Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৭ শনিবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

গৌরবের মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৩:০৯ PM
আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০৩:০৯ PM

bdmorning Image Preview


বাঙালির গর্বের দিন ১৬ ডিসেম্বর। এদিন বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে ৯ মাস যুদ্ধ করার পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। সেই বিজয়ের ৪৯ বছর পূর্ণ হলো এবার। পথে প্রান্তরে আজ চারদিকে লাল সবুজের ছড়াছড়ি, জয় বাংলা স্লোগান-গানে মুখরিত উৎসব, পাড়া-মহল্লায় মাইকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই নন্দিত কণ্ঠ, রক্ত গরম করা সেই ঘোষণা শুনতে শুনতে বুক ভরে আসে বিজয়ের অহংকারে। বিজয়ের এই গল্পের দেয়ালজুড়ে লেগে আছে রক্ত আর শোকের দাগ। আছে বিশ্বকে চমকে দিয়ে নিজেদের নামে মানচিত্র অধিকার করে নেয়ার উল্লাস-উৎসব। এইসব গল্প নানা আঙ্গিকে, নানা ভাবনায় বহুবার ধরা দিয়েছে স্যালুলয়েডের ফিতায়। যুগে যুগে নির্মিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে অনেক সিনেমা।

১. ওরা ১১ জন
দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রথম সিনেমা ‘ওরা ১১ জন’। এটি স্বাধীন হওয়ার পরপরই নির্মিত হয় যুদ্ধের দগদগে ঘা বুকে নিয়ে। ১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন প্রয়াত নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম। এতে অভিনয় করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, হাসান ইমাম, এটিএম শামসুজ্জামান, খলিলউল্লাহ খান প্রমুখ। সিনেমাটিতে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা অভিনয় করেছিলেন।

এই সিনেমায় ১১ জনের ১০ জনই বাস্তবের মুক্তিযোদ্ধা। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খসরু, মুরাদ, হেলাল ও নান্টু।

২. আলোর মিছিল
এই সিনেমাটি ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায়। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ সিনেমার পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফারুক, ববিতা, রাজ্জাক ও সুজাতা। ছবিটি দারুণ প্রশংসিত হয়।

৩. আবার তোরা মানুষ হ
বাংলাদেশের আরেক বিখ্যাত পরিচালক খান আতাউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করেছেন ‘আবার তোরা মানুষ হ’। সিনেমাটিতে যুদ্ধ পরবর্তী সামাজিক পরিবেশ ও বিশৃঙ্খলার চিত্র উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফারুক, অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ, চিত্রনায়িকা ববিতা, অভিনেত্রী রোজী আফসারী ও রওশন জামিল’সহ অনেকে।

৪. অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ওপর নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত। ছবির তিনটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন ববিতা, উজ্জল ও আনোয়ার হোসেন। বিষয়গত দিক থেকে এই ছবিটিকে সে সময় একেবারেই অন্যরকম বলে মন্তব্য করেছিলেন বুদ্ধিজীবীরা।

৫. হাঙ্গর নদী গ্রেনেড
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সিনেমা নির্মাণ করেছেন চাষী নজরুল ইসলাম। তার আরও একটি কালজয়ী সিনেমা ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’। প্রখ্যাত লেখক সেলিনা হোসেন রচিত মুক্তিযুদ্ধের গল্প ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’ অবলম্বনে ১৯৯৭ সালে একই নামে ছবিটি নির্মাণ করেন চাষী নজরুল ইসলাম।

একজন সন্তানহারা মায়ের গল্প নিয়েই ছবির গল্প। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন চিত্রনায়িকা সুচরিতা। এছাড়াও, ছবির বিভিন্ন চরিত্রে আরও সোহেল রানা, অরুনা বিশ্বাস, অন্তরা ও ইমরান অভিনয় করেন।

৬. আগুনের পরশমণি
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘আগুনের পরশমণি’। নিজের লেখা উপন্যাস থেকেই সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াত, ডলি জহুর প্রমুখ। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি বেশ কয়েকটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।

৭. মুক্তির গান
প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও তার স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাংলা প্রামাণ্য চিত্র ‘মুক্তির গান’। এটি মুক্তি পায় ১৯৯৫ সালে। দক্ষিণ এশিয়া চলচ্চিত্র পুরস্কারে স্পেশাল মেনশন ও ২০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কার পায় ‘মুক্তির গান’।

৮. জয়যাত্রা
অভিনেতা তৌকীর আহমেদ পরিচালিত প্রথম সিনেমা এটি। মুক্তি পায় ২০০৪ সালে। সদ্য প্রয়াত বিখ্যাত কাহিনীকার ও নির্মাতা আমজাদ হোসেনের গল্পে এটি নির্মিত। জয়যাত্রা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন একদল মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, মৃত্যু ও বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্প। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন বিপাশা হায়াত, আজিজুল হাকিম, মাহফুজ আহমেদ, হুমায়ুন ফরীদি, তারিক আনাম খান, আবুল হায়াত, মেহবুবা মাহনূর চাঁদনী।

৯. শ্যামল ছায়া
এটি মুক্তিযুদ্ধের ওপর পরিচালক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। এটি মুক্তি পেয়েছিল ২০০৩ সালে। ছবিতে মুক্তিযোদ্ধা চরিত্রে দেখা গিয়েছিল প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদিকে। আরও অভিনয় করেছেন রিয়াজ, মেহের আফরোজ শাওন, স্বাধীন খসরু, শিমুল, চ্যালেঞ্জার, ফারুক আহমেদ, ডা. এজাজ ও তানিয়া আহমেদ।

১০. গেরিলা
নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে নির্মিত আরেকটি সিনেমা ‘গেরিলা’। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান' উপন্যাস থেকে নির্মিত। অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, ফেরদৌস, এটিএম শামসুজ্জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা, গাজী রাকায়েত প্রমুখ। মুক্তিযুদ্ধের সময় গেরিলা হামলার চিত্র এতে উঠে এসেছে।

আরও দেখতে পারেন মমতাজ আলীর ‘রক্তাক্ত বাংলা’, আনন্দের ‘বাঘা বাঙ্গালী’, হারুন-অর রশিদের ‘মেঘের অনেক রং’ ছবিগুলো। তালিকায় রাখতে পারেন ‘নদীর নাম মধুমতি’, ‘আগামী’, ‘মাটির ময়না’, ‘খেলাঘর’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘জীবনঢুলী’, ‘৭১-এর সংগ্রাম’, ‘মেঘমল্লার’, ‘৭১-এর মা জননী’, ‘অনুক্রোশ’, ‘হৃদয়ে ৭১’, ‘অনিল বাগচীর একদিন’, ‘এইতো প্রেম’, ‘শোভানের স্বাধীনতা’, ‘ভুবন মাঝি’ ইত্যাদি।

মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্যচিত্র দেখতে চাইলে চোখ রাখতে পারেন জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’।

Bootstrap Image Preview