Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৬ শুক্রবার, ডিসেম্বার ২০২৪ | ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

একসময় টয়লেটের দরজা লাগাতে পারেননি, এখন তিনি আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক

এমিলিয়ানো মার্তিনেসের জীবন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২২, ০৪:৪০ PM
আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২২, ০৪:৫১ PM

bdmorning Image Preview


ক্যালেন্ডারের পাতায় এমিলিয়ানো মার্তিনেস দাগ কেটে রেখেছেন হয়তো তারিখটা- ২২ নভেম্বর, ২০২২। বিশ্বকাপে সেদিন সৌদি আরবের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা, মার্তিনেসের হবে স্বপ্নপূরণ।

৮০ হাজার দর্শকের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি আরও একবার দেখবেন তিনি।  

‘নিজেকে তখন বলবো, আমি করতে পেরেছি’ জাতীয় দলের হয়ে আরেকটি বড় আসরে প্রতিনিধিত্ব করার আগে এমনই বলছিলেন মার্তিনেস। প্রথম বিশ্বকাপও খেলতে যাচ্ছেন তিনি। নিজের শো-কেসে আরেকটি শিরোপা জেতাতে মরিয়া ভাবও স্পষ্ট হয়েছে পরের কথায়।  

‘আমরা ওখানে শিরোপা জিততেই যাচ্ছি’ গত বছর আর্জেন্টিনাকে কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতানো গোলরক্ষক বলছিলেন, ‘এটা হবে আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ। ’

‘হয়তো আমি যখন জাতীয় সঙ্গীত শুনবো, চোখে জল জমা হবে। আমি আর্জেন্টাইন হয়ে অনেক বেশি গর্বিত। নিজের, পরিবারের জন্য দিনটি হবে ভীষণ গর্বের। ’

কঠিন এক বছর কাটিয়ে এসেছেন। বাবা আলবার্তো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখন তিনি অনেকটুকুই সুস্থ। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে বাবার মুখ দেখতে চান মার্তিনেস, ‘প্রথম ম্যাচের জন্য যখন জাতীয় সঙ্গীত গাইবো, বাবার মুখটা দেখতে চাই। উনি থাকবেন, এটা হবে অসাধারণ এক ব্যাপার। ’

গত বছর আবেগের এক সময়ই পাড় করেছেন মার্তিনেস। অ্যাস্টন ভিলার ম্যাচের ফাঁকে ফাঁকে ছুটে গেছেন আর্জেন্টিনায়, বাবাকে দেখতে, ‘আমার জন্য সময়গুলো কঠিন ছিল। পুরো মৌসুম আমাকে ভ্রমণ করে আর্জেন্টিনায় যেতে হয়েছে বাবাকে দেখতে। সত্যিই কঠিন ব্যাপার ছিল। ’

মার্তিনেসের জন্য বিশ্বকাপ কতটা বিশেষ? এটা খুঁজতে হলে আপনাকে চলে যেতে হবে তার ছোটবেলায়। বুইন্স আইরেসের দক্ষিণে মার ডেল প্লাটা নামে একটা জায়গায় বেড়ে উঠেছেন। আর্থিক সামর্থ্যের অভাবে বাবা-মা লাগাতে পারেননি বাথরুমের দরজাও।  

প্রতি বেলায় খাবার পাওয়ার নিশ্চয়তা ছিল না। পাওয়া গেলেও সবার ভাগে জুটতো না। মার্তিনেস যখন ছোটবেলায় স্কুলে ছুটতেন, তখন তার মা যেতেন অন্য কারো অ্যাপার্টমেন্ট পরিষ্কার করতে। বাবা? কখনও কখনও ২০ ঘণ্টার বেশি ট্রাক চালাতেন মাছ ভর্তি করে।

১২ বছর বয়সে ইন্ডিপেন্ডেটের হয়ে খেলতে ঘর ছাড়নে মার্তিনেস। টাকার অভাবে তাকে তখন দেখতে যেতে পারতেন না বাবা-মা। ১৭ বছর বয়সে তাকে বিক্রি করা হয় আর্সেনালে- মার্তিনেস বুঝতে পারছিলেন এটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তবুও পরিবারের দিকে তাকিয়ে পিছু হেঁটে যাননি। তাকে বিক্রির ওই টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছিলের মার্তিনেসের বাবা।

ইংল্যান্ডে এসে দ্রুত ইংরেজি শেখেন, বুঝতে পারছিলেন সাফল্য পাওয়ার একমাত্র উপায় এটি। এরপর আর টাকার জন্য কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে, ‘‘যখন লন্ডনে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম, আমার মা সুসানা ও ভাই আলেহান্দ্রো কান্না করতে করতে বলেছিল, ‘যেও না। ’ কিন্তু আমি আমার বাবাকেও রাতে কাঁদতে দেখেছি বিল না দিতে পেরে। তাই যখন আর্সেনাল আমাকে কেনার অফার করলো, আমাকে সাহসী হতে হতো। আমার বয়স তখন কেবল ১৭ আর আমি ‘হ্যাঁ’ বলেছিলাম বাবা-মায়ের ভালোর জন্য। ’’

ইংল্যান্ডের জীবনও বেশ কঠিনই কেটেছে মার্তিনেসের। অক্সফোর্ড ইউনাইটেড, শেফিল্ড ওয়েটনেসডে, রোথারাম ইউনাইটেড, ওলভস, রিডিং, স্পেনের গেতাফে- ধারে খেলতেই ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রায় পুরো সময়। মাঝেমধ্যে আর্সেনালের হয়ে কাপ ম্যাচে খেলেছেন, এরপর ২০১৯-২০ মৌসুমে ব্রেন্ড লেনোর ইনজুরিতে সুযোগ পেয়ে যান। ওই বছর পরের ১১ ম্যাচ খেলে আর্সেনালের এফএ কাপ জয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এর কয়েক সপ্তাহেই চলে আসেন ভিলায়।

ক্লাবের চেয়েও অবশ্য মার্তিনেসকে বেশি পরিচিতি এনে দিয়েছে জাতীয় দল। আর্জেন্টিনার জন্য তিনিও নিবেদিত প্রমাণ। গত সপ্তাহেই যেমন ২-১ এ ব্রাইটনকে হারিয়েছে তার ক্লাব অ্যাস্টন ভিলা। এরপর সতীর্থ মাতি কেশ ও জন বেডনারেক বলেছিলেন, ‘দেখো, তুমি বিশ্বকাপে আছো। ’

তারা দুজন আবার পোল্যান্ডের। যাদের সঙ্গে বিশ্বকাপে একই গ্রুপে পড়েছে আর্জেন্টিনা। এরপর মার্তিনেস সতর্কই করে দিয়েছেন তাদের, ‘তোমার ইচ্ছের ব্যাপারে সতর্ক থেকো। ’ ওই কথার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা সতীর্থ কিন্তু যখন তাদের বিপক্ষে খেলবো, আমি যুদ্ধে আছি এমন ভেবে নেবো। ’

তাহলে কি ১৯৮৬ সালের পর আরও একটি শিরোপা জিততে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা? মার্তিনেস বলছেন এমন, ‘পৃথিবীর সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি আমাদের আছে। তো অবশ্যই সুযোগ আছে। ৩৫ ম্যাচ হারিনি। আত্মবিশ্বাস আর দুটি শিরোপা সঙ্গী করে যাচ্ছি। আমরা লড়তে পারি, খেলতেও। ’

*দ্য অ্যাথলেটিক থেকে অনূদিত

Bootstrap Image Preview