সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশি অভিবাসী পেশাজীবীদের সাথে জাতীয় উন্নয়নে বিনিয়োগ, জনসেবা ও বিশেষজ্ঞ সংযুক্তি নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রিয়াদের ম্যরিয়ট হোটেলে গত রবিবার (২১ অক্টোবর) রাতে স্থানীয় ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশার প্রবাসীগণ আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন অভিবাসী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আব্দুল মালেক।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন দূতাবাসের উপ-মিশন প্রধান ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ আলোচক হিসেবে প্রবাসীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অভিবাসীদের দাবির সাথে একমত পোষণ করে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আইনি জটিলতা মোকাবেলা করে অর্থের অভাবে প্রবাসীদের মরদেহ যথাসমযে পাঠানো সম্ভব হয় না। অথচ দেশে মৃতের শোকাহত পরিবার তার আপনজনকে শেষবারের মতো একবার দেখার প্রত্যাশায় দিনাতিপাত করেন।
তিনি আরও বলেন, মৃত প্রবাসীর পরিবারকে ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ তহবিল থেকে যে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে, তার পরিমাণ ১০ লাখ টাকায় উন্নিত করা দরকার। তিনি, প্রবাসীদের জন্য জীবন বীমা এবং পেনশনের ব্যবস্থা করার দাবি সমর্থন করে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার ড. আবুল হাসান প্রবাসী বাংলাদেশিদের অভিজ্ঞতা, মেধা, বিনিয়োগ ও জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে অবহিত করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো: নজিবুর রহমান ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে আলোচনায় যোগ দিয়ে কর্মশালার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সংযুক্ত থেকে প্রবাসীদের দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার আহবানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, ইউএনডিপি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মূখার্জী, এসডিএস এ্যফেয়ার্সের প্রধান কোর্ডিনেটর আবুল কালাম আজাদের ভিডিও বার্তা প্রদর্শন করা হয়।
আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে দ্রুত ধাবমান একটি দেশ। প্রায় আট শতাংশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা দেশের উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখছে। পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, প্রবাসীদের দেশের উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার জন্য সরকার বিনিয়োগ, জনসেবা ও বিশেষজ্ঞ সংযুক্তি নামে তিনটি ক্ষেত্র নির্ধারণ করেছে। অভিবাসী বাংলাদেশিগণ যেকোন ক্ষেত্রে নিজেকে যুক্ত করে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে সরকার সব ধরণের সহযোগিতা প্রদান করবে বলে তিনি জানান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ইআরডি এর ডেপুটি সেক্রেটারি ছালেহা বিনতে সিরাজ, ইউএনডিপি এর কেফরডিএম প্রজেক্ট ম্যানেজার মেরিনা শওকত আলী।
অভিবাসীদের পক্ষ থেকে কর্মশালায় বিভিন্ন প্রশ্ন করেন, ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন, মোহাম্মদ আলি নুর, এম আর মাহবুব, ডাক্তার মতিন, মমিন, ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান খান, শেখ শিপন, সালাহ উদ্দীন
উপস্থিত বাংলাদেশি অভিবাসীগণ ন্যাশনাল আইডি কার্ড প্রদান ও প্রবাসী কল্যাণ কার্ডের ফি কমানোর দাবি জানান। জামেলা ভোগান্তিমুক্ত বিনিয়োগ, হয়রানি বন্ধে ওয়ানষ্টপ সার্ভিস, সরকার পরিবর্তনে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান, বাড়ি নির্মাণ কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে হয়রানি বন্ধ, ব্যাংক থেকে ক্রয়কৃত বন্ডকে বিনিয়োগ হিসাবে গণ্যের দাবি করেন। এছাড়া প্রবাসীগণ জনসেবা মূলক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেন।