Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ বুধবার, ডিসেম্বার ২০২৪ | ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘মাইনসে খায় গোস্ত, হামরা খাই চামড়ি আর ঠ্যাং’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২২, ০৬:৫০ AM
আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২২, ০৬:৫০ AM

bdmorning Image Preview
প্রতীকী


‘হামরা খাই মুরগির ঠ্যাং আর চামড়া। খোস্ত খাওয়ার স্বাদ মেটাই চামড়ি আর ঠ্যাং দিয়া। দেশি ব্রয়লার আর সোনালী মুরগি কিনতে চাউলের দাম ফুড়ি যায়। সেই জন্যে গোস্ত খাওয়ার স্বাদ মেটাই ঠ্যাং আর চামড়ি দিয়া।’  গতকাল গাইবান্ধার মুরগির আড়তে গিয়ে এমন কথা শুনতে হয়েছে। শহরের মুন্সিপাড়ার প্রতিবন্ধী রোকেয়া বেগম। আগে কাজ করতেন বিভিন্ন মেস ও বাসাবাড়িতে। ষ্ট্রোক হওয়ার পর বেকার। নিজের কোনো জায়গা জমিও নেই। যখন হাত নেড়ে কাজ করতে পারতেন তখন অন্যের রান্না করে নিজের ভাগ্যেও দুই এক টুকরা জুটতো।  

রোকেয়া বেগম আফসোস করে বলেন, ‘অনেকদিন ধরে মাছ-গোস্ত জোটে না।

খুব ইচ্ছে করে দেশি মুরগির মাংশ খেতে। কিন্তু যে দাম বাবা। মুরগি আর গরুর গোস্ত বড় লোকের জন্য।  ছোট বোন যা দেয় তাই খাই। না দিলে নাই। তিনি বলেন, গত ঈদের দিন মাইনসের কাছে ভিক্ষা করি কয় টুকরা গোস্ত পাছোম। ওই খাওয়ায় হামার শেষ খাওয়া।’ মুরগি কাটার কারিগর জহুরুল আর জয়নাল বলেন, আগে বাজারে অনেক গরিব মানুষ চামড়া আর ঠ্যাং কেনার জন্য আসতো। দেখেন চাারিদিকে মুরগি আর মাংসহাটির চারদিকে গামলায় থরে থরে সাজানো মুরগির গিলা-কলিজা ,পা,গলা, চামরা, মাথা আর নাড়িভুরি। গরিব কাস্টমারও আসে কিন্তু দাম বৃদ্ধির কারণে কিনতে পারেনা। আফসোস করে ফিরে যায়। সবজির তো কাছেই যাওয়া যায়না। ব্রয়লার মুরগির দাম হাতের নাগালেই আছিল এখন দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় রোকেয়ার ভাত জোটে তো তরকারী জোটেনা। একই অবস্থা ময়না বেগম, ফুলুরানী, রেনুবালাসহ অনেক মানুষের। মুরগির ছেড়াকাটার কারিগর শামীম বলেন, ভাই কী যে হলো। মানুষ মুরগিও আর কিনতে পারছেনা। দিন আনা দিন খাওয়ার সংসারে এখন তারা মাছ-গোস্তের কথা ভাবতেই পারেনা। মুরগির দোকানি সোহেল মিয়া জানান, ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১শ ৪০ টাকা এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২শ’ টাকা। সোনালী মুরগির দাম ছিল ২শ’ ৪০ টাকা সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৮০ টাকা। দেশি মুরগি আর খাসি-গরুর মাংসের কথা বাদ। 

ফুলুরানী নিজের সন্তানদের মুখে একটু ভালো খাবার তুলে দিতে ২শ’ টাকা দেনা করে বাজারে এসেছিলেন। কিন্তু এ দামে কোনো মুরগি নাই। তাই বাধ্য হয়ে সস্তÍায় ১৫০ টাকা কেজিতে মুরগির চামড়া, পা ও গলা,গিলা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সেই গলাগিলা, পা ও চামড়ার দামও কেজিতে বেড়েছে ১শ’ টাকা। বেকায়দায় পড়েছেন চামড়া, ঠ্যাং আর গলা,গিলা  কিনতেও পারছেনা না অনেকেই। তারা এ দোকান সে দোকান ঘুরে ঘুরে দাম করছেন। রোকেয়া বেগমও গিয়েছিলেন মুরগির চামড়া, পা আর গলাগিলা কিনতে। এটাও কেনার সাধ্য তার নাই। তাই খালিহাতেই বাড়ি আসেন তিনি। বলেন, গোস্তাতো দূরের কথা, দেশি আর ব্রয়লার মুরগির মাংসতো দূরের কথা কয়দিন পর ভাতে জুটপে না। চমড়া ও ঠ্যাং বিক্রেতা জয়নাল মিয়া জানান, তারা প্রতিদিন মুরগির কাটাছেড়া করেন। তাতে তাদের ভালোই চলে। অতিরিক্ত লাভের মধ্যে গিলা কলিজা আর চামড়া বিক্রি।  

Bootstrap Image Preview