বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকলেও গত ৪ দিন ধরে ভারতীয় গরু আবারও বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। সিন্ডিকেটের সমঝোতার ভিত্তিতে প্রতি রাতে প্রায় শত শত ভারতীয় গরু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ট্রাকের পরিবর্তে এখন গরুর পা বেঁধে হাইস মাইক্রোবাসের ভিতরে ঢুকে গরুগুলো লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা সীমান্ত করিডোর দিয়ে পার হচ্ছে।
এ সিন্ডিকেটের আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে বেশ কিছু দিন ভারতীয় গরুর প্রবেশ বন্ধ ছিলো। গত বুধবার রাতে সিন্ডিকেটের সমঝোতা হওয়ায় আবারও ভারতীয় গরু আসতে শুরু করায় বাংলাদেশের হাট গুলোতে গরুর দাম কমতে শুরু করেছে। দেশীয় খামার গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গরু মজুত থাকলেও ভারতীয় গরুর কারণে ভালো দাম না থাকায় তা বিক্রি করতে পারছে না খামারীরা।
স্থানীয় খামারীদের অভিযোগ, রাতের আঁধারে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ভারতীয় গরু প্রবেশের ফলে তারা নিজের পালিত গরু বিক্রি করতে পারছে না। এ ছাড়া ভারতীয় গরু প্রবেশের কারণে লোকসানের মুখে পড়েছে দেশীয় গরু খামার মালিকরা। এতে তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা ছিটমহল দিয়ে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশের গরু ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমঝোতায় দীর্ঘদিন ধরে গরুর ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে। চোরাই ভাবে আসা গরু গুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করে ৫ শত টাকা মূল্যে নিলামের কাগজ সংগ্রহ করে বৈধতা পায়, যাকে গরু করিডোর বলে। কিন্ত বর্তমানে করিডোর বন্ধ থাকায় ভারতীয় গরু ব্যবসাকে নিয়ে গড়ে উঠে একটি বিশাল সিন্ডিকেট।
এ দিকে এক জোড়া ভারতীয় গরু বাংলাদেশের হাটে বিক্রি করে সন্ধ্যায় গরু ব্যবসায়ীদের ওই সিন্ডিকেটকে দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা। প্রতিদিন ওই সিন্ডিকেটের আয় লক্ষ লক্ষ টাকা। ওই টাকার ভাগ রাতেই লাইনম্যান রিমন মইনুলের মাধ্যমে চলে যায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিজিবি-পুলিশসহ প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার কাছে। এ ভাগ নিয়ে বেশ কিছু দিন আগে বর্তমান দহগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন ও প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সমর্থকদের মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে ভারতীয় গরুর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। পরে এ দ্বন্দ্ব নিরসনে ওই সিন্ডিকেটের সমঝোতা বৈঠক বসে। ওই বৈঠকে সমঝোতা আসলে গত ৪ দিন ধরে আবারও ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন গরু ব্যবসায়ীদের ওই সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ‘বর্তমানে ভারতীয় গরু আসছে না। গরু ব্যবসা নিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সাথে আমার দ্বন্দ্বের যে খবর ছড়ানো হচ্ছে তা সঠিক নয়।’
পাটগ্রাম উপজেলার পানবাড়ী বিজিবি ক্যাম্পের ইনচার্জ সুবেদার সোহেল হোসেন জানান, ‘করিডোর বন্ধ থাকায় দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে এখন ভারতীয় গরু আসছে না। বিএসএফ ও বিজিবি’র চোখ ফাঁকি দিয়ে গরু পারাপারের কোনো সুযোগ নেই।’
পাটগ্রাম থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান, ‘দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে আপাতত ভারতীয় গরু আসছে না। কেউ যদি ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ নষ্ট করতে চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’