এশিয়া কাপে এবার ছয়টি দেশ নিচ্ছে। এগুলি হল ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও হংকং। এরমধ্যে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান-এর মতো টেস্ট খেলিয়ে দেশগুলি সরাসরি এন্ট্রি পেয়েছে। একটি স্থানের জন্য যোগ্যতা অর্জনের লড়াইয়ে নামতে হয়েছিল হংকং, নেপাল, ওমান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইউএই-কে। হংকং এই যোগ্যতা অর্জনে ধাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এশিয়া কাপের মূল পর্বে ষষ্ঠ দল হিসাবে খেলার সুযোগ পেয়েছে।
২ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইংল্যান্ড ক্রিকেট সিরিজ খেলার পর স্বভাবতই ক্লান্ত ভারতীয় দল। তাই অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। এশিয়া কাপে যার জন্য তিনি খেলছেন না। বিরাটের জায়গায় ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেবেন রোহিত শর্মা। এশিয়া কাপ ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বেশকিছু চমকদার গল্প। তারই কিছু ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এখানে হাজির করা হল।
১। প্রথম এশিয়া কাপ ১৯৮৪ সালে। আয়োজক দেশ ছিল সৌদি আরব। প্রথমবার তিনটি দেশ অংশ নিয়েছিল। ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ছাড়া সে সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সরকারিভাবে সেভাবে এশিয়ার কোনও প্রতিনিধিত্ব ছিল না। রাউন্ড রবিন টুর্নামেন্ট-এর ফরম্যাটে সেবার খেলা হয়েছিল। মানে তিনটি দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক ম্যাচ খেলবে। যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ম্যাচ জিতেছিল তাকেই জয়ী বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রথমবার এশিয়াকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। তৎকালীন ভারত অধিনায়ক সুনীল গাওস্কর এশিয়াকাপ-এর ট্রফি গ্রহণ করেছিলেন।
২। ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় এশিয়া কাপ ক্রিকেটে ভারত অংশ নেয়নি। কারণ শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সম্পর্কের অবনতি। ভারতের জায়গায় বাংলাদেশকে নেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শ্রীলঙ্কা।
৩। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশে বসে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের আসর। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটা ছিল মাইলস্টোন। কারণ এর আগে কোনওদিনই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক কোনও ক্রিকেট প্রতিোগিতার আয়োজন করেনি। ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়।
৪। ১৯৯০ সালে ভারতে এশিয়া কাপের আসর বসলেও পাকিস্তান তাতে অংশ নেয়নি। দু'দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনতিতে পাকিস্তান সেবার এশিয়া কাপ খেলেনি। ভারত ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ট্রফি ধরে রাখে।
৫। ১৯৯৩ সালের ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের এতটাই অবনতি হয় যে এশিয়া ক্রিকেট কাউন্সিল আগে থেকে প্রতিযোগিতা বাতিল বলে ঘোষণা করে।
৬। ১৯৯৫ সালে ফের এশিয়া কাপের আয়োজন করা হয়। শারজার বসে প্রতিযোগিতার আসর। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও ভারত রাউন্ট রবিন লিগে সমান পয়েন্ট পায়। কিন্তু রান-রেটের ভিত্তিতে শ্রীলঙ্কা ও ভারত ফাইনালে ওঠে। শেষমেশ শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়।
৭। ১৯৯৭ সালে শ্রীলঙ্কা নিজেদের দেশে ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়।
৮। এশিয়া কাপ ক্রিকেটে এক ম্যাচে ভারতের পক্ষে প্রথম ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব আর্শাদ আয়ুবের। ১৯৯৮ সালে ঢাকায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাতে ২১ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। এই ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ও পেয়েছিল ভারত। এমনকী আর্শাদ আয়ুবের ৫ উইকেট নেওয়াটা এশিয়া কাপের ইতিহাসেও প্রথম নজির ছিল।
৯। ২০০০ সালে এশিয়া কাপের আসর বসে বাংলাদেশে। এই প্রথম ভারত ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়। ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন হয়।
১০। ২০০৪ সালে এশিয়া কাপের ফরম্যাটে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। হংকং ও ইউএই-কে এই প্রতিযোগিতায় সামিল করা হয়। এর ফলে প্রতিযোগিতাকে গ্রুপ স্টেজ, সুপার ফোরস এবং ফাইনাল- এই তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা।
১১। ২০০৮ সালে পাকিস্তানে বসে এশিয়া কাপের আসর। ভারত এবার ফাইনালে ওঠে। প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। অজন্তা মেন্ডিস ১৩ রানে ৬ উইকেট নেন। চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা।
১২। ২০১০ সালে চার দেশকে নিয়ে এশিয়া কাপের আসর বসেছিল। ভারত ছাড়াও ছিল পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। ১৫ বছর পর ফের এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তকমা পায় ভারত।
১৩। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে এশিয়া কাপের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত যে বোলারের স্ট্রাইক রেট এক নম্বরে রয়েছে তাঁর নাম বীরেন্দ্র সেহওয়াগ। ২০১০ সালে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে ২.৫ ওভারে ৬ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
১৪। ২০১২ সালে এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার তারা এশিয়া কাপ ঘরে তুলেছিল। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে বাংলাদেশকে মাত্র ২ রানে হারায় তারা।
১৫। একদিনের ম্যাচে এখন পর্যন্ত বিরাট কোহলি-র সর্বোচ্চ স্কোর ১৮৩ রান। সেটা তিনি করেছিলেন ২০১২ সালের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান ৩৩০ রানের টার্গেট রাখে। ভারত ৩৩০ রান তুলে ম্য়াচ জিতে নেয়। এশিয়া কাপের ইতিহাসে এটা এখন পর্যন্ত একচা দলের করা সর্বোচ্চ রান।
১৬। ২০১৪ সালে ঢাকায় এশিয়া কাপের আসর বসে। প্রথমবার এই প্রতিযোগিতায় খেলার যোগ্যতা পায় আফগানিস্তান। ফাইনালে শ্রীলঙ্কা পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়।
১৭। ২০১৫ সালে আইসিসি এশিয়া ক্রিকেট কাউন্সিল-এ কিছু রদবদল করে। এশিয়া কাপ আয়োজন নিয়ে আইসিসি জানিয়ে দেয় এখন থেকে এই প্রতিোগিতা ওয়ান ডে এবং টি-২০ ফর্ম্যাটে হবে।
১৮। ২০১৬ সালে এশিয়া কাপ প্রথমবার টি-২০ ফর্ম্যাটে খেলা হয়। এই ফর্ম্যাটে ফাইনালে ভারত বাংলাদেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। ১৯। এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩০টি উইকেট নিয়েছেন মুথাইয়া মুরলিধরণ।
২০। এশিয়া কাপে সবচেয়ে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। তারা ৬ বার এই প্রতিযোগিতা জিতেছে। শ্রীলঙ্কা ৫ বার এব পাকিস্তান দু'বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
২১। এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপে সেরা অ্যাভারেজ এম এস ধোনির। এই প্রতিযোগিতায় তাঁর ব্যাটিং গড় ৯৫.১৬।
২২। এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট হননি। কিন্তু এশিয়া কাপের টি-২০ ফর্ম্যাটে এই রেকর্ড ভারতের ভেঙে গিয়েছে। এখন পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ড শ্রীলঙ্কার, তাদের শূন্য রানে আউট হওয়ার সংখ্যা ১৭, এর পিছনেই ১১টি শূন্য রানে আউট হওয়ার রেকর্ড নিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৯।