Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

পরীমণিকে নিয়ে চুপ শিল্পী সমিতি ও সতীর্থরা!

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ আগস্ট ২০২১, ০৫:১৭ PM
আপডেট: ০৫ আগস্ট ২০২১, ০৫:১৭ PM

bdmorning Image Preview
ছবি সংগৃহীত


ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমণিকে আটক করা হয়েছে। বুধবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় বনানীর বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। রাত আটটার পরে তাকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় পরীর সঙ্গে আরও দুজনকে আটক করা হয়েছে।

ঘটনার আকস্মিকতায় বিষয়টি নিয়ে কোনও সমিতি, শিল্পী ও সতীর্থকে তেমন একটা কথা বলতে দেখা যায়নি সোশ্যাল হ্যান্ডেলে। এমনকি ফোনে যোগাযোগ করা হলেও পাওয়া যায়নি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতির মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে। জানা যায়নি, নিজ সংগঠনের অন্যতম তারকা সদস্যের এমন অবস্থায় তারা কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন বা ভাবছেন। এর আগে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ফেসবুক লাইভে পরীমণি নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তুললে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরব হয়ে ওঠে। তখন পরীর পক্ষে কথা বলেছিলেন শীর্ষ অভিনেত্রী জয়া আহসানসহ শিল্পী-কুশলীরাও। তবে এবার ফেসবুক লাইভে পরী প্রায় ঘণ্টা খানেক সবার সাহায্য চাইলেও তার বাসার আশেপাশে যাননি কোনও শিল্পী বা বন্ধু। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও উল্লেখযোগ্য তেমন কাউকে পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলতে দেখা যায়নি পরীকে নিয়ে। 

তবে স্বনামধন্য নাট্যকার মাসুম রেজা তার ফেসবুক প্রোফাইলে খানিক ভিন্ন প্রশ্নের অবতারণা করেন। তিনি লিখেছেন, ‘অভিযানে যারা গ্রেফতার হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তারা মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করছেন শিল্পী পরিচয়ে। আমরা শিল্পীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করেছিলাম, যে কাউকে শিল্পী বলা যাবে না! কিন্তু এবারে পরীমণির বাড়িতে এই অভিযান দেখে কীভাবে অস্বীকার করবো তিনি শিল্পী নন?’

মাসুম রেজার এই প্রশ্নটি প্রাসঙ্গিকতার কারণ গেল দু’দিন ধরে চলতে থাকা বিতর্কের একটি প্রতিক্রিয়া। যে বিতর্কের জন্ম হয় অভিনয় শিল্পী সংঘের দেওয়া একটি প্রেস বার্তার মাধ্যমে। যেখানে সংঘের নেতাদের ভাষ্য এমন- কোথাও পুলিশি অভিযানে ধরপাকড় হলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় খবরের শিরোনাম হয় ‘অমুক মডেল বা অভিনেতা/অভিনেত্রী গ্রেফতার’; যা অবধারিতভাবে হয়ে ওঠে আকর্ষণীয় সংবাদ! এ ধরনের শিরোনাম সর্বজন শ্রদ্ধেয়, প্রথিতযশা অভিনেতা-অভিনেত্রী, মডেলসহ বিনোদন মাধ্যমে নিষ্ঠার সঙ্গে কর্মরত সবার জন্য সামাজিকভাবে অত্যন্ত বিব্রতকর এবং অসম্মানজনক বলে মনে করে সংগঠনটি।

অভিনয় শিল্পী সংঘের এমন বার্তায় প্রতিবাদ জানায় সাংবাদিক সমাজ। এদিকে বুধবার (৪ আগস্ট) রাতে পরীমণি গ্রেফতার হওয়ার পর অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিমের কাছে প্রশ্ন ছিলো, তবে কি এখন ‘চিত্রনায়িকা/মডেল পরীমণি গ্রেফতার’- এমন শিরোনাম করা যাবে?

জবাবে নাসিম বলেন, ‘দেখুন আমাদের বক্তব্যে ভুল বুঝেছেন অনেকেই। পরীমণি যে চিত্রনায়িকা বা মডেল বা অভিনয়শিল্পী- সেটা তো গোটা বাংলার সবাই জানে। আমাদের বক্তব্য হলো, যাদেরকে তেমন কেউ চেনে না, যারা এক দু’টি অনুল্লেখযোগ্য কাজ হয় তো করেছে- তাদের বিষয়ে। আমার মনে হয় এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট করার জন্য আমাদের একসঙ্গে বসতে হবে। ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ দিন শেষে, আমরা এক পরিবারের।’

তবে পরীমণিকে আটকের বিষয়ে অভিনয় শিল্পী সংঘ আলাদা করে কিছু বলছে না। কারণ, পরী এই সংঘের সদস্য নন। অন্যদিকে পরীর মূল সংগঠন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দুই নেতা মিশা সওদাগরের ফোন বন্ধ আর জায়েদ খান রিসিভ করছেন না।  

বুধবার সন্ধ্যার লাইভে পরীমাসুম রেজার সুর ধরেই টিভি নাটকের আরেক নির্মাতা আফজাল হোসেন মুন্না লিখেছেন বেশ গভীরে, ‘‘এখন আবার চিৎকার করে ওঠেন, ‘পরিমণি কে? তাকে চিনি না, ওরা করা?’ সবার গলায় গলায় শিল্পী লেখা কাগজ ঝুলিয়ে দিয়েছেন তো আপনারাই! এগুলো সবই করতে পারেন অথচ সহজ ও সুন্দর করে বলতে পারেন না যে, অ্যাক্টর, মডেল, পারফর্মার এগুলো করতেই পারে, তবে সবাই শিল্পী নয়। বলা শুরু করুন, প্রতিটা পেশায় ক্রিমিনাল থাকতে পারে বা নিপাট ভদ্রলোকটিও ক্রাইম করতে পারে। তার সাথে তার প্রফেশনের সম্পর্ক নাই। পরিশেষে বলতে চাই, যখন অহেতুক আহত-নিহত হওয়া বন্ধ করবেন, তখনই অন্য পেশাজীবীদের বলতে পারবেন যে, ফিকশনে মন্দ ক্যারেকটার যে পেশারই হোক বা চরিত্রের প্রয়োজনে যা বলুক তা নিয়ে আহত হবার কিছু নেই। ধন্যবাদ। আর হ্যাঁ, বিচারকার্য শেষ হবার আগে শিল্পী হোক কী অ-শিল্পী- কাউকে কদর্য বিশেষণে বিশেষায়িত কইরেন না।’’

এদিকে পরিচালক মাহমুদ হাসান শিকদার পরীমণিকে তথাকথিত নায়িকা আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‌‘একজন তথাকথিত নায়িকা কিংবা নামধারী মডেলকে গ্রেফতার করার জন্য লাখে লাখে অস্ত্রধারী সৈন্যের সিনেম্যাটিক তৎপরতা সেই সাথে একখানা ফটো তোলার জন্য আমাদের সাংবাদিক ভাইদের যে প্রাণপণ প্রচেষ্টা বেশ উপভোগ করছি!’

যদিও তার এই উপভোগের কারণটি স্পষ্ট নয়।

অন্যদিকে পরীমণির বন্ধু ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজকে গ্রেফতারের খবরে বিপাকে পড়েন নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। বুধবার রাতে অন্তত শ’ পাঁচেক কল রিসিভ করতে হয় এই নির্মাতাকে। অবশেষে তিনি ফেসবুকে পোস্ট দেন এই বলে, ‘আমার পুরো নাম মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ।’ জানা গেছে নজরুল ইসলাম রাজ গ্রেফতারের খবরে মিডিয়ার অনেকেই ভেবেছেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ! 

প্রসঙ্গত, আজ বুধবার (৪ আগস্ট) বিকাল পৌনে চারটার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ চিত্রনায়িকার বনানীর বাসায় উপস্থিত হয়। এরপর আতঙ্কিত পরী লাইভে এসে তাদের পরিচয় পাননি বলে দাবি করেন।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে পরীমণির বিপদের বন্ধু নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীকেও এদিন কোথাও দেখা যায়নি। যিনি গত জুন মাসের ঘটনায় পরীর সঙ্গে ছাতা হয়ে ছিলেন সারাক্ষণ। বাসা থেকে ছুটেছেন ডিবি অফিস পর্যন্ত। বুধবার সন্ধ্যা থেকে ফেসবুকে বা মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি এই নির্মাতাকেও।

এছাড়া পরীমণির সঙ্গে কাজ করা সাম্প্রতিক নায়ক-নির্মাতা-সহশিল্পীরাও ছিলেন নিশ্চুপ। সম্ভবত সবাই ঘটনার আকস্মিকতা হজম করার চেষ্টা করছেন।

উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন দুপুরে সাভার থানায় নির্যাতন ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ছয় জনের নামে মামলা দায়ের করেন নায়িকা পরীমণি। মামলায় নাসির ইউ মাহমুদকে প্রধান আসামি করা হয়। এরপর বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজে পরী বিতর্কিত হয়ে ওঠেন। আসামিরা বর্তমানে জামিনে বাইরে আছেন।

Bootstrap Image Preview