কচুপাত্রা নদীর উপরে বাঁধ দিয়ে ১৯৬৫ সালে স্লুইসটি নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে কয়েকবার নামকাওয়াস্তে কপাট পাল্টানোসহ টুকিটাকি মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাপকভাবে সংস্কার করা হয়নি। ফলে বর্তমানে জরাজীর্ণের চরম পর্যায়ে পৌছেছে।
এলাকার লোকজন জানিয়েছে, এই স্লুইসটি পরিণত হয়েছে সোনার খনিতে। কপাটগুলোর সামনে জাল পেতে মাছ ধরে একটি মহলের দৈনিক আয় পাঁচ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়েছে অন্তত ৩০টি। মামলা হয়েছে অসংখ্য। যখন যারা ক্ষমতাসীন থাকেন তাদের দখলে থাকে স্লুইসটির নিয়ন্ত্রণ। স্লুইসটির নিয়ন্ত্রণ করে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে অনেকের। জানা গেছে, স্থানীয় জয়নাল এখন এই স্লুইসে জাল পেতে মাছ ধরছে।
এলাকাবাসীর দাবি এই স্লুইসটি ফের জরুরিভাবে নতুনভাবে নির্মাণ করা হোক। নাহলে বিধ্বস্ত হয়ে এলাকার ব্যাপক সর্বনাশ হয়ে যাবে। হাজার হাজার কৃষক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে। কৃষিকাজ ভেস্তে যাবে। লোনা পানিতে সব সয়লাব হয়ে যাবে। স্লুইসটির উপর দিয়ে তালতলীর সঙ্গে কলাপাড়ার সংযোগ সড়ক রয়েছে।
ষষ্ঠ শ্রেণির খায়রুল ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আল-আমিন জানায়, ‘ওয়াপদা রাস্তা ভাঙছে। মসজিদ ও টিউবওয়েল ভাইঙ্গা যাইতেছে।’
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানজিলা জানায়, ‘আঙ্গারপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে সে স্কুলে আসছে। স্লুইস ভাইঙ্গা গেলে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে।’
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী কনিকা জানায়, ‘চাউলাপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে স্কুলে আসতে হয়। রাস্তাসহ স্লুইস ভাঙলে সমস্যার শেষ থাকবে না।’
প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী জানান, স্লুইসটি যে কোনভাবে রক্ষা করতে না পারলে ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থার বড় সমস্যা হবে। স্কুলের অর্ধেক ছাত্র-ছাত্রীর চরম সমস্যা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, ৪৪ নম্বর পোল্ডারের সিক্স ভেন্টের এ স্লুইসটি মেরামতের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তবে এটি এখন আর মেরামত করে সচল রাখার অবস্থায় নেই। নতুন করে করতে অন্তত আট কোটি টাকা প্রয়োজন। আগামি এক-দেড় বছরে নতুন করে করার সম্ভাবনার কথা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি এই কর্মকর্তা। তবে তার কাছে এলাকার লোকজন নতুন করে স্লুইস ব্যবস্থাপনা কমিটি করার জন্য আবেদন করলে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে জানান।