Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

নিজের বিয়ে কি নিজে পড়ানো যায়?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৪২ PM
আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৪২ PM

bdmorning Image Preview


নিজের বিয়ে নিজে পড়ানো বলতে যদি বিয়ের খুতবা পড়া বুঝিয়ে থাকেন তাহলে তার উত্তর হলো— হ্যাঁ, নিজের বিয়ের খুতবা নিজে পড়া যায় এতে কোন সমস্যা নেই৷ আর এর যোগ্যতা হলো আরবি শুদ্ধভাবে পড়তে পারা৷  তবে অনেক সময় দেখা যায়, কাউকে না জানিয়ে শুধু ছেলে ও মেয়ে নিজেরা একে অপরকে পছন্দ করে বিয়ে করে ফেলে। আর এসব বিয়েতে থাকে না কোনো সাক্ষী। সেক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে বলে থাকে যে, আমরা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে দু’জনে বিয়ে করেছি। প্রশ্ন হলো- কাউকে না জানিয়ে ছেলে এবং মেয়ে দু’জনে মিলে শুধু আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করলে, সে বিয়ে কি সংগঠিত হবেকিংবা তা কি বৈধ হবেএ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনাই বা কী?

 

না, আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করলে তা সংগঠিত হবে না। ইসলামের দিকনির্দেশনা হচ্ছে বিয়ের জন্য সাক্ষী শর্ত।  সাক্ষী ছাড়া বিয়ে সংগঠিত হবে না। আর বিয়ে হলেও তা বৈধ হবে না। হাদিসে এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনতারা হল ব্যভিচারিনী- যারা সাক্ষী ছাড়া নিজেরাই নিজেদের বিবাহ করে নেয়।’ (তিরমিজি)

সময়ের গতিধারায় অনেক কিছুই বদলেছে। বর্তমান সময়ে অনেকে বিরাট আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিয়ে শাদি করে থাকেন। আবার অনেকে কোর্ট ম্যারেজসহ নানা ধরনের স্বল্পপরিসর বিয়ের আয়োজন করে থাকে। তবে কোনো নারী ও পুরুষ সাক্ষী ছাড়া শুধু আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করলে, সে বিয়ে সংঘটিত হবে না।

কেননা বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যক ও ন্যূনতম শর্ত হলো-

- দুই জন প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন ও সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী পুরুষ অথবা

- একজন প্রাপ্তবয়স্ক, স্বাধীন ও সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী পুরুষ ও দুইজন নারী।

এসব পুরুষ ও নারী বিয়ের ইজাব (প্রস্তাব) ও কবুল (গ্রহণ) করার বিষয়টি বর-কনের মুখ থেকে নিজ নিজ কানে শুনবে। আর এর মাধ্যমেই ছেলে-মেয়ের বিয়ের বন্ধন বৈধ হবে। (বাহরুর রায়েক, দুররুল মুখতার, ফাতহুল কাদির, হেদায়া)

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘অভিভাবক ছাড়া বিয়ে সংঘটিত হয় না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১০১; আবু দাউদ, হাদিস : ২০৮৩)

এর কারণ হলো, পারিবারিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে পরিবারের সদস্যদের অভিমত ও বংশীয় মর্যাদা পারিবারিক বন্ধনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আবার অভিভাবকহীন বিয়েতে কখনো কখনো ‘কুফু’ (সমতা) রক্ষা হয় না। সে ক্ষেত্রে বংশের অপমান হয়। তাই অভিভাবকদের এ ক্ষেত্রে কিছু অধিকার দেওয়া হয়েছে।

আর অভিভাবকহীন বিয়ে বা গোপন বিয়ে অসামাজিক ও অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ কাজ। এ জন্য বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা ইসলাম পছন্দ করে না। তাই ইসলামের নির্দেশনা হলো, ‘বিয়ে করবে ঘোষণা দিয়ে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৪/৫)

এতদসত্ত্বেও যদি কেউ অন্যায় লালসায় তাড়িত হয়ে কমপক্ষে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে করেই ফেলে, তাহলে যদিও শরিয়তের দৃষ্টিতে বিশেষ বিবেচনায় বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে তা সম্পূর্ণ অনুচিত হবে। 

কারণ বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার শর্ত হল শরীয়তের মুকাল্লাফ (যাদের উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়) এমন দুইজন স্বাধীন পুরুষ সাক্ষী বা একজন স্বাধীন পুরুষ ও দুইজন নারী সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল  বলার উভয় বক্তব্য নিজ কানে উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ দুররুল মুখতার-৩/৯, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮)

তাই এ ধরনের বিয়ে নিন্দনীয় হলেও গোপনে বিয়ে করে ফেললে বিয়ে হয়ে যাবে, তখন এই বন্ধন রক্ষা করতে হবে। কেননা বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়, বরং এটি নারী-পুরুষের সারা জীবনের পবিত্র বন্ধন। তাই গোপনে বিয়ে করে ফেললেও তালাকের পথে পা বাড়াবে না।

কেউ গোপনে বিয়ে করে ফেললে মা-বাবার সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা জরুরি। তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে যে অভিভাবককে না জানিয়ে যে বিয়ে করেছে, তার শাস্তি সে পেতে পারে, তার স্ত্রী নয়। এর প্রতিকার হিসেবে তালাকের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে তা হবে আরেকটি অন্যায়।

অবশ্য যদি ‘কুফু’ (সমতা) রক্ষা না হয় বা অভিভাবক মারাত্মক কোনো সমস্যা দেখেন, তাহলে তারা সন্তানকে বিবাহবিচ্ছেদের কথা বলার অধিকার রাখে। এক্ষেত্রে যদি তারা তালাকের কথা বলে, তাহলে দেখতে হবে, তাদের কথা সঠিক ও যুক্তিসংগত কি না? 

যদি অভিভাবকের কথা সঠিক ও যুক্তিসংগত হয় এবং সে কারণে তালাক ছাড়া আর কোনো পথ বাকি না থাকে, পাশাপাশি যদি তালাক দেওয়ার দ্বারা তার ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকে, তাহলে মা-বাবার সন্তুষ্টির জন্য স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাবে।

পক্ষান্তরে তালাকের কারণ যদি যৌক্তিক না হয়, তাহলে তালাক দেওয়া জায়েজ হবে না।  (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৪৭১২, আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৩৮)

সুতরাং আখেরাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ করে গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে এবং প্রয়োজনে অভিভাবকদের জানিয়ে তাদের পরামর্শক্রমেই বিয়ে করতে হবে। দায় দায়িত্বহীনভাবে গোপনে বিয়ে করা শরিয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় নয়।

Bootstrap Image Preview