Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ শুক্রবার, মার্চ ২০২৪ | ১৫ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

যৌতুক নিয়ে মিথ্যা মামলা করলে ৫ বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

‘যৌতুক নিরোধ বিল-২০১৮’ এর কণ্ঠভোটে পাস

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:০২ PM
আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৫:০৮ PM

bdmorning Image Preview


মৌলভীবাজারের জুড়ীতে তালাক প্রদান করায় এক মহিলা প্রতিশোধ নিতে স্বামীসহ ৩ ব্যক্তিকে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। 

রংপুরের চিত্রায় কাবিনের টাকা আদায় করার উদ্দেশ্যে স্বামী ও দেবরের নামে মিথ্যে মামলা করা হয়। এতে দেবরের স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশ যাওয়ার কথা থাকলেও পুলিশি ঝামেলায় সেটা আর হয়ে উঠেনি। 

নরসিংদীর বেলাবো থানায় পারিবারিক ছোট্ট ঝামেলাকে কেন্দ্র করে শ্বশুর-শ্বাশুরিকে অপদস্ত করার উদ্দেশ্যে মনোহরদি থানায় মিথ্যে মামলা করা হয়। 

এরকম মিথ্যে মামলার মাধ্যমে অপদস্ত করার অভিযোগ আমরা প্রায় প্রায়ই দেখতে পাই। বিষয়টি নিয়ে গুরত্ব দেখিয়ে নুতনভাবে ‘যৌতুক নিরোধ বিল-২০১৮’ এর পাস হলো। 

যৌতুক গ্রহণ কিংবা যৌতুক নিয়ে মিথ্যা মামলা করলে ৫ বছরের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। এছাড়া যৌতুক প্রদান, গ্রহণ, সহায়তা বা চুক্তি করলেও একই সাজা হবে। এমন বিধান রেখে  জাতীয় সংসদে একটি বিল পাস হয়েছে।

গতকাল রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি ‘যৌতুক নিরোধ বিল-২০১৮’ নামের বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে বিলটির ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

২৫ জুন বিলটি উত্থাপনের পর তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছিল।

সংসদে পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে-

বিয়ের ক্ষেত্রে যদি কোনো এক পক্ষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্য পক্ষের কাছে যৌতুক দাবি করে, তবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর, কিন্তু সর্বনিম্ন এক বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকার জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

কাউকে ক্ষতি করার জন্য যৌতুকের মামলা বা অভিযোগ করলে ৫ বছরের জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

বিলে আরও বলা হয়েছে, এ আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য ও জামিন অযোগ্য হবে। তবে এ সংক্রান্ত মামলা আপসযোগ্য হবে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যৌতুক ভয়ানক এক সমস্যা।

বিলের কারণ ও উদ্দেশ্য সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যৌতুক প্রথা এক ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। এ কারণে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পরিকল্পনা প্রণয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এই যৌতুক প্রথা অবসানের লক্ষ্যে ১৯৮০ সালের অধ্যাদেশ-এর আলোকে নতুন আইন প্রণয়নে বিলটি আনা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রণীত বিল প্রণীত হয়েছে। অপরাধ বিচার আপীল ও তদন্তে কোড অব সিভিল প্রসিডিউর ১৮৯৮-এর বিধানাবলি প্রযোজ্য হবে।

বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, 'আইনের ফোকরটায় হলো মূল সমস্যা। নতুন আইনে সে বিষয়টি যেনো সঠিক নির্দেশনা থাকে সেটার প্রতি গুরুত্ব দেয়াটা খুবই জরুরি। সমাজের যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেটাকে সবার আগে নির্মুল করতে হবে।' 

উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালের এ সংক্রান্ত আইন বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়নে বিলটি তোলা হয়। ১৯৮০ সালের ওই আইন ১৯৮২, ১৯৮৪ ও ১৯৮৬ সালে অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংশোধন করা হয়। আগের আইনে যৌতুক নিয়ে মিথ্যা মামলার জন্য কোনো দণ্ডের বিধান ছিলো না। সংসদে পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, কাউকে ক্ষতি করার জন্য যৌতুকের মামলা বা অভিযোগ করলে ৫ বছরের জেল অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

Bootstrap Image Preview