Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

ব্রয়লার মুরগি ২০০ ডিমের ডজন ১৫০

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০২২, ১০:০৩ AM
আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২২, ১০:০৩ AM

bdmorning Image Preview


কয়েক দিন ধরে ডলারের দাম বাড়ছে। ফলে আমদানিনির্ভর খাদ্যপণ্যের আমদানি কমেছে। এর মধ্যেই জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে সরকার। এ দুই কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে উত্তাপ আরও বেড়েছে। বাজারের আগুনে ছারখার ক্রেতারা। জ্বালানির দাম বাড়ার পর বড় ধাক্কা আসে নিত্যপণ্যের বাজারে। প্রথম ধাক্কা আসে সবজিতে। এক দিনের ব্যবধানে সব সবজির কেজিতে দাম বেড়ে যায় ১০ থেকে ২০ টাকা। এর দু-তিন দিন পর চাল, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ কয়েকটি খাদ্যপণ্যের দাম আরেক দফা বেড়ে যায়।

রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারে ক্রেতা কাজী আমিনুল ইসলামকে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এ প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করেন, 'কোন জিনিসের দাম বাড়েনি বলেন? আগে থেকেই সব জিনিসের দাম বাড়তি। সরকার ডিজেলের দাম আরও বাড়িয়ে দিল। এখন শুধু গরিব নয়, মধ্যবিত্তের ঢাকায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেছে।'

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গণপরিবহনের পাশাপাশি সড়ক, রেল ও নৌপথের বিভিন্ন পণ্যবাহী পরিবহনের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে কত হবে তা নির্ধারণ করা দরকার। ভাড়া নির্ধারিত না থাকায় পরিবহনগুলো নিজেদের মতো করে ভাড়া নিচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সব ধরনের পণ্যে।

চার-পাঁচ দিন আগে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। কেজিতে আরও ৪০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা। সোনালি জাতের মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। মাসখানেক আগেও ব্রয়লারের দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা।

অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা বা প্রায় ৪৫ শতাংশ।

কারওয়ান বাজারের নুরজাহান চিকেন ব্রয়লার হাউসের মালিক সামছুল হক বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে পিকআপ ভাড়া বেড়েছে। মুরগির খাদ্যের দাম বাড়তি কয়েক মাস ধরে। বাজারে অন্যান্য সব জিনিসের দামও বেড়েছে। এ কারণে মুরগির দাম বেড়েছে।

সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষ মাছ-মাংস কম কিনে পুষ্টির চাহিদা মেটান ডিম দিয়ে। ডিমের দামও বাড়ছে হুহু করে। মাসখানেক আগে এক ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। সর্বোচ্চ ২৫ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা দরে। এক মাসে দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ।

গত সপ্তাহে চিনির কেজি বিক্রি হয়েছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। পাঁচ থেকে ছয় টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা দরে। মালিবাগ বাজারের গাজী স্টোরের বিক্রয়কর্মী মো. রুবেল বলেন, পাইকারি পর্যায়ে চিনি কিনতে হয় ৮০ টাকা কেজি দরে। এরপর কিছু ঘাটতি থাকে। পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ হিসাব করলে ৮৫ টাকার কমে বিক্রি করা যায় না। এর মধ্যেই ডলারের দাম বাড়ায় চিনির দাম আরও বাড়ানোর জন্য সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে চিনি পরিশোধনকারী মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন।

সপ্তাহখানেক আগে দেশি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কেনা যেত। কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে এখন দেশি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ আর আমদানির পেঁয়াজে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। আরও ১০ টাকা বেড়ে দেশি রসুন ৭৫ থেকে ৮৫ এবং আমদানি করা রসুন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তেজকুনিপাড়া এলাকার পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। গাড়ি ভাড়াও বেড়েছে। বস্তা হিসাবে কেনার পর কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। সব মিলিয়ে ৫৫ টাকার কম বিক্রি করলে লোকসান দিতে হবে।

দাম স্থিতিশীল রাখতে চাল আমদানির অনুমতি, শুল্ক্ক হ্রাস, বাজারে অভিযানসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে তাতে খুব বেশি সুফল মেলেনি। সরকার ১০ লাখ টনের বেশি চাল আমদানির অনুমতি দিলেও আমদানি হয়েছে খুবই কম। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যমতে, এ পর্যন্ত মাত্র ১৯ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে বেসরকারিভাবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানিকারকরা চাল আমদানি করছেন না। ভারত থেকেই বেশি চাল আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ভারতের চালের রপ্তানি কমে যাওয়ায় সেখানে দাম কমে গেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি টন চালের দাম ৪ ডলার কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৩৬০ থেকে ৩৬৬ ডলারে। তবে দেশে চালের বাজার অস্থিতিশীল। বাজারে ৫৪ টাকার কমে কোনো চাল পাওয়া যাচ্ছে না।

মোটা চালের কেজি ৫৪ থেকে ৫৫, বিআর-২৮ জাতীয় চাল ৫৬ থেকে ৬০, মিনিকেট ৭০ থেকে ৭৪ এবং নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ৮ থেকে ১০ দিন আগে মোটা চালের কেজি ৪৬ থেকে ৫০, বিআর-২৮ জাতীয় চাল ৫০ থেকে ৫৫, মিনিকেট ৬৮ থেকে ৭২ এবং নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে এই কয়েক দিনে সর্বনিম্ন দুই থেকে সর্বোচ্চ ১৫ টাকা বেড়েছে চালের দাম। এ ছাড়া কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সব ধরনের পোলাও চালে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৬ শতাংশ। সংস্থাটির তথ্যে আরও দেখা যায়, ২৬টি পণ্যের মধ্যে ২৫টির দাম বেড়েছে। বাজারে কিছু ব্যবসায়ীকে ভোজ্যতেলে বাড়তি দাম নিতে দেখা গেছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় তেলের সংকটও দেখা গেছে।

কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানদার মো. মামুন বলেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি করা খাদ্যপণ্যগুলো কম আসছে। আর ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে সব জিনিসের ওপর প্রভাব পড়েছে। শুধু চাল-ডাল নয়, বাজারে নতুন করে যে পণ্য আসবে সেটারই খরচ বেশি পড়বে। দামও বাড়বে।

সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার পর এখন কিছুটা স্থিতিশীল হলেও কাঁচামরিচে স্বস্তি ফেরেনি। দাম কিছুটা কমলেও গতকালও প্রতি কেজি ২০০ টাকা বা তার বেশিতে বিক্রি হয়েছে।

মাছের বাজারও চড়া। সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি কেনেন পাঙাশ, কই ও তেলাপিয়া জাতীয় মাছ। কিন্তু এসব মাছের দামও বাড়তি। গড়ে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে এসব মাছের দাম। বাজারে এখন পাঙাশের কেজি ১৮০ থেকে ১৯০, তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২০০ এবং কই মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া রুই ও কাতলার কেজি আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। কোরবানির পর গরুর মাংসের কেজি কয়েক দিন ৭০০ টাকার নিচে নেমেছিল। বেশিরভাগ বাজারে ৬৫০ টাকায় কেনা গেছে। এখন ৭০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে বলা হয়েছে, অযৌক্তিক উপায়ে কেউ বেশি দাম নিলে তারা সেই বিষয়ে তদারকি করবে। এ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, সারাদেশের বাজারে তদারকি চলছে। অভিযান আরও জোরদার করা হবে। তবে তাদের জনবল অপ্রতুল।

Bootstrap Image Preview