Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৩ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রথমবারের মত বাংলাদেশে বিদেশির সফল কিডনি প্রতিস্থাপন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১০:০৩ PM
আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১০:০৩ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত


বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। হাসপাতালের পরিবেশ ভালো না, চিকিৎসা পদ্ধতি ভালো না, চিকিৎসক-নার্স-ওয়ার্ডবয়ের ব্যবহার খারাপ, খরচ বেশি-এমন নানা অভিযোগ লোকমুখে হরহামেশায় শোনা যায়। অনেকেই কথায় কথায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে ছুটে যান। বিশেষ করে জটিল রোগব্যাধি হলে তো কথাই নেই।

কিন্তু কেউ যদি শোনেন মালয়েশিয়া থেকে এক বিদেশিনী এসে তিন মাস হাসপাতালে থেকে সফল কিডনি প্রতিস্থাপন করে সুস্থ হয়ে হাসিমুখে দেশে ফিরছেন, তাহলে সবাই উৎসুক হয়ে জানতে চাইবেন কোন হাসপাতালে সফল কিডনি প্রতিস্থাপনটি হলো।

বিষয়টি শুনতে গল্পের মতো শোনালেও দেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রথম কোনো বিদেশির সফল কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে।

মালয়েশিয়ান এই গৃহবধূর নাম রোজ লায়লা। বাংলাদেশি স্বামীর হাত ধরে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে বাংলাদেশে ছুটে এসেছিলেন তিন মাস আগে। সফল কিডনি প্রতিস্থাপন করে সুস্থ হয়ে আজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় মালয়েশিয়া ফিরে যাচ্ছেন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রোজ লায়লার স্বামী চাঁদপুর সদরের ফকরাবাদের মিন্টু পাটোয়ারীর ছেলে বিন সালাউদ্দিন জানান, জীবিকার তাগিদে এক যুগ আগে বাংলাদেশ ছেড়ে মালয়েশিয়া যান। ফার্নিচারের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুবাদে রোজ লায়লার সঙ্গে পরিচয়, প্রেম ও অবশেষে গত বছরের ১৪ মার্চ দুজন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পরের দিনগুলো সুখেই কাটছিল। কিন্তু বিয়ের তিন মাস যেতে না যেতেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন রোজ লায়লা। ধরা পড়ে তার দুটি কিডনিই পুরোপুরি অচল।

তিনি জানান, মালয়েশিয়ায় কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হলেও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন সেখানে নাম লিখালে তার স্ত্রীর সিরিয়াল পড়বে তিন বছর পর। এই তিন বছর ডায়ালাইসিস নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে-এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি সালাউদ্দিন ও তার স্ত্রী লায়লা।

তিন মাস আগে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশে ছুটে আসেন। বিএসএমএমইউতে চাকরিরত সোহেল নামে এক বন্ধুর মাধ্যমে কিডনি প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। রোজ লায়লাকে কিডনি দিতে রাজি হন তা বড় বোন রুহানি। ইউরোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনাক্রমে নেফ্রোলজি বিভাগের অধীনে ভর্তি হন।

সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গত ৫ জানুয়ারি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সফলভাবে সম্পন্ন করে ইউরোলজি বিভাগ। কিডনি প্রতিস্থাপনসহ সার্বিক চিকিৎসা কার্যক্রমের সঙ্গে যারা ছিলেন তারা হলেন ইউরোলজি বিভাগের ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিটের অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে ডা. তৌহিদ দীপু, ডা. এরশাদ, ডা. রেমিন রাফি, ডা. সাইফুল, ডা. জাকির সুমন। এ ছাড়া নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মাদ রফিকুল আলমের নেতৃত্বে ছিলেন নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আছিয়া খানম ও অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম।

দীর্ঘ তিন মাস নেফ্রোলজি বিভাগের অধীনে ভর্তি থেকে আজ বৃহস্পতিবার ছাড়পত্র পেয়েছেন রোজ লায়লা। সন্ধ্যা ৭টায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সালাউদ্দিন বলেন, ‘বিদেশে থাকলেও বাংলাদেশের জন্য মনটা সব সময় কাঁদে। বাংলাদেশের চিকিৎসা নিয়ে নানা নেতিবাচক কথা শোনা গেলেও তিনি দেশের চিকিৎসার ওপর ভরসা ও আস্থা রেখে বিদেশিনী স্ত্রীকে নিয়ে দেশে আসেন। সার্বিক চিকিৎসায় অনেক খুশি তিনি।’

তিনি জানান, অস্ত্রোপচারে মাত্র ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ হলেও দুটি ইনজেকশন দুই লাখ টাকায় কিনতে হয়েছে। তাছাড়া তিনমাস কেবিন ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ হয়। সার্বিকভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় তিনি ও তার স্ত্রী খুবই খুশি।

Bootstrap Image Preview