Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

একদিকে আলোচনা পুলিশ ও বিএনপি, অন্যদিকে বিশেষ অভিযানে চলছে ধরপাকড়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৫০ AM
আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১১:৫০ AM

bdmorning Image Preview


ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের স্থান নিয়ে জট কাটেনি এখনো। এ নিয়ে জটিলতা নিরসনে আবারও আলোচনা শুরু করেছে পুলিশ ও বিএনপি। গতকাল বিকেলে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে দেখা করেছে। সেখানে প্রাথমিক আলোচনায় সমাবেশের স্থান ঠিক করতে পুলিশ ও বিএনপির দুজন প্রতিনিধিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই দুই প্রতিনিধি আলোচনা সাপেক্ষে সমাবেশের স্থান ঠিক করবেন বলে জানা গেছে।

বিশেষ অভিযানে নেমে পুলিশ গত দুই দিনে ২ হাজার ৫৭৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযান পরিচালনা করেছে ৩ হাজার ৫৪৩টি।মামলা হয়েছে ৭৩৩টি। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে বিএনপির দাবি, গত ৩০ নভেম্বর রাত থেকে গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত দলটির ১ হাজার ৩১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ অধিদপ্তরের মুখপাত্র, সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মিডিয়া মনজুর রহমান জানিয়েছেন, পলাতক ও পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের ধরতেই দেশব্যাপী অভিযান হয়েছে। শনিবার ১২টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ১ হাজার ৩২১টি অভিযানে ১ হাজার ৩৫৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। যদিও বিএনপি বলছে, তাদের সমাবেশ সামনে রেখেই এ অভিযানে নেমেছে পুলিশ।

সমাবেশের স্থান নিয়ে আলোচনা করতে পুলিশের সঙ্গে গতকালের বৈঠকে অংশ নেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও আব্দুস সালাম, দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটু। সেই বৈঠকে বিএনপির পক্ষে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি এবং পুলিশের পক্ষে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খানকে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় সমাবেশের স্থান নিয়ে কথা হয়েছে। বিএনপি বরাবরের মতোই নয়াপল্টনে সমাবেশ করার পক্ষে জোর দিয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ‘অনিরাপদ’ দাবি করে সেখানে সমাবেশ করতে অনাগ্রহের কথা জানিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনারকে বলেছি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে আমরা অনিরাপদ মনে করছি।’ আজ সোমবার ডিএমপি প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।

নয়াপল্টনের বিকল্প কোনো চিন্তা বিএনপির আছে কি না—জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, এখনো এ বিষয়ে কোনো কিছু ঠিক করা হয়নি। আলোচনা চলছে। বিএনপি ও পুলিশের প্রতিনিধি কাজ করছেন। সব বিবেচনায় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এটা ঠিক করা হবে।

গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব এলে বিবেচনা: গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাবেশের স্থান প্রসঙ্গে বলেন, নয়াপল্টনের বিকল্প হিসেবে সরকারের তরফে গ্রহণযোগ্য কোনো প্রস্তাব এলে বিবেচনা করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারসহ মামলা-হামলাসহ নানা নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে পারি, ঢাকার সমাবেশ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ হবে। আমরা বিগত দিনে ৯টি গণসমাবেশ করেছি। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে।’ সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘অযথা এটাকে (গণসমাবেশ) ভিন্ন খাতে নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করবেন না। এখানে যদি কোনো নাশকতা হয়, সেটা সরকার করবে এবং তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১-১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা নতুন অভিযান শুরু করেছে। ১০ তারিখের সমাবেশকে কেন্দ্র করেই যে এটা শুরু হয়েছে, মানুষ সেটা বোঝে।’ 

রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৪৭২: রাজধানীতে ডিএমপির বিশেষ অভিযানে ৪৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, শনিবার রাত থেকে রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, মেস, বাসাবাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে তল্লাশিচৌকি বসানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনের সামনে বাড়তি যে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, তা আমাদের নিয়মিত ডিউটির অংশ।’

এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিএনপির ১৫ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। রাতে উপপরিদর্শক শামীম হোসেন বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলাটি করেন।

এদিকে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘১০ তারিখ বিএনপির সমাবেশে কোনো অসাধু চক্র, মানে তৃতীয় পক্ষ কোনো ধরনের সমস্যা যেন না করতে না পারে, সে জন্য আমরা কাজ করছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, সমাবেশের আগে সমাবেশস্থলে এসে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জড়ো হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

গত ২৯ নভেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের অপারেশনস শাখার পাঠানো এক আদেশে দেশের সব পুলিশ ইউনিটের প্রধান ও সব জেলার পুলিশ সুপারদের ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অভিযান চালাতে বলা হয়েছিল।

পুলিশের টার্গেট বড় নেতা: বিএনপির যেসব নেতার ডাকে সমাবেশে শত শত কর্মী আসেন, এমন বড় কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তার করতে মাঠে নেমেছে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।ডিবির একটি সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশ কয়েকজন নেতার বাসায় গিয়ে তাঁদের খুঁজে এসেছেন। তবে তাঁদের বাসায় পাওয়া যায়নি। 

টুকু জেলে, নিপুণের বিরুদ্ধে পরোয়ানা: পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার এক মামলায় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর এই পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। রমনা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে এই মামলা করেন।

আরেক মামলায় সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ সাতজনকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে নেওয়া অন্যরা হলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, যুবদল কর্মী মোখলেস মিয়া, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোশারফ হোসেন খোকন, লালবাগ থানা বিএনপির আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন রানা, একই থানার যুগ্ম আহ্বায়ক জজ মিয়া ও সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বাঁধন।

মামলার আসামিদের নাম না থাকা সত্ত্বেও হয়রানির উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি আইনজীবীদের। তাঁরা বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ বাতিল করার জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। 

দেশব্যাপী মামলা ও গ্রেপ্তার: দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মামলা ও গ্রেপ্তারের তথ্য পাঠিয়েছেন। ঝালকাঠির নলছিটিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর ককটেল হামলার অভিযোগে উপজেলা বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকসহ ৭৯ জনের নামে বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। শনিবার রাতে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জুয়েল খান বাদী হয়ে নলছিটি থানায় মামলাটি করেন।

নলছিটি থানার ওসি মো. আতাউর রহমান বলেন, মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জে নাশকতা মামলার বিএনপির আরও তিন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক দেবাশীষ কুণ্ডু বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে এ মামলা করেন। এর আগে ২৭ নভেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপের অভিযোগে বিএনপির ৩৯ জন নেতা-কর্মীর নামে আরেকটি মামলা করেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সানোয়ার হোসেন।

চুয়াডাঙ্গায় বিএনপির ৪ নেতাসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই সময় পাঁচটি ককটেল ও বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়। কিশোরগঞ্জে গ্রেপ্তার-আতঙ্কে রয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন মামলায় ২০ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, প্রতিটি ঘটনায় সম্পূর্ণ আইনসম্মত উপায়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। সাভারে ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল খুলনার কে ডি ঘোষ রোডের বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৬ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সূত্র: আজকের পত্রিকা 

Bootstrap Image Preview