Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৮ বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০২৪ | ১৪ চৈত্র ১৪৩০ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাউফলে গণসংযোগে ব্যস্ত আ.লীগ, মাঠে নেই বিএনপি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:২০ PM
আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:২০ PM

bdmorning Image Preview


জাহিদ রিপন, পটুয়াখালী প্রতিনিধিঃ

আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালী-২ সংসদীয় অসন বাউফল। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সরকারদলীয় চীফ হুইপ আসম ফিরোজ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের সম্ভব্য প্রার্থী হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে আরও মাঠে রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামছুল হক রেজা, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ও আরটিভির পরিচালক এসএম ফিরোজ আলম, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাউফল পৌরসভার মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জোবায়দুল হক রাসেল।

এদিকে বিএনপি-জামায়াত জোট আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে এখনো রয়েছে দোটানায়। সাম্প্রতিক সময় তাদের কাউকেই মাঠে দেখা যাচ্ছে না।

১৯৭০ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত এ আসনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ খন্দকার সংসদ সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর ১৯৭৯ সাল থেকে আসম ফিরোজ একক নেতৃত্বে বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগ পরিচালনা করে আসছেন। রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার কারণে উপজেলা আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যায়ে খুব শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

এ উপজেলার প্রতি ওয়ার্ডে রয়েছে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর শক্তিশালী কমিটি। এসব কমিটির সদস্য প্রায় ৩৫ হাজার। ২০০৯ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তাকে হুইপ ও বর্তমান সংসদে তাকে চীফ হুইপ পদে দায়িত্ব প্রদান করেন।

দীর্ঘ সময় বাউফলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে আসম ফিরোজ কিছু কিছু নেতাকর্মীর বিরাগভাজন হন। ২০১২ সালের ২২ মে অনুষ্ঠিত বাউফল পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন দেওয়া নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগে কোন্দল সৃষ্টি হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল হক জুয়েল মেয়র নির্বাচিত হন। এরপরই মেয়র জুয়েল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চীফ হুইপ আসম ফিরোজের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। তখন থেকেই ফিরোজ বিরোধী একটি গ্রুপ মেয়র জুয়েলের অধীনে চলে যায়। তবে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামছুল হক রেজা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কোন্দলে জড়াননি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো কোন্দল নেই বলে দাবি নেতা-কর্মীদের। উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন সভা-সমাবেশ ও মতবিনিময় করছেন সকল সম্ভাব্য প্রার্থীরা। অনেকের দাবি- দলের মধ্যে বিকল্প শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় ছয়বারের পর এখন লাকি সেভেনের হাতছানি অপেক্ষা করছে আসম ফিরোজের জন্য।

এদিকে ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপির শহিদুল আলম তালুকদার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে তাকে বাদ দিয়ে জাতীয় পার্টি থেকে যোগদানকারী শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার ফারুক আহমেদ তালুকদারকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। ফারুক তালুকদারকে দলীয় দায়িত্ব প্রদান করার পর গৃহপালিত বিরোধী দলে পরিণত হয় বাউফল উপজেলা বিএনপি।

অন্যদিকে জেল, মামলা হজম করে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন শহিদুল আলম তালুকদার। তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আগামী নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করতে পারবেন বলে মনে করেন বিএনপির তৃণমূল ভোটাররা। সারা বছর ঢাকায় অবস্থানকারী ফারুক আহমেদ তালুকদার মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগ খুব সহজেই জয় পাবে বলেও দাবি তাদের।

এ আসনে বিএনপি থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনীর হোসেন, শহীদ জিয়া গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনিসুর রহমান ও জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ড. মু: শফিকুল ইসলাম মাসুদ।

সবকিছু মিলিয়ে উপজেলা বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে এমন মন্তব্য করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, বর্তমানে নেতৃত্ব সংকটের কারণে উপজেলা বিএনপি মাঝিবিহীণ তরীতে পরিণত হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা কিভাবে মোকাবেলা করবেন।

এ ছাড়া এ আসনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ), ইসলামী আন্দলন (চরমোনাই) থেকেও প্রার্থী দেয়া হবে বলে জানা গেছে। কিন্তু কারা প্রার্থী হবেন তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে জামায়াত নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। উপজেলায় ১০৮টি ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তিনি কমিটি গঠন করেছেন। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য ৩০ সদস্যের একটি কমিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছে।

এ ছাড়া জামায়াতের ১৩৮টি গ্রাম কমিটি এবং ইসলামী ছাত্র শিবির নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন করেছে। বাউফল উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, উপজেলা বিএনপির একাংশে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাই, আমরা আশাবাদী যে, আমাদের প্রার্থী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদকে মনোনয়ন দেবে জোট। যদি আমরা জোট থেকে মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদের আসন্ন নির্বাচনকে স্বাধীনভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ক্ষমতা আছে। বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে জোট থেকে জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদকে মনোনীত করা হবে বলে আমরা আশা করি।

বাউফল উপজেলা নির্বাচন অফিসার সেলিম রেজা জানান, পটুয়াখালী-২ আসন বাউফল মোট ২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৭ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৭ জন ও নারী ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৬০ জন।

Bootstrap Image Preview