‘ডাক দিয়েছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেওগো মাটি’, ‘হায়রে মানুষ রঙ্গিন ফানুস’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’ সহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানের দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। গত বছরের ৬ জুলাই, সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। আজ (৬ জুলাই) তার চলে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো।
প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে এন্ড্রু কিশোরকে স্মরণ করলেন তার প্রিয় বন্ধু হানিফ সংকেত। বেশ কটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। শুরুতে তিনি লিখেন, ‘দেখতে দেখতে একটি বছর হয়ে গেলো কিশোর নেই। বিশ্বাস করতে মন চায় না, অথচ এটাই সত্যি।’
‘কিশোরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় ৪০ বছরের। এক সঙ্গে অনেক আড্ডা দিয়েছি, বহুবার বিদেশে গেছি, এক সঙ্গে থেকেছি। কিশোর ছিল ইত্যাদি’র প্রায় নিয়মিত সংগীতশিল্পী।'
তিনি প্লে-ব্যাক সম্রাট। এটুকু বললেই সবাই বুঝতে পারেন কার কথা বলা হচ্ছে। তিনি এন্ড্রু কিশোর।
এক বছর হলো এন্ড্রু নেই। ২০২০ সালের ৬ জুলাই ৬৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। এন্ড্রু ব্লাড ক্যানসারে দীর্ঘ দিন ভুগছিলেন।
এই দিনে ৪০ বছরের বন্ধু ও সহকর্মীকে নিয়ে কয়েক লাইনে স্মৃতিচারণ করেছেন মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব হানিফ সংকেত।
হানিফ সংকেত লিখেছেন, ‘দেখতে দেখতে একটি বছর হয়ে গেলো কিশোর নেই। বিশ্বাস করতে মন চায় না, অথচ এটাই সত্যি। এন্ড্রু কিশোর বাংলা গানের ঐশ্বর্য। যার খ্যাতির চাইতে কণ্ঠের দ্যুতি ছিলো বেশি। যার কাছে গানই ছিলো জীবন-মরণ, গানই ছিলো প্রাণ।
তিনি বলেন, ‘কিশোর যেমন প্রাণ খুলে দরাজ গলায় গাইতে পারতো, তেমনি মানুষের সঙ্গেও প্রাণ খুলে মিশতে পারতো। সবসময় নিজের সুবিধার চাইতে অন্যের সুবিধার দিকেই দৃষ্টি ছিলো তার বেশি।
তিনি আরো বলেন, ‘কিশোর নেই মনে হলেই ভেতরটা হাহাকার করে উঠে। এন্ড্রু কিশোর ছিল একজন আদর্শ শিল্পী, একজন মানবিক মানুষ। যার তুলনা সে নিজেই। কিশোর তার গানের মাধ্যমেই বেচে থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। বন্ধু যেখানে থাকো ভালো থেকো। শান্তিতে থেকো ।এক সঙ্গে অনেক আড্ডা দিয়েছি, বহুবার বিদেশে গেছি, এক সঙ্গে থেকেছি। কিশোর ছিল ইত্যাদি’র প্রায় নিয়মিত সংগীতশিল্পী।’
এন্ড্রু কিশোর ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর রাজশাহী বেতারে নজরুল, রবীন্দ্র, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গান গাইতেন তিনি।
এন্ড্রুর প্রথম প্লে-ব্যাক ১৯৭৭ সালে। আলম খানের সুরে অচিনপুরের রাজকুমারী নেই গানটি গেয়েছিলেন তিনি। তার জনপ্রিয়তা আসে ১৯৭৯ সালে; এ জে মিন্টু পরিচালিত প্রতীজ্ঞা চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানটি গেয়ে।
এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া জনপ্রিয় গানের মধ্যে ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙ্গীন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’ গানগুলো অন্যতম।
১৯৮২ সালে প্রথম বার তার ঘরে আসে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এরপর আরও সাতবার তার ঘরে এসেছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সেরা পুরুষ কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কারটি।