Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৯ শুক্রবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

৩০০ কোটি টাকার জমি বিক্রি ৮৫ কোটিতে

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর ২০২২, ১১:৩৪ AM
আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২২, ১১:৩৪ AM

bdmorning Image Preview
প্রতীকী


সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের অন্ধকারে রেখে প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা মূল্যের জমি মাত্র ৮৫ কোটি টাকায় বিক্রি করেছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি আশরাফ টেক্সটাইল মিলস। ২০০৬ সালে এ বিক্রির ঘটনায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবিরও সায় ছিল। ওই জমি বিক্রির টাকা কখন, কী কাজে খরচ করেছে- তার কোনো সদুত্তর নেই কোম্পানির কাছে। এ অবস্থায় পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক ওহিদুল ইসলামকে প্রধান করে গঠন করা তদন্ত কমিটির অপর সদস্য হলেন এ সংস্থারই সহকারী পরিচালক মো. মাহমুদুর রহমান। ডিএসইকে সিনিয়র পর্যায়ের এক কর্মকর্তাকেও কমিটিতে যুক্ত করতে আদেশ দিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসির কর্মকর্তারা জানান, ২০০৬ সালের ১৬ জানুয়ারি পরিচালনা পর্ষদ সভা করে কোম্পানিটি কিছু ভবনসহ জমি বিক্রি করে কারখানা অন্যত্র স্থানান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিনই ইজিএম করে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। ওই ইজিএমে জমি বিক্রি এবং বিক্রির অর্থ কীভাবে খরচ করা হবে, সে বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের ধারণা দেওয়া হয়নি। তারপরও একক সর্বোচ্চ শেয়ারহোল্ডার হিসেবে আইসিবি প্রতিনিধি জমি বিক্রির এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। কোম্পানিটির দাবি, ইজিএমে ১ হাজার ৩৬২ শেয়ারহোল্ডার উপস্থিত ছিলেন। যদিও সে সময় এ বিষয়ে বিএসইসিকে কোনো তথ্য দেননি তাঁরা।

জানা গেছে, আইসিবির পক্ষে ওই ইজিএমে অংশ নেন প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক মো. ফায়েকুজ্জামান। পরে তিনি আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে যান। আশরাফ টেক্সটাইলের জমি বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, বয়স হয়েছে। এটা অনেক আগের ঘটনা, এখন কিছু মনে নেই। এ বিষয়ে আশরাফ টেক্সটাইলের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

আশরাফ টেক্সটাইল সংশ্নিষ্ট একজনের সূত্রে জানা গেছে, জমি বিক্রির পর সব যন্ত্রপাতিও বিক্রি করে এ কোম্পানি ২০০৬ সাল থেকে পুরোপুরি বন্ধ। কারখানা স্থলে গড়ে তোলা হয়েছে আশরাফ-সেতু শপিং কমপ্লেক্স। এই শপিং কমপ্লেক্সের এ আয় কার কাছে যায়, তার তথ্য মেলেনি। প্রায় দেড়যুগ ধরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়ার রেকর্ড নেই।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা জমির ক্রেতা ছিল পার্শ্ববর্তী শিল্পপ্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ইন্ডাস্ট্রিজ। পর্ষদ ও ইজিএমে অনুমোদনের পর প্রথমে ভবনসহ ৩২ বিঘা সাড়ে ১৬ কাঠা জমি মাত্র ৭৫ কোটি টাকায় এবং পরে আরও প্রায় সাড়ে ৯ বিঘা জমি ১০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়। টঙ্গীর শিল্প এলাকার ওই জমি প্রথমে বিঘা প্রতি মাত্র ২ কোটি ২৯ লাখ টাকায় বা কাঠা প্রতি সাড়ে ১১ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় দফায় কাঠা প্রতি মাত্র ৫ লাখ ৩২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। বিএসইসি মনে করছে, কম মূল্যে জমি বিক্রি করে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করেছেন সংশ্নিষ্টরা।

সূত্র জানায়, ওই জমি বিক্রির পর সব যন্ত্রপাতিও বিক্রি করে মালিকপক্ষ। এতে উৎপাদন বন্ধ হয়। এ বিষয়ে কোম্পানিটি কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেনি। জমি বিক্রির টাকা থেকে ব্যাংক ঋণসহ কিছু দায়দেনা শোধ করে অন্যত্র কারখানা স্থানান্তরের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু ব্যাংক ঋণসহ মোট প্রায় ২৮ কোটি টাকার দায় শোধ করে আর কিছু করা হয়নি। অন্যত্র জমি কেনা বা কারখানা স্থাপন হয়নি। এখনও আশরাফ টেক্সটাইলের প্রায় ২৪ বিঘা জমি রয়েছে। বর্তমানে এ কোম্পানি পরিশোধিত মূলধন সাড়ে ১০ কোটি টাকা, যার প্রায় ৭৫ শতাংশের মালিক সাধারণ শেয়ারহোল্ডার।

সূত্রঃ সমকাল 

Bootstrap Image Preview