Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৬ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এই শীতে কি বাংলাদেশে বরফ পড়বে?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারী ২০২৩, ০৭:০৫ PM
আপডেট: ১২ জানুয়ারী ২০২৩, ০৭:০৫ PM

bdmorning Image Preview


ডি সাইফ।। স্নো ফল বা তুষারপাত সাধারণত আমাদের মতো গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশে বিরল ঘটনাই। তুষারপাত হয়েছে কিনা তা জানার আগে তুষারপাত কি সেটা জেনে আসি আগে একটু৷

হুট করেই শহরে শীতের তীব্রতা অদ্ভুত মাত্রায় বেড়ে গেলো। আসে না, আসে না করে শীত যখন আসলো তখন একেবারে কাঁপিয়ে দিয়েই আসলো। গত কয়েকদিনের টানা শৈত্যপ্রবাহে জীবনযাত্রায় একরকমের আলস্য। সকালের ঘুম ভাঙ্গা শরীরটাকে লেপের নিচ থেকে উঠাতে ইচ্ছে করে না। মেঝেটাও এতো ঠান্ডা বরফের মতো হয়ে থাকে যে, পা ফেলতে ইচ্ছে করে না।

শহরে ঝিমুনি একটা ভাব, কেবল চায়ের দোকানগুলো সরগরম। বাতাসের ধার যেন বেড়ে গেছে বহুগুণ, মিহি পাতলা বাতাস শীতল করে জমিয়ে দেয় শরীর। চোখ ভিজে আসে, নাক দিয়ে জল গড়ানোর অবস্থা হয়।

ঢাকার শীতেই যেভাবে কাবু হয়ে গেছি, স্নোফল দেখার রোমান্টিকতা এই মুহুর্তে কল্পনা করতে একটু দুঃসাধ্য লাগছে। কিন্তু, এটা কল্পনা করছি, যে বাংলাদেশে যদি স্নোফল হতো কেমন হতো? আচ্ছা, বাংলাদেশে কি আসলে কখনো স্নোফল হয়েছে?

স্নো-ফল বা তুষারপাত সাধারণত আমাদের মতো গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশে বিরল ঘটনাই। তুষারপাত হয়েছে কিনা তা জানার আগে তুষারপাত কি সেটা জেনে আসি আগে একটু৷

শীতকালে তাপমাত্রা শুণ্যের নিচে নেমে গেলে মেঘ থেকে তুষার পতিত হয়, একে বলা হয় তুষারপাত। মেঘ থেকে নিসৃত জল বায়ুমন্ডলের উপরের স্তরে নিম্ন তাপমাত্রায় জমে বরফে পরিণত হয়, সেটাই ভূমিতে ঝরে তুষাররুপে।

চারিদিক বেলা বাড়লেও কেমন পাতলা কুয়াশার আস্তরনে ছেয়ে থাকে। মুঠোফোনের আবহাওয়ার সংবাদে দেখি ১৬/১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা শহরে। তাতেই এমন কাঁপুনি। উত্তরবঙ্গের কি অবস্থা তাহলে তা ভেবেই তো শরীর শিউরে উঠে। অবশ্য, সৌখিন মানুষরা এই শীতের আলস্যমাখা দিনে ভ্রমণে বের হয় আরো শীতল কোনো জায়গায়। কেউ সিক্কিম, দার্জিলিং, সিমলা, মানালি, কাশ্মীরে যায় স্নোফল দেখতে। বাজেট যাদের বেশি আরো তারা আরো দূরের কোনো শীতপ্রধান দেশে বেড়াতে যায়।

মজার ব্যাপার হলো, বৃষ্টি এবং তুষার একইভাবেই হয়। কেন আমাদের দেশে বৃষ্টি হয় এবং শীতপ্রধান দেশে তুষার হয়? মূল পার্থক্য তাপমাত্রা। তুষারকে বৃষ্টির কঠিন রুপ বলা যেতে পারে। যেসব দেশে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে অর্থাৎ শুণ্যের নিচে নেমে যায় সেখানে মেঘ থেকে তুষার পতিত হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের অদ্ভুত রুপ পৃথিবী দেখতে শুরু করছে। সম্প্রতি সবাইকে অবাক করে দিয়ে রাজস্থানের মতো মরুভূমি-প্রধান অঞ্চলেও তুষারপাত হয়েছে। যেখানে বছরে বৃষ্টির দেখা পাওয়ার ঘটনাও প্রায় হাতে গোনা যাবে সেখানেই কিনা এবার হলো তুষারপাত। যদিও প্রচলিত অর্থে এটাকে ঠিক স্নোফল বলা যায় না। শিলাবৃষ্টি রুপে সেখানে এতো বেশি পরিমাণে বরফ ঝরেছে যে চারদিক সাদা হয়ে যায়। আবহাওয়াবিদরা রাজস্থানের এই প্রকৃতিবিরুদ্ধ রুপে কিছুটা উদ্বিগ্ন। যদিও রাজস্থানবাসী এই বরফ ঝরে পড়াটাকে বেশ উপভোগই করছে।

বাংলাদেশের কথা বলা যাক। বাংলাদেশের ইতিহাসে কি কখন স্নোফল ঘটার ঘটনা ঘটেছে? বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কখনো স্নোফলের ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায় নি কখনো। গতবছর বাংলাদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। ইতিহাসের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় তেতুলিয়ায়, জানুয়ারির ৮ তারিখে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

তবে, এখন আবহাওয়া বিরুপ হয়ে পড়ছে দিনে দিনে। শীত আসছে দেরিতে, যখন আসছে তখন বিস্ময়কর আচরণ করছে। রাজস্থানে ঘটনাকে মাথায় রাখলে বলতে হয়, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে স্নো-ফল হলেও হতে পারে কিন্তু তা যে খুব সুখকর অভিজ্ঞতা হবে আমাদের জন্যে এমন না। আমাদের দেশের অসংখ্য মানুষ খোলা আকাশের নিচে বাস করে। তাদের পরিণতি হবে করুণ।

তাছাড়া, শীতকে মোকাবেলা করার অস্ত্র বড় গতানুগতিক আমাদের দেশে। শীতপ্রধান দেশের মতো করে যদি কখনো স্নোফল শুরু হয়েই যায়, তাহলে সেই শীত মোকাবেলা করাটা বেশ কঠিনই হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশে যদি স্নো-ফল হয়, তা হবে বিশাল ঘটনা, জলবায়ু সংকটের তীব্রতর সীমায় পৌঁছে যাওয়ায় এক ইঙ্গিত। 

Bootstrap Image Preview