বউ শেয়ারিংয়ের মতো বিকৃত যৌনাচারে মেতে উঠেছিলেন চার পুরুষ। নিজেরা স্ত্রীদের সঙ্গে ‘ফ্যান্টাসি’তে মেতে তা অন্য পুরুষদের সঙ্গে শেয়ার করতেন। তারা যেন তাদের নিজেদের পার্টনারকে যৌনতায় উদ্বুদ্ধ করেন, তাদেরকে ধর্ষণ করেন- এমনভাবে প্রলুব্ধ করার জন্য তারা এ কাজ করতো।
এ অভিযোগে বুধবার সিঙ্গাপুরের একজন বিচারক তাদেরকে সাড়ে ১৩ বছর থেকে ২২ বছর পর্যন্ত জেল দিয়েছে। দ্য স্ট্রেইটস টাইমস এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়, এই চক্রে জড়িত সাত জন পুরুষ। তার মধ্যে চার জন তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে যৌনাচারে মেতে উঠতো এবং তা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করতো। এ অভিযোগে তাদের প্রত্যেককে ২০ ঘা করে বেত্রাঘাতের আদেশ দেয়া হয়েছে। তবে একজনের বয়স ৫০ বছরের বেশি হওয়ায় সে বেত্রাঘাতের শাস্তি থেকে রেহাই পেয়েছে। বিচারক পাং খাং চাউ ওই চার পুরুষের বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা করে বলেন- আদালতের সামনে আসা যৌনতা বিষয়ক সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং নৃশংস ঘটনাগুলোর অন্যতম এই ঘটনা।
শাস্তি পাওয়া চার পুরুষের মধ্যে তিন জন হলো ইংরেজি আদ্যক্ষর ‘কো’ (৪৫), ‘এল’ (৫৩) এবং ‘এম’ (৪৫)।
তারা অন্য পুরুষদেরকে নিজেদের পার্টনারের নাগাল পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতো। এরপর ওইসব ব্যক্তি যখন তাদেরকে ধর্ষণ করতো তারা তা বসে বসে দেখতো। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নারীর মত নেয়া হতো না। এই তিন ব্যক্তি ‘এন’ (৩৭) নামের অবিবাহিত যুবক অন্যদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করতো। তারা ‘জে’কে (৪১) তার স্ত্রীকে ধর্ষণে ষড়যন্ত্র করতো। এমন কুরুচিপূর্ণ কর্মকাণ্ডে ‘জে’ ২০১২ থেকে ১০১৩ সালের মধ্যে ‘কে’-এর স্ত্রীকে তিনবার ধর্ষণ করে। অন্যদিকে ২০১৮ সালে ‘এম’-এর সাবেক স্ত্রীকে ধর্ষণ করে ‘জো’। এসব ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করে ‘কে’ এবং ‘এম’। তারা এসব ছবি ও ভিডিও অন্য পুরুষদের সঙ্গে শেয়ার করে।
২০১৭ সালে ‘এল’-এর স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে যায় ‘এল’-এর সহকর্মী ‘পি’। কিন্তু এর আগেই ওই নারী চেতনা ফিরে পান। ২০১০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৫ জন পুরুষ ‘জে’-এর স্ত্রীকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করে। আদালতে এখনো বিচারের অপেক্ষায় আছে ‘জে’-এর মামলা। তাদের একের সঙ্গে অন্যের সাক্ষাৎ হয় একটি অনলাইন ফোরামে। এই ফোরাম এবং অন্য প্ল্যাটফরমগুলোতে যৌনসঙ্গী বিনিময় করার মানুষ খোঁজা হয়। একই সঙ্গে স্ত্রীদের অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা হয়। এতে যারা যোগ দেয় তারা প্রাইভেট বা গ্রুপ পর্যায়ে চ্যাটিংয়ে স্ত্রীদের শেয়ার করার বিষয়ে আলোচনা করে। এ ছাড়া তাদের যৌন জীবন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। শেয়ার করে স্ত্রী বা পার্টনারের ছবি ও ভিডিও।
একে অন্যের স্ত্রীকে ধর্ষণের ষড়যন্ত্র করা ছাড়াও ‘জে’ এবং ‘কে’ প্রত্যেকেই নিজেদের স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের সময় গোপনীয়ভাবে তা অন্য ব্যবহারকারীদের সঙ্গে শেয়ার করে। ২০২০ সালের ১লা জানুয়ারি ‘জে’-এর স্ত্রী তার স্বামীর মোবাইলে নিজের রগরগে প্রচুর ছবি আবিষ্কার করেন। তিনি দেখতে পান তার স্বামী এবং ‘কো’ স্ত্রীদের বিনিময় করছেন। বুধবার এসব অপরাধের কারণে ‘কে’কে ২০ ঘা বেত্রাঘাতসহ ২২ বছরের জেল দিয়েছে আদালত। সে একজন ব্যবসায়ী। নিজের স্ত্রীর ওপর ২০১২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনবার ঘুমের ওষুধ প্রয়োগ করে। প্রতিবার তার স্ত্রী অচেতন হয়ে যাওয়ার পর ‘জে’ তাকে ধর্ষণ করে। প্রতিদান হিসেবে ‘জে’-এর অচেতন স্ত্রীকে নিজের ফ্ল্যাটে অচেতন অবস্থায় ধর্ষণে ‘কে’কে সহায়তা করে জে। একে অন্যের স্ত্রীকে ধর্ষণ করার পর তারা যা করেছে তা নিয়ে চ্যাটিং করে।
‘জে’-এর স্ত্রী বলেছেন, তিনি প্রচণ্ড বেদনাহত। ক্ষুব্ধ, হতাশ। তার সঙ্গে যে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে তাতে তিনি স্তব্ধ। তিনি এক সময় ভেবেছিলেন এর চেয়ে মৃত্যুও ভালো। সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে আরও অনেক ঘটনার সন্ধান পান। ‘কে’-এর স্ত্রীও একই রকম কথা বলেছেন। তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন এটা হয়তো শুধু তার সঙ্গে ঘটেছে। এসব অপরাধে ‘এল’কে সাড়ে ১৩ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। সে ২০১৩ সালে ‘জে’-এর স্ত্রী অচেতন থাকা অবস্থায় তাকে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন করেছে। ২০১৭ সালে ‘এল’ তার স্ত্রীকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং সহকর্মী ‘পি’কে আমন্ত্রণ জানায় তাকে ধর্ষণ করতে। তবে ‘পি’ এক্ষেত্রে সফল হয়নি। এ ঘটনায় জানুয়ারিতে তাকে তিন বছরের জেল দেয়া হয়েছে। ‘এম’ একটি কোম্পানির পরিচালক। তাকে ২০ ঘা বেত্রাঘাতসহ ২০ বছরের জেল দেয়া হয়েছে।