Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৬ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

লিচু টক্সিসিটি: আতঙ্ক এবং করণীয়

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ মে ২০১৯, ০৬:৪২ PM
আপডেট: ৩০ মে ২০১৯, ০৬:৪২ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


দুদিন আগে প্রিয় এক জুনিয়র ডাক্তারের সাথে দেখা। কী খবর? উত্তরে বললো, মন খারাপ আপু। প্রিন্সিপাল স্যারের পিএ’র ছেলের অবস্থা খুব খারাপ। বার বার খিঁচুনি হচ্ছে। এনকেফেলাইটিসের লক্ষ্মণ। যে কোনো সময় কিছু একটা হতে পারে।

কী বলো! হুম আপু। বাচ্চাটার বয়স মাত্র পাঁচ। বলেন তো কেমন লাগে! লিচু খাওয়ার পর থেকে নাকি এমনটা হচ্ছে। কয়েকবার বমি করেছে, তারপর থেকেই খিঁচুনি। এখন তো প্রায় কোমায় আছে। প্রগনোসিস ভালো মনে হচ্ছে না।

একটা বাচ্চা মাত্র লিচু খাওয়ার অপরাধে এমন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকবে এটা কেমন কথা! অস্থির লাগছিলো ঘটণা কী জানার জন্য। কী আছে লিচুর মধ্যে যে এমন মরণঘাতী হয়ে ওঠল? আমি তো লিচু গপাগপ করে খাই।

ছোটো পুত্র মিহনও লিচু পছন্দ করে। ইশ, এটাও বাদ দিতে হবে খাদ্য তালিকা থেকে! কীটনাশক, ক্যামিকেল আর কত? পরে দেখলাম এসব না, লিচু নিজেই নাকি দায়ী এমন কর্মকাণ্ডের জন্য! আসল ঘটনা খুঁজতে গিয়ে এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত কিছুটা জেনেছি। আসুন আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করি।

লিচু মৌসুমি ফল হিসেবে সবচেয়ে মজার। খোসা ছিলে টপাটপ মুখে পুরলেই হলো। অদ্ভুত আনন্দে মন ভরে যায়। যেমন মোলায়েম রং তেমনি পেলব টেস্ট! আহা! এই লিচুতেই হাইপোগ্লাইসিন নামক এক ধরনের উপাদান থাকে। যা রক্তের গ্লুকোজ কমিয়ে দিতে সক্ষম।

আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বিজ্ঞান পত্রিকা ‘ল্যানসেট’ এর সাম্প্রতিক সংখ্যায় প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে। সাধারণত খালি পেটে অনেকগুলি লিচু মুলত অপরিপক্ব লিচু খেলে লিচুতে থাকা টক্সিন হাইপোগ্লাইসিনের প্রভাবে সুস্থ-সবল শিশুদেরও হঠাৎ খিঁচুনি আর বমি শুরু হতে পারে । যাদের অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে । আর এভাবে আক্রান্ত হওয়া অর্ধেকেরও বেশি শিশু মারা যায়।

রক্তে গ্লুকোজ কমে গেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়। আর হাইপোগ্লাইসেমিয়া মারাত্মক এক অবস্থার নাম। শরীরে বছরের পর বছর গ্লুকোজ মানে সুগারের আধিক্য নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকেতে পারে, ডায়াবেটিস রোগীরা তার প্রমান। অথচ সুগার কমে গেলে একটুও সময় দিবে না। ঝিমঝিম করতে করতে ঘাম বের হবে, মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগবে, শ্বাসকষ্ট হবে। তারপর বমি, খিঁচুনি, এমনকি মৃত্যু ও হতে পারে। কী সাংঘাতিক!

তাহলে উপায়? উপায় তো নিশ্চয়ই আছে। মৃত্যুর ভয়ে তো লিচু খাওয়া ছেড়ে দিতে পারি না। দেখি কি করলে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না। এখন পর্যন্ত দেখা গেছে কাঁচা লিচুতে হাইপোগ্লাইন থাকে বেশি, প্রায় ১০০০ ppm! ও মায়া মায়া গো! আর পাকা লিচুতে মাত্র ০.১ ppm। যা ততোটা ক্ষতিকর হওয়ার কথা নয়।

তবে যে সব বাচ্চারা অপুষ্টিতে ভোগে কিংবা আগের রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিল অর্থাৎ যাদের শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা আগেই কম ছিলো তারা যদি অপরিপক্ক লিচু একসাথে অনেকগুলো খেয়ে ফেলে তাদের ক্ষেত্রে এটা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

মনে রাখতে হবে, কোনো শিশু যদি আক্রান্ত হয়েই যায় সাথে সাথে চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ হাসপাতালে পাঠাতে হবে। সেখানে শরীরে দ্রুত গ্লুকোজ প্রতিস্থাপন, খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ, শরীরে লবণ, পানির ভারসাম্য রক্ষা ও পিএইচ লেভেল মেইনটেইন করার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা হবে। অন্য কোন কারণে হলো কিনা সেটাও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যাবে।

এখন করনীয় কি তাহলে?

তেমন কিছুই না। একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে বিপদমুক্ত হওয়া সম্ভব। যেমন- খালি পেটে লিচু বিশেষ করে অপরিপক্ক লিচু খাওয়া যাবে না। শিশুদের খালিপেট লিচু খেতে নিরুৎসাহিত করা এবং বড়দেরও খালিপেট লিচু না খাওয়াই ভালো। বর্তমানে ইফতার এ লিচুর প্রচলন বেড়েছে।সারাদিন রোজা থাকার কারনে এমনিতেই হাইপোগ্লাসেমিক থাকে তারপর লিচু খেলে আক্রান্ত হবার একটা সম্ভাবনা থাকতেই পারে।

একটু সচেতনতা আমাদের প্রিয়জনকে সুস্থ এবং বিপদমুক্ত রাখতে পারে। আসুন সচেতন হই নিজে সুস্থ থাকি এবং প্রিয়জনকে সুস্থ রাখি।

ডা. ছাবিকুন নাহার
চিকিৎসক
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Bootstrap Image Preview