Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রস্তুত পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, অপেক্ষা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০২২, ১০:৫৪ AM
আপডেট: ২১ মার্চ ২০২২, ১০:৫৪ AM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


করোনা মহামারির মধ্যে টুঙ্গিপাড়ার বাইরে এই প্রথম দেশের অন্যত্র সফর করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি পূরণে আসছেন পটুয়াখালির কলাপাড়ায়। ধানখালীর পায়রাতে সর্বাধুনিক আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন তিনি। পাশাপাশি এরই মধ্যদিয়ে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণাও দেবেন শেখ হাসিনা।

সোমবার (২১ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে পায়রায় আসবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন এবং এর নাম ফলক উন্মোচন করবেন। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন উপলক্ষে এক হাজার ৩২০টি পায়রা ওড়ানো হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে পায়রায় সাজ সাজ রব। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে ২০০ নৌকা। কোল জেটিতে রঙিন পাল তোলা এসব নৌকা থেকে পতাকা নাড়িয়ে এবং সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানানো হবে।

পায়রায় কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালুর মধ্যদিয়ে ২০২০ সালেই বাংলাদেশ আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল ক্লাবে প্রবেশ করে। আলট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩তম দেশ; এশিয়ায় সপ্তম এবং দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশ ছাড়া শুধু ভারতে এ ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে।

এশিয়ার চীন, তাইওয়ান, জাপান ও মালয়েশিয়াতে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কেন্দ্রগুলোতে চীন ও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশগুলো ঢাকনাযুক্ত কোল ইয়ার্ড (ডোম) ব্যবহার করে না। ডোম ব্যবহারের ফলে বাতাসের মাধ্যমে খোলা কয়লা থেকে কয়লার গুঁড়া ছড়ানোর সুযোগ কমে যায়। এটি বিশ্বের মধ্যে শুধুমাত্র চীন ও বাংলাদেশ ব্যবহার করছে।

বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান অংশীদারে গঠিত বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল) বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে। কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।

৬৬০ মেগাওয়াট করে দুই ইউনিট মিলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি উৎপাদনে আসে ২০২০ সালের মে মাসের ১৫ তারিখে। সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসে একই বছরের ৮ ডিসেম্বর। তবে সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ শেষ না হওয়ায় কেন্দ্রটি হতে ক্ষমতার চেয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ও চায়না পাওয়ার কোম্পানির (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম সাংবাদিকদের জানান, দুটি লাইনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন হবে। একটি পায়রা-গোপালগঞ্জ-আমিনবাজার, আরেকটি পায়রা-খুলনা-যশোর। এরই মধ্যে গোপালগঞ্জ-রামপাল গ্রিড লাইন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পায়রা-গোপালগঞ্জ-আমিনবাজার লাইনটির পদ্মা রিভার ক্রসিং কাজ এখনো শেষ হয়নি। চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ এই কাজ শেষ হবে। এর পরই রাজধানীতে সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। এছাড়াও রামপালে নির্মিত সাবস্টেশনের মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খুলনা অঞ্চলে সরবরাহ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের দু-তিনদিন পর থেকে ওই লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতিদিন ১৩ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা কয়লা দিয়ে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বর্তমানে এ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ৭০০ থেকে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ছিল ৪৭ শতাংশ। গত ১৩ বছরে ৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এখন শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ২০০৯ সালে গ্রাহক সংখ্যা ছিল এক কোটি আট লাখ। গত ১৩ বছরে তিন কোটি ১৩ লাখ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা চার কোটি ২১ লাখ। ২০০৯ সালে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, বর্তমানে এ ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্যসহ)।

যতটা সব এলাকায় সঞ্চালন লাইন স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে সরকার। একেবারে দুর্গম এলাকাগুলোতে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

রোববার (২০ মার্চ) বিকেলে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সাংবাদিকদের বলেন, সময়ের আগে কাজ শেষ হয়ে গেছে। করোনা বাস্তবতার কারণে প্রধানমন্ত্রী এখন উদ্বোধন করছেন।

প্রধানমন্ত্রী শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করবেন। প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষে সবাইকে বিদ্যুৎ দিতে চেয়েছিলেন, দিয়ে ফেলেছি।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসহ এ অঞ্চলের উন্নয়নে নেওয়া সরকারের অন্যান্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে এখানকার অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।

রোববার পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উদ্বোধনের পরই প্রধানমন্ত্রী দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন।

পরিবেশ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে কয়লা লোড-আনলোড থেকে থেকে শুরু করে সব কিছুতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। উৎপাদনের ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির ব্যবহারসহ সব ক্ষেত্রে পরিবেশের বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পটুয়াখালীতে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বইছে খুশির জোয়ার। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকাসহ জেলার রাস্তাঘাট, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সরকারের বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন মেগা প্রকল্প এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে বাহারি রঙ, আলোকসজ্জা ও ব্যানার-ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর পটুয়াখালী সফর উপলক্ষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজল হোসেনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসানসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা রোববার পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।

পরিদর্শনকালে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আবারও প্রমাণ হয়েছে আওয়ামী লীগ যে কথা দেয়, তা রাখে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও নতুন নতুন সঞ্চালন লাইন স্থাপন এবং একেবারে দুর্গম এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে সরকার দেশের সব মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় এনেছে। আগামীকাল (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী শতভাগ বিদ্যুতায়ন ঘোষণা করবেন।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নির্মাণাধীন পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

Bootstrap Image Preview