Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৪ বুধবার, এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১ | ঢাকা, ২৫ °সে

এক টাকার ৩০টি নোট নিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর যাত্রা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:২০ PM
আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:২০ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


‘গিটার বাজিয়ে আমার জীবনের প্রথম উপার্জন ৩০ টাকা। ৩০টি কড়কড়ে এক টাকার নোট।' এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলেন কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু।

আইয়ুব বাচ্চু জানান, মিউজিককে বরাবরই পেশা হিসেবে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। টানা ৩০ মিনিট গিটার বাজিয়ে ৩০ টাকা প্রথম আয়ের কথাও তাই কখনো ভুলতে পারেন না। বললেন ওটা ছিলো তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।

কিন্তু সেই রূপালি গিটার ফেলে আইয়ুব বাচ্চু যে একদিন চলে যাবেন, তা তিনি ভালো করেই জানতেন। তার প্রস্থানে যে অনেকের চোখে অশ্রু জমবে, সেটাও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তো অনেকই আগেই তিনি গেয়েছিলেন এই গান...

এই রূপালি গিটার ফেলে

একদিন চলে যাব দূরে, বহুদূরে

সেদিন অশ্রু তুমি রেখো

গোপন করে ...

গানে ও গিটারে অন্য হৃদপিণ্ডে কাঁপন তোলা নামগুলোর ভেতরে প্রথম সারিতেই যে নামটি থাকবে সেটি আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর গিটারের মোহ আর কণ্ঠের জাদু সবাইকে কাঁপায়, শরীরের লোম জেগে ওঠে, পুরো দেহে শিহরণ জাগায়। তিনি মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে লাখ লাখ দর্শক অজান্তেই দাঁড়িয়ে যায়। এরপর চলে আইযুব বাচ্চুর জাদু। সুরের জাদু। নতুন নতুন জাদু সৃষ্টির কারিগর তিনি। সেই সঙ্গীত জাদুতে বুঁদ হয়ে থাকা মানুষের অভাব নেই। আইয়ুব বাচ্চুর 'নেশায়' রাত-দিন কাটিয়ে দেওয়ার মানুষ জগতব্যাপী।

কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুর সেই রূপালি গিটারে আর নতুন সুরের সৃষ্টি হবে না। হয়তো অনেকেই আশ্চর্য হচ্ছেন। অনেকেই মানতে পারছেন না, নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছেন না-এমন খবর শুনে বা দেখে। কিন্তু এটাই সত্যি।

গত বুধবার রাতে নিজের গড়া 'এলআরবি' ব্যান্ড নিয়ে রংপুরে সংগীত পরিবেশন করেছেন আইয়ুব বাচ্চু। সেখানে থেকে আজ সকালে তারা ঢাকায় আসেন। ফেরার পর থেকেই আইয়ুব বাচ্চুর শরীর খারাপ লাগতে থাকে। সকাল ৮টার দিকে বাসায় তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন। সেখান থেকে দ্রুত তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তাররা। ’

এই গুণী শিল্পীর জন্ম ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের চট্টগ্রাম শহরের। শিল্পীর ডাক নাম ছিল রবিন। পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন আইয়ুব বাচ্চু। সঙ্গীত চর্চার জন্য খুব একটা অনুকূল পরিবেশ যে তিনি পেয়েছিলেন তা কিন্তু নয়। সেই ছোটবেলা থেকেই সংসারে থেকেও বোহেমিয়ান রবিন। বাউন্ডুলে স্বভাবের জন্য সংসারের কিছুই যেন স্পর্শ করতে পারছিল না তাকে।

১৯৭৫ সালে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণিতে ওঠেন আইয়ুব বাচ্চু। ফল ভালো করায় বাবা তাকে একটা কালো রঙের গিটার উপহার দেন। বাবার থেকে পাওয়া সেই অ্যাকুয়েস্টিক গিটারেই আইয়ুব বাচ্চুর আঙুলে প্রথম টুংটাং ছোঁয়া লাগে। এরপর তিনি বিশ্বের অন্যতম সেরা গিটারবাদক জিমি হ্যানড্রিকস, রিচি ব্রাকমোর, কার্লোস স্যানটানাসহ বাংদেশের পপশিল্পী আজম খানের গিটারবাদক নয়ন মুন্সীর গিটারে পারদর্শিতায় মুগ্ধ হন। সেই মুগ্ধতা থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, হয়ে উঠবেন তাদের মতো।

আইয়ুব বাচ্চু সেখান থেকেই প্রবেশ করেন জীবনের নতুন এক জগতে। সেই গিটারের জ্যোতি যে এতটা তীব্র হবে, তার কণ্ঠের ব্যাপ্তি যে এতটা দীর্ঘ হবে-ছোট্ট ছেলেটি হয়তো সেদিন জানত না। কিন্তু সেই আলোর তীব্রতা আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে খুব দ্রুতই। তার সুরে অনেকেই নিজেদের হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন কিছু দিনের মধ্যেই।

১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে তিনি সোলস ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ‘রক্তগোলাপ’ আইয়ুব বাচ্চুর প্রথম প্রকাশিত একক অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি তার জীবনে সফলতা বয়ে না আনলেও ১৯৮৮ সালে তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ময়না’ তার জীবনে সফলতার দ্বার উন্মোচন করে।

১৯৯১ সালে বাচ্চু এলআরবি ব্যান্ড গঠন করে। এই ব্যান্ড গঠনের পর প্রথম অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে। এটি বাংলাদেশের প্রথম দ্বৈত অ্যালবাম। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করে।

পরবর্তী সময়ে ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ ও ‘তবুও’ বের হয়। ১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অভিহিত করা হয় এটিকে। একই বছর তার চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ‘ঘুমন্ত শহরে’ প্রকাশিত হয়।

‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ তার বাংলা ছবির অন্যতম একটি জনপ্রিয় গান। এটি তার গাওয়া প্রথম চলচ্চিত্রের গান। ২০০৯ সালে তার একক অ্যালবাম বলিনি কখনও প্রকাশিত। ২০১১ সালে এলআরবি ব্যান্ড থেকে বের করেন ব্যান্ড অ্যালবাম যুদ্ধ।

ছয় বছর পর ২০১৫ সালে তার পরবর্তী একক অ্যালবাম জীবনের গল্প বাজারে আসে। গিটারে তিনি সারা ভারতীয় উপমহাদেশে বিখ্যাত। জিমি হেন্ড্রিক্স ও জো স্যাট্রিয়ানীর বাজনায় তিনি দারুণভাবে অনুপ্রাণিত। ঢাকার মগবাজারে ‘এবি কিচেন’ নামে তার নিজস্ব একটি মিউজিক স্টুডিও রয়েছে।

Bootstrap Image Preview