এক দৃষ্টিতে সবাই তাকিয়ে আছেন পর্দার দিকে। সামনে বসা দর্শকদের কেউ কেউ চোখের কোণে কী যেন মুছছেন। দেখা গেল, পর্দায় বাবা-মেয়ের আবেগঘন দৃশ্য দর্শককেও আক্রান্ত করেছে। তাহসান আর রাইসার কষ্টে দর্শকও একাত্ম। পর্দার ভেতরে তারকার কান্না ছুঁয়ে যায় আমন্ত্রিত অতিথি আর দর্শকদের। ‘যদি একদিন’ সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনীতে শনিবার এমনটাই দেখা গেল।
গত শুক্রবার রাজধানীসহ দেশের ২২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘যদি একদিন’। ঢাকায় বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে আজ ছবিটির বিশেষ প্রদর্শনীতে এসেছেন অনেকেই। তালিকায় তারকারা যেমন আছেন, তেমনি পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান, শিল্পী-কলাকুশলীর পরিচিতজনেরাও এসে হাজির। নায়িকা শ্রাবন্তী যখন প্রেক্ষাগৃহে ঢুকলেন, তখন ছবি ত্রিশ মিনিট দেখা হয়ে গেছে।
বিশেষ প্রদর্শনীতে আসা দর্শকেরা নির্ধারিত আসনে জায়গা না পেয়ে বসে পড়েন মেঝেতে। কেউ কেউ ফিরে গেলেও কষ্ট করে এসে কেউ ছবিটি না দেখে বাড়ি ফিরতে চাননি। এদের মধ্যে আবার কেউবা এসেছেন দ্বিতীয়বারের মতো ছবিটি দেখার লোভে। বাবা-মেয়ের সম্পর্কের টানাপোড়েনের এই গল্পের ছবি দেখে সাধারণ দর্শকের চোখ বেয়ে যেমন পানি পড়েছে, তেমনি আমন্ত্রিত হয়ে অভিনয়শিল্পী-পরিচালকেরাও কান্না থামাতে পারেননি।
‘যদি একদিন’ সিনেমা বাবা-মেয়ের অন্য রকম স্নেহ-ভালোবাসা গল্প। নানা টানাপোড়েনে এগিয়ে যায় গল্প। সিনেমায় বাবা ফয়সালের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাহসান ও মেয়ে রূপকথার চরিত্রে শিশুশিল্পী রাইসা। ছবিটি একা দেখতে এসেছিলেন কোনো বাবা। ছবিটি দেখতে দেখতে একসময় তার মনে হলো, কেন তিনি সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে আসলেন না! শেষ পর্যন্ত আফসোস করেছেন। তবে শিগগিরই স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে আবারও ছবিটি দেখার ইচ্ছে পোষণ করেছেন তিনি।
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রুবায়েত আহমেদ বলেন, পর্দার প্রতিটি দৃশ্যে আমি মিস করছিলাম আমার মেয়ে আর মাকে। আমার বিশ্বাস, একই অনুভূতি অন্য সবারও। সবার ঘরে হয়তো রাইসার মতো এমন কন্যাশিশু আছে। এই ছবির আনাচ-কানাচে এমনই কিছু আবেগ, ভালোবাসা ছড়ানো আছে, কারণ ছাড়াই চোখ ভিজে যায়।
পরিচালক নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামূল বলেন, এই ছবিতে প্রতিটি মেয়ের বাবার দেখা উচিত। ছবিটি আমাকে কাঁদিয়েছে। আমি নীরবে চোখের পানি মুছেছি। ভেবেছি, শুধু আমার বুঝি এমন অবস্থা। পাশের সিটে তাকিয়ে দেখি, তিনিও চোখ মুছছেন। পরিচালক মোস্তফা কামাল রাজ অসাধারণ একটি গল্প বাছাই করেছেন। পরিবারের সবার দেখার মতোন একটি সিনেমা। এই সিনেমায় আবেগ, অনুভূতি, বন্ধন, বন্ধুত্ব ও উদারতার চমৎকার সব উপাদান রয়েছে।
ছবি দেখা শেষে দর্শকের এমন ভালোবাসায় অভিভূত পরিচালক রাজ, অভিনয়শিল্পী তাহসান, শ্রাবন্তী, রাইসা, সাবেরী আলম থেকে শুরু করে সবাই। রাজ জানান, আমি আগেও কয়েকটি সিনেমা বানিয়েছি। তবে এই সিনেমা আমার অনেক বেশি ভালোবাসার, আবেগের, অনুভূতির এক ফসল। অনেক পরিশ্রমে এমন একটি চলচ্চিত্র বানানো হয়। আমিও সেই চেষ্টা করে গেছি। দর্শক যেভাবে তাঁদের আবেগ-অনুভূতির কথা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আমাকে জানাচ্ছেন, আমি অনুপ্রাণিত হচ্ছি।
এর আগে গায়ক তাহসান অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করেছেন। প্রথম সিনেমায় ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষী আর সহকর্মীরা যে ভালোবাসা দেখাচ্ছেন, তাতে ভীষণ কৃতজ্ঞ। তিনি বললেন, সবার উচ্ছ্বাস ভালো লাগছে। কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে দর্শক নাকি টিকিটও পাননি। আমরা দর্শকের ভালো লাগার একটি সিনেমা উপহার দিতে চেয়েছি। দর্শক বেশ আগ্রহ নিয়ে ছবিটি দেখছেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য সুখবর।