Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে কিছুই বলবো না: মামুনুল হক

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:২৪ PM
আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:২৪ PM

bdmorning Image Preview


বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা ও ভাঙচুরের ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহের যে মামলা করা হয়েছে, তার ‘তথ্য-উপাত্ত দুর্বল হওয়ায়’ প্রাথমিক তদন্তেই তা খারিজ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।

গতকাল বৃহস্পতিবার একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, সরকার যদি আলেম-উলামাদের বাধা উপেক্ষা করে দোলাইরপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করে, তাহলে তাঁরা কিছুই বলবেন না, তবে দুঃখ পাবেন।

প্রশ্ন : আপনারা দাবি করছেন, ভাস্কর্য ও মূর্তি একই জিনিস। আসলে তো তা নয়।

মামুনুল হক : ইসলামের দৃষ্টিতে ভাস্কর্য ও মূর্তি একই জিনিস। মদিনা সনদের কোথাও ভাস্কর্য ও মূর্তিকে আলাদা বলা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের সংগঠনটি একটি সঠিক বিষয়কে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছে এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। সরকার যদি আলেম-উলামাদের বাধা উপেক্ষা করে দোলাইরপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করে, তাহলে তাঁরা কিছুই বলবেন না, তবে মনে দুঃখ পাবেন।

প্রশ্ন : আপনার বক্তব্যের কারণেই দেশে যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা কি অস্বীকার করবেন?

মামুনুল হক : ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকারের কাঁধে ভর করে একটি গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছে। এখন যারা রাজনীতির মাঠ গরম করছে, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য ভালো করছে না। কারণ আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলোর পদপ্রত্যাশীরাই মূলত মাঠে রয়েছে।

ভাস্কর্য ইস্যুতে আমরা বা হেফাজতে ইসলাম সরকার বা কারো প্রতিপক্ষ নয়। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বেফাক সভাপতির নেতৃত্বে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি, বৈঠকে সব সমাধান হয়ে যাবে। এটার সমাধান সরকারই করতে পারে। রাজপথে মোকাবেলার দরকার নেই। প্রচ্ছন্ন হুমকিদাতা অপচক্রকে নিয়ন্ত্রণ করলেই কোনো সমস্যা হবে না। ইউটিউবে আমার দেওয়া বক্তব্য কাটছাঁট করে প্রচার করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশ্ন : আপনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। কিভাবে মোকাবেলা করবেন?

মামুনুল হক : বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যুতে যে মামলা করা হয়েছে, তার তথ্য-উপাত্ত দুর্বল। প্রাথমিক তদন্তেই তা খারিজ হয়ে যাবে বলে আশা করছি।

প্রশ্ন  : জামায়াতের সঙ্গে আপনার সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথাও বলেছেন।

মামুনুল হক : জামায়াতের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো কথাও আমি বলিনি। তবে জামায়াত যদি দুটি বিষয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং ভুল থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলে তাদের সাথে যেকোনো দল ঐক্য করতে পারবে। বিষয় দুটি হচ্ছে—জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদীর বিভিন্ন বক্তব্য ইসলামের মূলভিত্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অন্যটি একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে তাদের ভূমিকা। ভবিষ্যতে ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে এক ধরনের জোট করার চিন্তা আছে। কারণ ইসলামী দলগুলো একই বিষয়ে ভিন্নভাবে আন্দোলনে আছে।

প্রশ্ন  : বাংলাদেশ তো ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। সেখানে আপনাদের রাজনীতি নিয়েই তো প্রশ্ন থাকে।

মামুনুল হক : মহান মুক্তিযুদ্ধের আগে ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়টি ছিল না। এটি স্বাধীনতার পরে নতুন করে চেতনায় সংযুক্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্মনিরপেক্ষতার কথা না থাকায় এ দেশের সবাই যুদ্ধে নেমেছিল। শুধু জামায়াতের একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। পরবর্তীতে ধর্মনিরপেক্ষতার যে বিষয়টি আনা হয়েছে, তা আমরা সমর্থন করি না।

১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির সময় ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানিরা তা না করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে ইসলামকে ব্যবহার করেছে। এটা ছিল বড় ধরনের একটি প্রতারণা।

প্রশ্ন  : আল্লামা শফীর অনুসারীরা হেফাজতের নতুন কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। হেফাজত কি শক্তি নিয়ে টিকে থাকতে পারবে?

মামুনুল হক : আল্লামা শফীর অনুসারী হিসেবে যাঁরা দাবি করছেন, তাঁরা কোনো শক্তিশালী অংশ নয়। তাঁরা কেন্দ্রীয় কমিটিও করতে পারেননি। আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজতের সবাই ঐক্যবদ্ধ। এই ঐক্য কেউ নষ্ট করতে পারবে না।

সাক্ষাৎকারটি কালের কণ্ঠ থেকে সংগৃহীত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোশতাক আহমদ।

Bootstrap Image Preview