স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, স্বল্প বয়সে বেশি স্বাধীনতা, বাবা-মায়েদের উদাসীনতায় সন্তানরা কু-পথে চলে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের রমরমা পরিস্থিতি আরো জটিল এবং ভয়াবহ করছে অল্প বয়সীদের। এর সবচেয়ে বড় কু-প্রভাব সমাজের ওপর পড়তে দেখা যাচ্ছে।
ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনা দেশের নানা প্রান্তে ভয়াবহ আকারে বেড়ে চলেছে। ভয়ঙ্করভাবে উপমহাদেশে বেড়ে চলেছে ধর্ষণ, হত্যা এবং ধর্ষণের পর পুড়িয়ে মারার ঘটনা। ভারতের হায়দরাবাদের নারী পশু চিকিৎসককে হত্যার ঘটনা- এ সবেরই সব থেকে বড় উদাহরণ।
যখন দিশার দুই চাকার গাড়িটি খারাপ হয়ে গিয়েছিল তখন তার অসহায়তার সুযোগ নিয়ে প্রথমে গণধর্ষণ করা হয় এবং পরে আগুনে পুড়িয়ে মারে চারজন। দোষী চারজনেরই বয়স ২০ বছরের আশপাশে। কারো কম, কারো এক-দুই বছর বেশি।
সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, অত্যধিক স্বাধীনতা, খারাপ বন্ধুত্ব, ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং যৌন ভিডিওর বাড়বাড়ন্ত এইসব ঘটনার জন্য দায়ী। তরুণী এবং নারীদের ধর্ষণ সমাজে কর্কট রোগের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। বছর কয়েক আগের কথা, ভারতের দেরহাদুনে যুবকরা যৌন ভিডিও দেখে নিজেদের তরুণী বান্ধবীকে যৌন নির্যাতন করে, যখন সেই তরুণী একা ছিলেন।
পরবর্তীতে পুলিশ ওই যুবকদের গ্রেপ্তার করার পর জানতে পারে প্রতিদিন ইন্টারনেটের মাধ্যমে যৌন দৃশ্য এবং যৌন ভিডিও দেখত তারা। স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা নীল ছবি এবং যৌন দৃশ্য দেখার প্রবণতা বাড়িয়ে তুলেছে।
উত্তরপ্রদেশ হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে, ২০১৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ৮৫৭ টি পর্ন ভিডিও এবং সাইট বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেছিল। একইসঙ্গে ৮২৭টি ইন্টারনেট সাইট তাদের পর্ন সাইট ব্লক করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে।
আবার পর্ন ভিডিও এবং পর্ন সাইটের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছে ভারতে। প্রবীণদের উচিত সবার আগে, তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের দিকে নজর দিতে হবে। যাতে তারা স্মার্টফোন নিতে না পারে এবং নিজে বা বন্ধুদের সঙ্গে নীল ছবি দেখার সুযোগ না পায় সে দিকটা খেয়াল রাখতে হবে, পর্ন সাইটের যোগাযোগ বন্ধ করতে হবে, অফুরন্ত ফোন ডেটা এবং ইন্টারনেটের দিকে রাশ টানতে হবে বরে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সন্তানরা যেন কুসঙ্গে না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে এবং তাদের সঠিক বন্ধু নির্বাচনের জন্য বোঝাতে হবে। যাতে বন্ধুদের সঙ্গে মিশে পর্ন সাইট না দেখে, না দেখার সুযোগ পায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।সন্তানদের একা রাখা চলবে না। একা থাকার ফলে তাদের মধ্যে একাকিত্ব বোধ তৈরি হয়, এ সবই তাদের পর্ন ভিডিও দেখার দিকে নিয়ে যায়।
যদি তাদের ব্যবহারে কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়ে তাহলে দ্রুত কাউন্সেলিং করা উচিত। যেন তারা কোনোভাবেই পর্ন ভিডিওর প্রতি আশক্ত হয়ে না পড়ে। অসংখ্য পর্ন সাইট সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পর্ন সাইট পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। পর্ন সাইটের প্রাচুর্য এবং ভিডিওর অশ্লীলতা যুব সমাজকে আকর্ষণ করে এবং তারা কার্যত নীল ছবি এবং পর্ন সাইটের ক্রীতদাসে পরিণত হয়ে পড়ে।
হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা অশ্লীল ভিডিও এবং পর্ন ভিডিও বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো চ্যাট, কখনো প্রেম নিবেদন, কখনো আবার পার্টির নাম করে যুবকরা মেয়েদের বিরক্ত করে। আবার কখনো লরি চালক-খালাসি কোনো নারীর একাকিত্বের সুযোগ নিয়ে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালায়।
নীল ছবির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যুবক-তরুণরা অল্প বয়সের মেয়েদের গোপনে ছবি তোলে লুকিয়ে রাখা ক্যামেরার মাধ্যমে। কখনো গোসলের ছবি, কখনো পোশাক পরিবর্তনের ছবি। এই সব ছবি দেখিয়ে পরবর্তী সময় যৌন নির্যাতন চালায়। নীল ছবি এবং নিষিদ্ধ ভিডিও যুব সমাজের ওপর খারাপ প্রভাব তৈরি করছে, এবং নারীদের প্রতি তাদের কু-মানসিকতার জন্ম দিচ্ছে।