মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফটোগ্রাফি (আইসিপি) কর্তৃক আয়োজিত ইনফিনিটি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন কিংবদন্তি আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে । আলোকচিত্রের ক্ষেত্রে এটি দুনিয়ার শীর্ষ মর্যাদাপূর্ণ স্বীকৃতি হিসাবে বিবেচিত হয়।
নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় আজ বিকালে আয়োজিত এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে অন্যান্য ফটো সাংবাদিকদের সাথে শহিদুল আলম তার অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন। তিনি ‘স্পেশাল প্রেজেন্টেশন’ ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ডটি লাভ করেন।
পুরষ্কার পাওয়ার পর নিজের অভিজ্ঞতা ও প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শহিদুল আলম বলেন- গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সে ব্যাপারে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়প্রতীজ্ঞ।যে কোনো অবস্থায় ক্যামেরা হাতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে থেকে সেই প্রতিবাদ তিনি চালিয়ে যাবেন।
তিনি আরও বলেন, 'আমি এই পুরস্কারটিকে উৎসর্গ করি আমার কেরানীগঞ্জের (কারাগারের) বন্ধুদের জন্যে যারা অন্যায়ভাবে সেখানে রয়েছেন। এবং যাদের মুক্তি আমাদের সবার দাবি'।
পৃথক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। তাই আমার জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের মানুষের জন্য গ্রহণ করেছি এই অ্যাওয়ার্ড। আমাদের বাকস্বাধীনতার ব্যাপারে যে প্রতিরোধ গড়ে উঠছে, আমরা যে সংগ্রামী এবং স্বাধীনচেতা সেটারই স্বীকৃতি এই অ্যাওয়ার্ড। তাছাড়া আলোকচিত্রশিল্পে বাংলাদেশের যে অগ্রগতি ও অর্জন তার প্রতি সম্মান জানানো হয়েছে ইনফিনিটি অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার মধ্য দিয়ে।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অব ফটোগ্রাফি আয়োজিত ৩৫তম বার্ষিক এই অনুষ্ঠানে ‘ইনফিনিটি অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্ত অন্যান্য ফটো সাংবাদিকরা হলেন: দক্ষিণ আফ্রিকার রোজালিন ফক্স সলোমন (লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট), যুক্তরাষ্ট্রের দাউদ বে (আর্ট), যুক্তরাজ্যের জাদি স্মিত (ক্রিটিক্যাল রাইটিং এন্ড রিসার্চ), যুক্তরাষ্ট্রের জেস টি ড্রাগন (ইমার্জিং ফটোগ্রাফার)।
ব্যতিক্রমী ও জমকালো এই অনুষ্ঠানে অ্যাওয়ার্ড প্রদানের আগে সংশ্লিষ্টদের কর্মের ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে তাঁর ওপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এতে তাঁর বিভিন্ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি গত বছর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন প্রদান, অতঃপর গ্রেফতার হওয়ার প্রসঙ্গটিও রয়েছে।
৩৫তম ইনফিনিটি অ্যাওয়ার্ড বিতরণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকায় শহিদুল আলম সম্পর্কে বলা হয়, ২০১৮ সালের টাইম ম্যাগাজিন পারসন অব দ্য ইয়ার শহিদুল একজন আলোকচিত্রী, লেখক ও মানবাধিকার কর্মী। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করেন। ১৯৮৪ সালে দেশে ফিরে ফটোগ্রাফী শুরু করার আগে তিনি জেনারেল এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-প্রচারণায় অংশ নেন। পরবর্তীকালে তিনি দৃক নামে একটি স্বনামখ্যাত আলোকচিত্র লাইব্রেরী এবং পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি প্রবর্তন করেন ছবিমেলা নামে একটি আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র উৎসবের। তিনি বিভিন্ন সময় দুনিয়ার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, স্ট্যানফোর্ড, কেমব্রিজ ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি সান্ডারল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর এবং রয়েল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সম্মানীয় ফেলো। ২০১৮ সালে তিনি সরকারি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে কারারুদ্ধ এবং নির্যাতিত হন বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।