Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

৩৫ হাজারের বিমানের টিকিটের দাম ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা: প্রবাসীদের দুঃখের কথা শুনবে কে?

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারী ২০২২, ১২:০৪ PM
আপডেট: ১৪ জানুয়ারী ২০২২, ১২:০৪ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার বিমান টিকিটের দাম গত ডিসেম্বর থেকে হুট করে চার-পাঁচ গুণ বেড়েছে। ট্রাভেল এজেন্সি ও সংশ্লিষ্টরা এজন্য করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধের গুজব এবং সিন্ডিকেটকে দুষছেন। তারা মনে করেন, এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

এমিরেটসের ফ্লাইটে আগামী ১৬ জানুয়ারি দুবাই যেতে ভাড়া গুণতে হবে ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ফার্স্ট ক্লাস কিংবা বিজনেস ক্লাস নয়, এটি ইকোনমিক ক্লাসের একেকটি টিকিটের মূল্য। একই দিনে বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ই্উএস-বাংলা এয়ারলাইনসের দুবাইগামী ফ্লাইটের ভাড়া জনপ্রতি ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরেক প্রতিষ্ঠান ইতিহাদ এয়ারওয়েজে চড়ে আবুধাবি যেতে প্রত্যেকের লাগবে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-দুবাই রুটে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনও আসন ফাঁকা নেই। কয়েক মাসে আগেও এই রুটে বিমানের প্রতিটি টিকিটের দাম ছিল ৩৫ হাজার টাকা।

কিছুদিন আগেও এমিরেটসে ঢাকা থেকে দুবাইয়ের ভাড়া ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার ১২০ টাকা। আর বাজেট এয়ারলাইন ফ্লাই দুবাইয়ে ১৬ জানুয়ারি ঢাকা-দুবাই রুটের ভাড়া ৯৪ হাজার টাকা। আরেক বাজেট এয়ারলাইন এয়ার অ্যারাবিয়ায় ১৬ জানুয়ারি শারজাহ যেতে ভাড়া দিতে হবে ১ লাখ টাকা।

আগে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন গন্তব্যে যেখানে ৩০-৪০ হাজার টাকায় যাওয়া যেতো, সেই ভাড়া এখন লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিমান ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় দিশেহারা প্রবাসী কর্মীরা। তাদেরই একজন সৌদি আরব প্রবাসী আল আমিন। এ মাসের মধ্যে তাকে কাজে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু টিকিটের দাম বেশি হওয়ায় কীভাবে ফিরবেন কোনও উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘বছরে তো লাখ টাকা বেতনও পাই না। এখন এত টাকা দিয়ে টিকিট কাটবো কীভাবে? ধার করা ছাড়া কোনও উপায় দেখছি না। কিন্তু ধার করে গেলে সেটা শোধ করবো নাকি সংসার চালাবো?’

মধ্যপ্রাচ্যগামী প্রবাসীদের সবার ক্ষেত্রে একই চিত্র। কর্মস্থলে ফিরতে ধারদেনা করছেন তারা। কিন্তু কীভাবে ঋণ শোধ করবেন তা নিয়ে চিন্তিত সবাই।

হুট করে মধ্যপ্রাচ্য রুটে টিকিটের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে এয়ারলাইনসগুলো বলছে, সারাবিশ্বে বিমান ভাড়া নির্ধারণ হয় প্রায় একই পদ্ধতিতে। চাহিদা বাড়লে ভাড়া বাড়তে থাকে। একইসঙ্গে ফ্লাইটের কাছাকাছি সময়ে ভাড়া বেড়ে যায়। চাহিদা কমতে থাকলে ভাড়াও কমে আসে।

মধ্যপ্রাচ্য রুটে ভাড়া বৃদ্ধির কারণে সিন্ডিকেটকে দায়ী করছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। সংগঠনটি গত ৭ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণের দাবি জানায়। আটাব সভাপতি মনছুর আহামেদ কালাম বলেন, ‘সিন্ডিকেট করে অনৈতিকভাবে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। ভাড়া এত বেশি যে, প্রবাসী কর্মীদের পক্ষে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অনেকে সুদের ওপর ঋণ নিয়েও অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। অভিবাসী কর্মীরা দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে আছে। বিমান টিকিটের অনৈতিক উচ্চ মূল্য নিয়ন্ত্রণ হওয়া জরুরি।’

ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, গত বছরের ডিসেম্বরে হুট করেই টিকিটের চাহিদা বেড়েছে। কারণ জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যেতে পারে এমন গুজবে অস্থির হয়ে ওঠেন বেশিরভাগ প্রবাসী। যারা দুই-তিন মাস পর কাজে ফেরার কথা ভেবেছিলেন, তারাও দেশে আটকা পড়ার আশঙ্কায় তড়িঘড়ি টিকিট কিনতে শুরু করেন। টিকিটের এত চাহিদা না থাকলে ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতো না।

ফেব্রুয়ারিতে ছুটি শেষে মার্চে দুবাই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল আব্দুল মজিদের। তিনি ঢাকার পল্টন এলাকায় জানুয়ারিতেই কর্মস্থলে ফিরতে টিকিট খুঁজছেন। কিন্তু ভাড়া বেশি হওয়ায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না কী করবেন। কেন এক মাস আগে ফিরে যাবেন জানতে চাইলে আব্দুল মজিদ বলেন, ‘শুনেছি জানুয়ারিতে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাবে। একবার বন্ধ হলে কবে খুলবে তার তো ঠিক নাই। আমাদের সঙ্গে দেশে আসা অনেকে ফিরে গেছে। আমি এখনও যেতে পারি নাই।’

ভাড়া কয়েক গুণ বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে আটাবের সাবেক সভাপতি এসএন মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব বলেন, ‘সৌদি আরবে ওমরাহ হজের জন্য যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। আবার সৌদি আরব ও দুবাইয়ে জনশক্তি রফতানিও বেড়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির আগে যে পরিমাণ ফ্লাইট পরিচালিত হতো, এখন প্রায় ৬০ ভাগ ফ্লাইট কম। চাহিদার প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা না থাকায় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এছাড়া কোনও কোনও এয়ারলাইনের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে গুটিকয়েক এজেন্সি সিন্ডিকেট করে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট ছাড়াই ফ্লাইটের আসন ব্লক করে রাখছে। এভাবে কৃত্রিম একটি সংকট তৈরি হয়েছে।’

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘অত্যধিক ভাড়া দিয়ে আমাদের প্রবাসী কর্মীদের যাওয়া সম্ভব না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি-ভাড়া লিমিট করে নিয়ে আসা। সিভিল এভিয়েশন সব এয়ারলাইনকে নিয়ে বসেছে, যাতে করে ভাড়ার একটা লিমিট থাকে, অসহনীয় পর্যায়ে না যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হচ্ছে।

ভাড়া নিয়ন্ত্রণে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ জরুরি কলে মনে করেন আটাবের সাবেক সভাপতি এসএন মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব। একইসঙ্গে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট ছাড়া সিট ব্লক করার অপশন বন্ধ করার  মত দেন তিনি। মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব বলেন, ‘বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে সংকট নিরসনে দায়িত্ব নিতে হবে। পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের ভাড়া সমন্বয় করতে হবে। যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনা করে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। টিকিটে বিক্রির ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং বাড়াতে হবে।’

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী  বলেন, ‘ভাড়ার বিষয়ে যেন ভুল ব্যাখ্যা না আসে। কারণ ভাড়া আন্তর্জাতিক নিয়মে নির্ধারিত হয়। আমরা বিমান সংস্থাগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছি। আশা করি, তারা আমাদের অনুরোধে সাড়া দেবে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অবগত আছেন। ভাড়া বৃদ্ধির কারণে প্রবাসীকর্মীদের কষ্ট হচ্ছে, সেটিও আমরা অনুভব করি। আলাপ-আলোচনা করেছি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস থেকে কীভাবে ভর্তুকি দিয়ে হলেও বিশেষ ফ্লাইট চালানো যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যাতে কম ভাড়ায় আমাদের প্রবাসীকর্মীরা যাতায়াত করতে পারেন।’

সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন

Bootstrap Image Preview