Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি আদায়

নির্দেশনা মানছে না বিদ্যালয়গুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৪:৫৮ PM
আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৪:৫৮ PM

bdmorning Image Preview


আইন না মানা যেন রীতিতে দাঁড়িয়ে গেছে। যে যেখানে, যেভাবে পাচ্ছে ফুসরত পেলেই আইন অমান্য করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও সেদিক থেকে পিছিয়ে নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি যাতে আদায় করতে না পারে, সেজন্য তা নির্ধারণ করে দেয় মাধ্যমিক ও  উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। তবে বোর্ডের নির্দেশ মানছে না বিদ্যালয়গুলো।

বোর্ড নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযানও চালিয়েছে। তার সত্যতাও খুঁজে পেয়েছে দুদক।

জানা গেছে, কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বোর্ডের নির্ধারিত ফি ছাড়াও বাধ্যতামূলকভাবে কোচিং, মডেল টেস্ট, র‌্যাগ ডে, শিক্ষক কল্যাণ, এমনকি বিবিধ খরচের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জিয়াউক হক বলেন, ‘বোর্ডের নির্ধারিত ফি ছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক টাকাও বেশি নেওয়া যাবে না। যারা এসব করছে, তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বোর্ডের একটি মনিটরিং দল এ নিয়ে কাজও করছে।’ বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, বিজ্ঞান বিভাগ চতুর্থ বিষয়সহ ফরম পূরণের ফি ১ হাজার ৮০০ টাকা। তবে এর মধ্যে বোর্ড ফি ১ হাজার ৩৮৫ টাকা, বাকিটা কেন্দ্র ফি। ব্যবসায় শিক্ষায় চতুর্থ বিভাগসহ ১ হাজার ৬৮০ টাকা। মানবিক বিভাগের চতুর্থ বিভাগসহ ফরম পূরণ ১ হাজার ৬৮০ টাকা।

এ ছাড়া ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণে শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও খেলাধুলা-১৪৭ এবং ক্যারিয়ার শিক্ষা-১৫৬ বিষয়ের পরীক্ষার ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে সম্পন্ন হবে বিধায় এ দুটির বোর্ড ফি দিতে হবে না। তবে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য এ ফি লাগবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) প্রফেসর মোহাম্মদ শামছুল হুদা বলেন, পরীক্ষার ফি ছাড়া অন্য খাতে এর সঙ্গে অর্থ আদায় করা যাবে না। ভর্তির সময় বিবিধ খাতে টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানগুলো। অনৈতিক অর্থ আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠানের ম্যানিজিং কমিটিকে শোকজ করা হবে। এমপিওভুক্ত হলে এমপিও স্থগিত করারও সুযোগ আছে প্রশাসনের।

সম্প্রতি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ফরম পূরণের ফির সঙ্গে কোচিং, মডেল টেস্ট, র‌্যাগ ডে ফি নামে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ছয় হাজার করে টাকা নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে দুদকের অভিযানের কারণে প্রতিষ্ঠানটি অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেবে বলে নোটিশ টানিয়ে দেয়। দনিয়া একে স্কুল অ্যান্ড কলেজে নির্ধারিত ফি ছাড়া কোচিং, মডেল টেস্ট, শিক্ষক কল্যাণ তহবিল এবং বিবিধ খাতের নামে আদায় করা হয় ৩ হাজার ৮০০ টাকা করে। হাজারীবাগের সালেহা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়।

এদিকে ঢাকার বাইরে অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিয়ম মানছে না এমন অভিযোগ উঠে আসছে। যেমন দেলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। তারা নিজেদের ইচ্ছে মত নোটিশ বোর্ডে টাকা আদায় করার চার্ট টানিয়ে দেয়। তাতে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগ ২ হাজার ২৫০ টাকা, ব্যবসা শিক্ষা এবং মানবিক ২ হাজার ১৫০ টাকা প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের দিতে হবে। ফি জমাদানের শেষ তারিখ ১১ নভেম্বর। আদেশক্রমে প্রধান শিক্ষক মো.ফজলুল করিব।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এই বিদ্যালয়ের ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। কোন ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে টিফিন চলাকালীন সময় বাধ্যতামূলক তাদের নিজস্ব ‘ক্যান্টিন’ থেকে খাবার সংগ্রহ করতে হবে। বাসাবাড়ির খাবার এবং বাহিরের খাওয়া নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। আরো জানা যায়, প্রতিবছরের মত এ বছরও তারা সরকারের নিয়ম মানছে। আবার  কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানছে না। তারা (বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ) ফেল করা শিক্ষার্থী ভর্তি করালে এতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

অভিভাবক এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জানান, এই বছর আমাদের বিদ্যালয়ে অনেকেই দুই-তিন বিষয়ে ফেল করেছে। তাই আমাদের ফরম পূরণ করার কোন সুযোগ নেই। কিš‘ অনেকের ক্ষেত্রে যখন জানলাম তারা গোপনে ফরম পূরণ করছে তখন আমরাও সে সুযোগ নেওয়ার জন্য তৎপর হয়ে পড়ি। যেমন, আমাদের সহপাঠী নুরাইন আক্তার মানবিক বিভাগের ২০১৯ সালের পরীক্ষার্থী; সে এবার তিন বিষয়ে ফেল করেছে। তারপরও তাকে কমিটির লোকেরা গোপনে ফরম পূরণ করে দেন।

এ জন্য সুপারিশ করেছে ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য, মো. জামান মোল্লা। এ খবর আমরা জানতে পেরে ছুটে যাই বিদ্যালয়ে। কিন্তু যাওয়ার পর তারা (ম্যানেজিং কমিটি) আমাদের সরাসরি নাকচ করে দেয়। পড়ে আমরা কাউকে দেবেন কাউকে দেবেন না কেন তা জানতে চাইলে কমিটির অনেকেই এই বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ফজলুল করিব এর মুঠোফোনে (০২৭৬৯৬৮৪৪) বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এই বিষয়ে মুঠোফোনে নারায়ণগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার হোসনে আরা বেগম তিনি বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই সরকারের একই নিয়মে চলে। যারা সরকারের নিয়ম নীতি মানবে না তাদের বিষয়ে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।

তিনি আরো বলেন, আমাদের সহযোগী হিসেবে নিয়মিত দুদকের অভিযানে প্রতিরোধ করা হচ্ছে। হটলাইনে (১০৬ নম্বর) অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের একটি দল রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দুদক থেকে সতর্কও করে দেওয়া হয়। অনিয়ম প্রতিরোধে দুদকের হটলাইনে ফোন করে যে কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগ জানাতে পারবেন।

Bootstrap Image Preview