দুই বছর আগের এক যুদ্ধের পর আজারবাইজানের সামরিক বাহিনীর সাথে নতুন করে শুরু হওয়া ভয়াবহ সীমান্ত সংঘর্ষে আর্মেনিয়ার প্রায় অর্ধশত সৈন্য নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সীমান্তে সংঘাতে ওই সৈন্যদের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রতিবেশি আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানকে দ্রুত যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানো হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া।
মঙ্গলবার রাতে কয়েক ঘণ্টার ভয়াবহ সীমান্ত সংঘাতের পর বিশ্ব নেতাদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আর্মেনিয়া বলেছে, তাদের ভূখণ্ডে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে আজারবাইজানি বাহিনী।
সাবেক সোভিয়েত এ দুই রাষ্ট্র বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে ২০২০ সালে প্রাণঘাতী এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। দুই দেশের সৈন্যদের হামলা-পাল্টা হামলায় সেই যুদ্ধে উভয় পক্ষের সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ওই যুদ্ধের পর আর্মেনিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া নাগোরনো-কারাবাখে কয়েক হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন করে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেখান থেকে শান্তিরক্ষীদের পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছে মস্কো।
এদিকে, আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের সীমান্ত সংঘর্ষ থামাতে সফল হওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মস্কোর স্থানীয় সময় সময় সকাল ৯টা থেকে একটি যুদ্ধবিরতি সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা রাশিয়ার মধ্যস্থতায় একটি চুক্তিতে পৌঁছানো গেছে বলে আশা করছি... সংঘাত বৃদ্ধির এই ঘটনায় আমরা চরম উদ্বিগ্ন।
মঙ্গলবার সকালের দিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে টেলিফোন করে ‘আজারবাইজানের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের’ বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান।
বিশ্ব নেতাদের সাথে টেলিফোনে কথা বলার পর সংসদে দেওয়া ভাষণে আর্মেনীয় এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন পর্যন্ত আমাদের ৪৯ সৈন্য নিহত হয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো এই সংখ্যা চূড়ান্ত নয়। আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর দেশটিতে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে
বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলে নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান কয়েক দশক ধরে বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখণ্ডের ভেতরে অবস্থিত হলেও ১৯৯৪ সালের এক যুদ্ধের পর থেকে আর্মেনিয়ার সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয় বাহিনী ওই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করছে।
আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে এই ভূখণ্ড ঘিরে দুই দেশের মাঝে শুরু হওয়া যুদ্ধ রাশিয়ার মধ্যস্থতায় বন্ধ হয়। এরপর ওই অঞ্চলে প্রায় ২ হাজার শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে নাগোরনো-কারাবাখ এবং এর আশপাশের এলাকার বিশাল অংশের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয় আজারবাইজান। যা আগে আর্মেনিয়া-সমর্থিত বাসিন্দাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।