Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

যে কারণে রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দিলো বাংলাদেশ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২২, ১২:০৮ PM
আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২২, ১২:০৮ PM

bdmorning Image Preview


ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রুশ ফেডারেশনে যুক্ত করার নিন্দা করেছে জাতিসংঘ। এ নিয়ে সাধারণ পরিষদে রেকর্ড সংখ্যক ভোটে বুধবার একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশসহ ১৪৩টি দেশ ওই প্রস্তাবের পক্ষে আর রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। ইউক্রেনে আক্রমণের পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত কোনো নিন্দাসূচক প্রস্তাবে এই প্রথম ভোট দিলো বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ওই অবস্থান বদলের বিষয়ে জাতিসংঘকে একটি নোট অব এক্সপ্লানেশন বা ব্যাখ্যা দিয়েছেন নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত।

তিনি বলেন, যেকোনো দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে দ্বন্দ্ব নিরসন করতে জাতিসংঘ সনদে যা বলা হয়েছে; তা কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া সবসময় মেনে চলতে হবে, এটা বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ মনে করে, যেকোনো দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ডের ক্ষেত্রে বিশ্ব যে অবস্থান নিয়েছে, একই ধরনের অবস্থান ইসরাইলের বিরুদ্ধেও যেন নেয়া হয়। ইউক্রেনে চলমান সংকটের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন জানিয়ে তিনি বলেন, যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা কোনো দেশের জন্যই ভালো নয়।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, বাংলাদেশ মনে করে, দ্বন্দ্ব নিরসনের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সংলাপ ও কূটনীতি এবং এর মাধ্যমে যেকোনো ধরনের দ্বন্দ্ব নিরসন করতে হবে।

বাংলাদেশের অবস্থান বদল বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকও অভিন্ন মত পোষণ করেন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশ।

আমরা জাতিসংঘ চার্টারে বিশ্বাস করি। যেখানে বলা হয়েছে, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব এবং কারও বিষয়ে নাক না গলানো- এগুলো আমাদের মৌলিক নীতি। আমাদের মৌলিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় আমরা এর পক্ষে ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওই নীতির কোনো ধরনের ব্যত্যয় হলে আমরা এর প্রতিবাদ করে থাকি। শহীদুল হক বলেন, রাশিয়াকে নিন্দা জানিয়ে প্রথম রেজ্যুলেশনে আমরা ভোটদানে বিরত ছিলাম। কিন্তু আমরা অবস্থান পরিবর্তন করেছি। কোনো দেশভিত্তিক রেজ্যুলেশনে বাংলাদেশ সাধারণত ভোটদানে বিরত থাকে। অর্থাৎ যারা অভিযোগ করছে এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে- কোনো পক্ষই বাংলাদেশ সমর্থন করে না। ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি পূর্ণ সমর্থন করার পাশাপাশি রেজ্যুলেশনে অত্যন্ত শক্ত ভাষায় গণভোট আয়োজনের জন্য রাশিয়ার নিন্দা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ওই গণভোটকে বেআইনি ঘোষণা করা  হয়েছে। নন-বাউন্ডিং ওই রেজ্যুলেশনে সব দেশ, সংস্থা ও জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাগুলোকে ইউক্রেনের দখলকৃত জায়গার স্বীকৃতি না দেয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছে। রাশিয়াকে তার সব সিদ্ধান্ত বাতিল করা এবং ইউক্রেন থেকে মিলিটারি সরিয়ে নেয়ার জন্য দাবি জানিয়ে রেজ্যুলেশনে বলা হয়, ‘ওইসব সিদ্ধান্ত রাশিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি এবং জাতিসংঘ সনদের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’

ভারত ও চীন ভোটদানে বিরত, তাদের পথে হেঁটেছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা: তবে বরাবরের মতো ভারত ও চীন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর বৈশ্বিক আয়োজন থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছে, দেশ দুটিসহ মোট ৩৫টি সদস্য ভোটদানে বিরত ছিল। ওই তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কাও। তবে রাশিয়াসহ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া ও নিকারাগুয়া। ভোটদানে অনুপস্থিত ছিল মস্কোর মিত্র ইরানসহ ১০টি দেশ। সম্প্রতি ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, খোরাসন, লুহানস্ক ও জাপোরিঝিয়াতে গণভোটের মধ্যদিয়ে এগুলোকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে মস্কো।

এ গণভোট ও অন্তর্ভুক্তিকরণকে অবৈধ উল্লেখ করে আলবেনিয়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নিন্দা প্রস্তাবটি আনে। যাতে পূর্ণ সমর্থন ছিল পশ্চিমা বিশ্বের। উল্লেখ্য, দু’দিন আগেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি বাংলাদেশ। ওই রেজ্যুলেশনের ওপর ভোটাভুটির প্রক্রিয়া নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিতর্ক এবং ভোটে ভারতসহ অনেক দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও ভোটদানে বিরত ছিল বাংলাদেশ।

সোমবারের ভোটাভুটিতে জাতিসংঘের ১০৭টি সদস্য রাষ্ট্র মস্কোর দাবির বিরুদ্ধে রায় দিলেও নির্মোহ ওই প্রস্তাবেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাওয়ার ঝুঁকি নেয়নি ঢাকা। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে (বুধবার নিউ ইয়র্ক সময় বিকালে) পাস হওয়া মূল প্রস্তাবেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত ওই পলিটিক্যাল রেজ্যুলেশনে ইয়েস ভোট দিলো বাংলাদেশ। ঢাকার এই অবস্থান বদলকে রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন পেশাদাররা। অবশ্য কেউ কেউ এখানে নাটকীয়কতা দেখছেন,  কেউ বা পশ্চিমা চাপের কাছে নতি স্বীকার বলে সমালোচনা করছেন। স্মরণ করা যায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিতে মার্কিন প্রশাসনের জোর তদবির ছাড়াও বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি ফোন করে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছিলেন।

Bootstrap Image Preview