রহস্যময় একটি দ্বীপ বাল্ট্রা। এর অমীমাংসিত রহস্য আজও বিস্ময়ের সৃষ্টি করে রেখেছে। দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের নিকটবর্তী ১৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। এরই বিশেষ একটি বাল্ট্রা দ্বীপ। জনবসতিশূন্য দ্বীপ এটি।
অন্য ১২টি দ্বীপের চেয়ে বাল্ট্রা দ্বীপ একদমই ভিন্ন, অদ্ভুত ও রহস্যময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কৌশলগত কারণে এ দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে বিমান ঘাঁটি স্থাপন করেছিল মার্কিন সরকার। তারপর থেকে এই দ্বীপের রহস্য জানতে পারে বিশ্ববাসী।
গ্রীষ্মমণ্ডলীয় হওয়ায় এই দ্বীপপুঞ্জে প্রচুর বৃষ্টি হয়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, বৃষ্টির একটি ফোঁটাও পড়ে না বাল্ট্রাতে। কোনো এক রহস্যময় কারণে বাল্ট্রার অনেক ওপর দিয়ে বৃষ্টি অন্যপাশে গিয়ে পড়ে। বৃষ্টি যতই প্রবল হোক, সেই দ্বীপে পড়ে না এক ফোঁটাও।
বাল্ট্রা ও পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজের মাঝে তিন ফুট গভীর ও কয়েক ফুট চওড়া একটি খাল রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে ফ্রেন্সিস ওয়ানার ছিলেন একজন দায়িত্বরত অফিসার।
এই দ্বীপপুঞ্জে ভয়াবহ সব ঘটনা ও অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন তিনি। পরবর্তী সময়ে যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে বিস্ময়ের ঝড় ওঠে। তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের সবচেয়ে বড় বড় বিস্ময়কর ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি বাল্ট্রা দ্বীপে গিয়ে। একটা নয় দুটো নয়, একের পর এক অসংখ্য অবিশ্বাস্য ব্যাপার ঘটেছে আমার চোখের সামনে। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে শুধু দৃষ্টি মেলে দেখেই গেছি এসব। উপযুক্ত কোনো উত্তর বা ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি।
তার ভাষ্যমতে, এই দ্বীপটির ভেতর সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি শক্তি কাজ করে। যার প্রভাবে একের পর এক রহস্যময় ও অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে। বাল্ট্রাতে পৌঁছালেই নাবিক বা অভিযাত্রীর কম্পাস অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। সবসময় উত্তর দিক নির্দেশকারী কম্পাস এখানে কোনো সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আবার দিক নির্দেশক কাঁটা ইচ্ছামতো ঘুরতে থাকে অথবা উল্টোপাল্টা দিক নির্দেশ করে।
সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলো বাল্ট্রা দ্বীপের ওপর বিমান থাকাকালীনও এমন অদ্ভুত আচরণ করে কম্পাস। আবার এই দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক হয়ে যায়। বাল্ট্রার আরেকটি অদ্ভুত দিক হলো, এখানে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কারোর মাথা হালকা হয়ে যায়। অজানা-অচেনা কোনো এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার আশ্চর্য রকম অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। বেশিক্ষণ এই দ্বীপে থাকলে, চলে আসার পরও কিছুদিন সেই আশ্চর্য অনুভূতির রেশ থেকে যায়।
বাল্ট্রা বাদে এখানে বাকি যে দ্বীপ রয়েছে, সেগুলোতে সিল মাছ, ইগুয়ানা, দানবীয় কচ্ছপ, গিরগিটিসহ বিরল প্রজাতির কিছু পাখির দেখা মেলে। কিন্তু বাল্ট্রায় নেই কোনো উদ্ভিদ, প্রাণী বা কীটপতঙ্গ। প্রাণীগুলো বাল্ট্রাকে এড়িয়ে পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজে চলে যায়। এমনকি উড়ন্ত পাখিগুলো বাল্ট্রার কাছে এসে ফিরে যায়। দেখলে মনে হয় যেন কোনো দেওয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে তারা।
এই দ্বীপের রহস্য নিয়ে কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা আজও এ রহস্যের কোনো কূলকিনারা করতে পারেননি।