সাউথ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতায় প্রাণ গেছে কমপক্ষে ছয়জনের।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত সপ্তাহে জুমার আত্মসমর্পণের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০০ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
দোকানপাটে ভাঙচুর, লুটপাট, ভবনে আগুন দেয়াসহ দেশব্যাপী চলমান নৈরাজ্যের মুখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বিভিন্ন প্রদেশে।
জ্যাকব জুমার কোয়াজুলু-নাটাল প্রদেশ আর গাউতেং প্রদেশে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী।
সহিংসতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।
ক্ষমতায় থাকাকালীন দুর্নীতির অভিযোগে একটি মামলায় অনুসন্ধানে সহযোগিতা না করায় আদালত অবমাননার দায়ে ১৫ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে তাকে।
দুর্নীতির অভিযোগ অবশ্য প্রত্যাখ্যান করেছেন ৭৯ বছর বয়সী এ নেতা। দেশটির সাংবিধানিক আদালত তার সাজা মওকুফ অথবা লঘু করবে বলে আশাবাদী তিনি।
তবে জুমার এ আশা বাস্তবে রূপ নেয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে বলে মত আইন বিশেষজ্ঞদের।
টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে স্থানীয় সময় সোমবার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা সহিংসতার নিন্দা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এমন সহিংসতা বিরল ঘটনা।’
জুমাকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই অস্থিতিশীলতা শুরু। পরের কয়েক দিনে পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হয়েছে এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে।
ডারবান, কোয়াজুরু-নাটাল থেকে প্রাপ্ত ছবিতে দোকানপাটে ভাঙচুর, লুটপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের দৃশ্য দেখা গেছে। জোহানেসবার্গে টেলিভিশন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন আর পোশাকের দোকানে ব্যাপক লুটপাট চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
রামাফোসা বলেন, ‘সুযোগের অপব্যবহার করে সুযোগসন্ধানীরা এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। একদল লোক নিজেদের লুটপাট আর চুরির প্রবৃত্তিকে ঢাকতে গোলমাল উসকে দিয়েছে।
‘কোয়াজুলু-নাটাল আর গাউতেঙের বিভিন্ন এলাকায় যে সহিংসতা আর ধ্বংসযজ্ঞ আমরা দেখেছি, কোনো ক্ষোভ বা অভিযোগ কিংবা রাজনৈতিক কারণ দিয়ে তা যৌক্তিক বলে প্রমাণ করা যাবে না।’
সহিংস পরিস্থিতির কারণে সাউথ আফ্রিকায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম থমকে গেছে। অনেক টিকাকেন্দ্রেও ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবেও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অনেক কেন্দ্র।
রামাফোসা বলেন, ‘টিকা কার্যক্রম গতি পেল আর সঙ্গে সঙ্গে এমন পরিস্থিতি চরম বিঘ্ন ঘটতে শুরু করল। এতে আমাদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
আদালত অবমাননার দায়ে সাজা ভোগের পাশাপাশিই জুমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলবে। নব্বইয়ের দশকে ৫০০ কোটি ডলারের একটি অস্ত্র চুক্তির দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ গত মাসে অস্বীকার করেছেন জুমা।
তার সমর্থকদের দাবি, বর্তমান প্রেসিডেন্ট রামাফোসার মিত্রদের সাজানো নাটকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়েছেন জুমা।