সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খবরে বিশ্বাস করেন না বাংলাদেশের ৬৬ শতাংশ মানুষ । আর মোটেও বিশ্বাস না করার হার ৫৩ শতাংশ। বিশ্বাস না করার হার ১৩ শতাংশ। বাকি ৩৪ শতাংশের ২৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন। ৮ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা এ বিষয়ে জানেন না।
এক সমীক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে ১৮টি দেশের ১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মানুষের ওপর ‘আফটার অ্যাকসেস: আইসিটি অ্যাকসেস অ্যান্ড ইউজ ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য গ্লোবাল সাউথ’ শীর্ষক এই সমীক্ষা করেছে লার্ন এশিয়া, রিসার্চ আইসিটি আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার সংস্থা ডিআইআরএসআই।
গতকাল মঙ্গলবার লার্ন এশিয়ার পক্ষ থেকে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সমীক্ষাটির ফলাফল তুলে ধরা হয়।
এতে বাংলাদেশের ৪০টি জেলার ২ হাজার পরিবার ও ব্যক্তির ওপর জরিপ করা হয়। তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে। লার্ন এশিয়া বলছে, গবেষণা পদ্ধতিটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
বাংলাদেশে সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৮ শতাংশ পুরুষ বলেছেন, তাঁরা ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করেন। অন্যদিকে নারীদের মধ্যে এ হার ৬ শতাংশ। সমীক্ষায় দেখা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪৯, ভারতে ৫৮, নাইজেরিয়ায় ৬১, পাকিস্তানে ২৯, ঘানায় ৪৪, কম্বোডিয়ায় ৪০, কেনিয়ায় ৫৬, তানজানিয়ায় ৫০, নেপালে ২৮ ও মোজাম্বিকে ৪৯ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খবর বিশ্বাস করেন না।
লার্ন এশিয়ার প্রধান নির্বাহী হিলানি গালপায়া এসব তথ্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খবর বিশ্বাস না করার হার অনেক উঁচু। এ কারণে তাঁরা এসব খবর শেয়ার করেন না।
সমীক্ষা অনুযায়ী, ব্যবহারকারীদের ৫৮ শতাংশ সামাজিক মাধ্যমের বার্তা ও আধেয় (কনটেন্ট) শেয়ার করেন না। ৩২ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা শেয়ার করার আগে তা সঠিক কি না তা যাচাই করেন। ৬ শতাংশ বিশ্বস্ত উৎস বা বন্ধুর কাছ থেকে পেলে আধেয় বা বার্তা শেয়ার করেন। মাত্র ৫ শতাংশ কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই তা শেয়ার করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে খবর ছড়ায়, তার প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নেই।
এ কারণে হয়তো ব্যবহারকারীরা বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেন, সম্প্রতি নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ব্যাপক গুজব ছড়িয়েছিল। তখন অনেকে ধারণা করেছিলেন, মূলধারার গণমাধ্যম হয়তো সঠিক সংবাদ প্রচার করছে না। কিন্তু পরে দেখা গেল, মূলধারার মাধ্যমই সঠিক খবর দিয়েছে। বরং সামাজিক মাধ্যম উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুজব ছড়িয়েছে।
গোলাম রহমান আরও বলেন, এসবের ভিত্তিতে বলা যায় মানুষ হয়তো চিরস্থায়ীভাবে গুজবকে বিশ্বাস করে না। কিন্তু জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেসকো চলতি বছর ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেন্ডস অন ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন অ্যান্ড মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে বলা হয়েছে ভুয়া সংবাদ বা ফেইক নিউজের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ফেইক নিউজ দ্রুত ছড়ায়। তাই দেশের মানুষের মনোভাব জানার জন্য আরও বড় গবেষণা হওয়া দরকার।
সমীক্ষায় কত শতাংশ মানুষ অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছেন, তা–ও উঠে এসেছে। বাংলাদেশের ১২ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা হয়রানির মুখে পড়েছেন। ভারতে তা ১৯, পাকিস্তানে ১২, কম্বোডিয়ায় ২৬ ও নেপালে ৪ শতাংশ। বাংলাদেশের গ্রামের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা হয়রানির কথা বেশি উল্লেখ করেছেন। নারীদের চেয়ে পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার বেশি বলে সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়।
অনুষ্ঠানে লার্ন এশিয়ার জ্যেষ্ঠ গবেষক আবু সাঈদ খান, বিটিআরসির বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মহাপরিচালক (প্রকৌশল ও অপারেশনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ফোলি, রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।