Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

শিমু হত্যার ১৪ মিনিটের সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যাচ্ছে না

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২০ জানুয়ারী ২০২২, ০৪:৪৩ PM
আপডেট: ২০ জানুয়ারী ২০২২, ০৪:৪৫ PM

bdmorning Image Preview


অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শিমু ও তার স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেলের গ্রিন রোডের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে দেখেছে পুলিশ। তবে রোববার সকাল ১০টা ৩ মিনিট থেকে ১০টা ১৭ মিনিট পর্যন্ত ১৪ মিনিটের ফুটেজ পাওয়া যায়নি।পুলিশের ভাষ্য, রোববার সকালের ওই ১৪ মিনিটের ভিডিও পুরোপুরি অন্ধকার পাওয়া গেছে। বাসার লোকজন সে সময় বিদ্যুৎ না থাকার কথা জানায়। তবে পুলিশ আশপাশের বাসা ও বিদ্যুৎ অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ওইদিন এলাকায় বিদ্যুৎ যায়নি।

পুলিশের সন্দেহ, ওইদিন পরিকল্পিতভাবেই ওই ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, গ্রিন রোডের বাসায় শিমুকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর রোববার বন্ধু ফরহাদকে সঙ্গে নিয়ে কেরানীগঞ্জে মরদেহ ফেলে দিয়ে আসেন নোবেল। ফিরে এসে কলাবাগান থানায় একটি নিখোঁজের ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। মঙ্গলবার নোবেল ও ফরহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে ৩ দিনের জন্য রিমান্ডে পায় পুলিশ।বুধবার রিমান্ডের প্রথম দিনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সাব-ইন্সপেক্টর চুন্নু মিয়া  জানান , 'আজ (বুধবার) আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। শিমুর স্বামী নোবেল জানিয়েছেন, রোববার ভোরের দিকে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এরপরই রাগের মাথায় স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন নোবেল।' নোবেলকে উদ্ধৃত করে চুন্নু মিয়া আরও বলেন, তাদের (শিমু-নোবেল) মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কলহ চলছিল। ভোরে শিমুকে হত্যার পর সকালেই বন্ধু ফরহাদকে ফোন করেন নোবেল। এরপর তারা ২ জন মিলে মরদেহটি গুম করে ফেলার চেষ্টা করেন।

রোববার সকাল ৭ থেকে ৮টার দিকে শিমুকে গলাটিপে হত্যার পর ফোনে বন্ধু ফরহাদকে ডেকে নেন তিনি।শিমু ও নোবেলের গ্রিন রোডের বাসার নিরাপত্তারক্ষী মো. তারিক (৫০)  জানান, নোবেলের বন্ধু ফরহাদ প্রায়ই তাদের বাসায় আসতেন। শনিবার রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ফরহাদ ও নোবেলকে তিনি বাসার নিচে গ্যারেজে বিলিয়ার্ড খেলতে দেখেছেন।তারিক আরও জানান, রাত ১১টার দিকে তিনি গেটে তালা দিয়ে ঘুমাতে চলে যান। রোববার সকাল ১০টায় লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে তাকে ডেকে পাশের দোকান থেকে নাস্তা নিয়ে আসতে বলেন নোবেল। তখন পর্যন্ত ফরহাদকে সেখানে দেখা যায়নি। কিন্তু ১০ মিনিটের মধ্যে নাস্তা নিয়ে ফেরার পর গ্যারেজে ফরহাদকে দেখতে পান তারিক।তারিক বলেন, 'নোবেল নিজেই গাড়িটি চালিয়ে বের হয়ে যান। সেসময় পাশের সিটে ছিলেন ফরহাদ। বিকেল ৩টার দিকে তারা দুজনই গাড়ি নিয়ে আবার বাসায় আসেন। সন্ধ্যার দিকে আবার বের হন।'নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিমুর এক আত্মীয় বলেন, 'রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল পর্যন্ত তারা সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছেন। ফুটেজে তারা ফরহাদকে ঢুকতে দেখেননি। কিন্তু বের হতে দেখেছেন।'

তিনি জানান, সে রাতে শিমুর বাসায় ২ বেডরুমের একটিতে তার ১৬ বছর বয়সী মেয়ে ঘুমিয়েছিল। অন্য রুমে ছিল তাদের ৭ বছরের ছেলে, শিমু ও নোবেল।সে রুমেই শিমুর সঙ্গে ঝগড়া পরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে নোবেল। তবে দুই সন্তানই বলছে তারা কিছুই টের পায়নি।শিমুর ওই আত্মীয়ের ভাষ্য, নোবেল মাদকাসক্ত ছিলেন। বাসার ভেতরেই ইয়াবা, ফেনসিডিল সেবন করতেন তিনি। রোববার সকালে নোবেল ও ফরহাদ গাড়িতে মরদেহ নিয়ে মিরপুরে আরেক বন্ধু গণির কাছে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে কলাবাগান থানায় নিখোঁজের জিডি করেন। পরে তারা ৩ বন্ধু মিলেই সবাইকে ফোন করেন। তবে গণিকে এখন পর্যন্ত আটক করা হয়নি।

মামলা অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধেহত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে শিমুর স্বামী নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদকে আটক করা হলেও মামলা হয়েছে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে। এই মামলায় আসামি কতজন- সেটারও উল্ল্যেখ  করা হয়নি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিমুর ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন বলেন, 'আমরা শুনেছি নোবেল মেরেছে। কিন্তু সেটা তো এখনো সেভাবে নিশ্চিত না।'শিমুর পরিবারের সঙ্গে তার শ্বশুড়বাড়ির লোকের সম্পর্ক কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সম্পর্ক ভালো। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া আছে।'শিমু-নোবেলের ২ সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়েও ২ পরিবারের লোকজন মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।তবে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে শিমুর আরেক আত্মীয়  জানান, দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক তেমন ভালো নয়।  তিনি জানান, অনেক বছর আগে গ্রিনরোডে একটি একতলা ভবনে ভাড়া বাসায় থাকত শিমুর পরিবার। সেসময় বাড়ির মালিকের ছেলে নোবেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান শিমু। ২০০৪ সালে বিয়ে করেন তারা।পারিবারিক কলহের বিষয়ে শিমুর ওই আত্মীয়ের ভাষ্য, ৮ বছর ধরে বেকার ছিলেন নোবেল। আগে তার বাংলামোটরে মোটর পার্টসের ব্যবসা ছিল। পরে লোকসানের মুখে ব্যবসা গুটিয়ে নেন তিনি। শিমুর আয় ও বাসা ভাড়ার টাকায় তাদের সংসার চলতো। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ ছিল।

পুলিশ জানায়, শিমুর মরদেহ ২টি বস্তায় ভরা ছিল। একটি চটের বস্তা পায়ের দিক থেকে ও আরেকটি বস্তা মাথার দিক থেকে ঢুকিয়ে মাঝ বরাবর প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল।তদন্তে নেমে নোবেলের গাড়িতে এক বান্ডিল সুতা পায় পুলিশ।  মিলিয়ে দেখা যায়, শিমুর মরদেহ থাকা বস্তা যে সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতা আর গাড়িতে পাওয়া সুতা একই রকম। গাড়িটি পুলিশ ধোয়া অবস্থায় পায়। ভেতরের দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছিল।মরদেহ গুম করার চেষ্টার সঙ্গে গণি কিংবা আর কারুর সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি আবুস সালাম বলেন, 'এ ব্যাপারে আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করছি। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে এ সংক্রান্ত তথ্য গণমাধ্যমকে জানানো হবে।

Bootstrap Image Preview