বর্ষা নামলে এক হাঁটু পানি জমে বটে, পোকামাকড় ইত্যাদির উৎপাতও বাড়ে। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগব্যাধির ঘটনাও বেড়ে যায়। তবু সেই কোন প্রাচীনকাল থেকে বর্ষা নিয়ে কবি-সাহিত্যিকরা পাতার পর পাতা লিখে চলেছেন। আর সেই লেখালেখির মূল বিষয় বরাবর থেকেছে প্রেম।
‘আজ সকাল থেকে খুব রোম্যান্টিক ওয়েদার’ বাদলা দিনে এই কথাটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম কত মানুষ যে তাঁর প্রিয়জনদের বলে এসেছেন তার ইয়ত্তা নেই। এখন প্রশ্ন হল, কেন বৃষ্টি পড়লেই রোম্যান্টিক লাগে বা প্রেম করতে ইচ্ছে হয়? দু’টি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশিত হয় ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকনমিক রিসার্চ-এর জার্নালে। ওই রিপোর্টে বলা হয় যে তাপমাত্রার উপরে অনেকটা নির্ভরশীল মানুষের শরীরের হরমোন মাত্রা ও সেক্স ড্রাইভ।
তাপমাত্রা যদি প্রায় ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি হয়, তবে তা পুরুষ এবং নারী উভয়েরই প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আবার তাপমাত্রা খুব কম হলেও মোটামুটিভাবে ৫ ডিগ্রির কম হয়ে গেলেও একই বিষয় ঘটে। এখন যদি শীতের রাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ে তাহলে কিন্তু প্রেম-টেম খুব একটা আসে না। বরং ঠান্ডায় আরও থরহরি কম্পমান অবস্থা হয়।
আসলে বৃষ্টি পড়া না পড়াটা আপেক্ষিক। আসল কথা হল মন ভাল থাকা এবং ভাল থাকার যে হরমোনগুলি শরীরে নিঃসৃত হয়, সেই হরমোনের নিঃসরণ। প্রবল গরমের পরে যখন বর্ষা এসে তাপমাত্রা অনেকটা সহনীয় করে তোলে তখন শরীরে যে স্বস্তিটা বোধ হয়, সেটা অক্সিটসিন জাতীয় হরমোনের হাতযশ।
আর এই অক্সিটোসিনকেই মূলত প্রেমের হরমোন বলে ধরা হয়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে উলটো ব্যাপারটাও ঘটে। বৃষ্টি পড়লে অনেকের ডিপ্রেশনও হয়। সেটাও হরমোনজনিত। এখন মুড ভাল থাকুক বা খারাপ, প্রেম এবং যৌনক্রিয়া মানুষকে রিল্যাক্সড করে। তাই বৃষ্টি পড়লে যদি মন ভাল থাকে, তাহলে প্রেম করার ইচ্ছে জায়গাটা যেমন স্বাভাবিক, বৃষ্টি পড়লে যদি ডিপ্রেশন হয়, সেক্ষেত্রেও কোনও সঙ্গীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটিয়ে ডিপ্রেশন দূর করার ইচ্ছেটা প্রবল হয়।
এর উপরে রয়েছে সাহিত্য এবং পপুলার কালচারে বৃষ্টি নিয়ে রোম্যান্টিক রেফারেন্সের প্রভাব। এই দুয়ে মিলেই বৃষ্টিদিনে প্রেম করার ইচ্ছেটা জোরদার হয় আর কী!
সেই আদিকাল থেকেই বৃষ্টির সঙ্গে প্রেমের একটা মাখোমাখো সম্পর্ক রয়েছে। তাই পাঠকদের জন্য বৃষ্টির দিনে প্রেম করার ৭ সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হলো-
১. আবহাওয়া এমনিতেই বেশ রোম্যান্টিক থাকে। কাজেই আলাদা কবিতা আওড়ে বা প্রেম গদগদ কথা বলে সঙ্গী/সঙ্গিনীকে প্রেমের জোয়ারে ভাসানোর দরকার পড়বে না।
২. পার্কসহ বিভিন্ন ডেটিংস্পটে যদি প্রেম করতে যান তাহলে ছাতার আড়ালে বসার একটা বৈধ কারণ পেয়ে যাবেন। ছাতার আড়ালে
৩.এছাড়া বৃষ্টির দিনে পার্কে প্রেম করতে গেলে পুলিশের উৎপাতও থাকবে না। বৃষ্টির মধ্যে কে আর ছাতা মাথায় দিয়ে আসবে আপনাদের পাহারা দিতে!
৪. বাড়ির বাইরে যেতে চান না? তাহলে বান্ধবীর বাড়ি যাওয়ার অজুহাত তৈরি করে দিতে পারে বৃষ্টি। তার বাড়ি ছাতা মাথায় হঠাৎ গিয়ে হাজির হন। বান্ধবীর মা কে বলুন, ‘এদিকে এসেছিলাম টিউশান নিতে। কিন্তু কাকিমা, রাস্তায় হঠাৎ এমন জোরসে বৃষ্টি নামল যে, উপায় না দেখে মাথা বাঁচাতে…’’।
ব্যস, কাকিমা আর বলতে পারবেন না কিছু।
৫. বন্ধ ঘরের মধ্যে প্রেম করতে করতে ব্যাপারটা যদি একটু দুষ্টুমির দিকে মোড় নেয় তাহলেও চিন্তা নেই। বৃষ্টি হলে গরম কমবে। ফলে চট করে ক্লান্ত হবেন না।
৬. ঘরের ভিতর থাকলে রাস্তার লোকের চোখের আড়াল হওয়ার জন্য জানালা বন্ধ করা দরকার। বৃ্ষ্টি হলে, ‘ঝাট আসছে’ এই অজুহাতে জানালা বন্ধ করে দেওয়া সহজ হবে।
৭. মুষুলধারে বৃষ্টি হলে আর একটা সুবিধা। প্রেম যদি একটু উত্তুঙ্গ অবস্থায় পৌঁছায় তাহলে তার শব্দ বৃষ্টির ঝমঝম আওয়জে চাপা পড়ে যাবে।